বসিরহাট, 5 জুন: প্রত্যাশা ছিল সন্দেশখালি খালি হাতে ফেরাবে না । কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হল না বিজেপির । ভোটবাক্সে কোনও প্রভাবই ফেলল না সন্দেশখালি ইস্যু । বসিরহাটে যথারীতি বইল সবুজ-ঝড় । বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে 3 লক্ষ 33 হাজার 547 ভোটে হারিয়ে বসিরহাট লোকসভা দখল করলেন তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম ৷ উত্তর 24 পরগনার দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দারা বুঝিয়ে দিলেন, মোদি নন, দিদিই তাদের ভরসাস্থল ৷
2024 সালের লোকসভা ভোটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বসিরহাট লোকসভার দ্বীপ অঞ্চল সন্দেশখালি । এই এলাকার একটা বড় অংশের মানুষের পেশা কৃষি । বিঘার পর বিঘা জমি, ভেড়ি রয়েছে অনেকের । কেউ আবার অন্যের জমিতে চাষ করেন । চলতি বছরে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার বাড়িতে ইডি অভিযান ও পরবর্তীতে জনরোষ, শিরোনামে এনে দিয়েছিল সন্দেশখালিকে । একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলা হয়েছিল এলাকার তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে । গ্রামবাসীর জমি, ভেড়ি দখল থেকে শুরু করে রাতের অন্ধকারে মহিলাদের তুলে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছিল । তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল দেশজুড়ে ৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই বিষয়ে বেশি শব্দ খরচ করেননি । তবে ভোটের দিন এগনোর সঙ্গে দেখা গেল, বাংলা দখলে বিজেপির মোক্ষম অস্ত্র এই সন্দেশখালি । বিজেপির প্রচারে বারবার উঠে আসে এই প্রসঙ্গ। মূলত, এই লোকসভা আসনকে কেন্দ্র করেই কুশাসনের অভিযোগে তৃণমূলকে ধরাশায়ী করার পরিকল্পনা নিয়েছিল গেরুয়া শিবির । বসিরহাট আসনটি নিশ্চিত করতে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রতিবাদী মুখ রেখা পাত্রকে ।
ভূমিকন্যাকে অবলম্বন করেই ভোটের অঙ্ক কষতে চেয়েছিল পদ্মশিবির । বসিরহাট আসনটি নিশ্চিত করতে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রতিবাদী মুখ রেখা পাত্রকে । অনেকেই তখন বলেছিলেন, প্রার্থী নির্বাচনই ছিল মোদির মাস্টারস্ট্রোক । বাস্তবে অবশ্য তা ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে । বসিরহাট লোকসভার বাকি 6 টি বিধানসভা তো বটেই, এমনকি সন্দেশখালিতেও তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের ভোটের ব্যবধান বেড়েছে অনেকটাই ।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে নুসরত জাহানের জয়ের মার্জিন ছিল 3 লক্ষ 50 হাজার 369 । কমিশন সূত্রে খবর, বসিরহাট কেন্দ্রে 20 রাউন্ড গণনা শেষে তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের ভোটের ব্যবধান দাঁড়ায় 3 লক্ষ 35 হাজার 749টিতে । গণনা শেষে দেখা যায় 3 লক্ষ 33 হাজার 547 ভোটের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেন হাজি নুরুল ৷
এদিকে, দলীয় প্রার্থীর জয়ের পরই উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা । জয়ী প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামকে মালা পড়িয়ে অভিবাদন জানান তাঁরা । এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হাজি নুরুল বলেন, "এই জয় বসিরহাট মানুষের জয় । এত মানুষ আমাকে সমর্থন করেছে এরজন্য আমি কৃতজ্ঞ । সন্দেশখালি নিয়ে যে ভাঁওতা ছিল, তা মানুষ এই রায়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন ।মমতা বন্দোপাধ্যায় কথা দিয়েছেন সন্দেশখালি যাবেন । আমিও যাব সন্দেশখালির মানুষকে অভিনন্দন জানাতে ।"