বারাসত, 23 এপ্রিল: মুখ্যমন্ত্রী অশিক্ষিত, নির্লজ্জ ! দু-অক্ষরের পড়াশোনা করা মহিলা । এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের বিরোধিতা করায় মুখ্যমন্ত্রীকে এই ভাষাতেই বেনজির আক্রমণ করলেন বিজেপি প্রার্থী তথা বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদার ।
মঙ্গলবার ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে বারাসতের পদ্ম প্রার্থী বলেন, "নির্লজ্জ মুখ্যমন্ত্রীর উচিত বিচারব্যবস্থার দিকে আঙুল না তুলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ! তবে সে সব না করে তিনি বিচারব্যবস্থাকে আক্রমণ করছেন । আমি মনে করি, অবিলম্বে এ রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে মুখ্যমন্ত্রী-সহ গোটা মন্ত্রিসভাকে জেলখানায় পুড়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন সিবিআইয়ের । তাহলেই দুর্নীতির সব তথ্য সামনে চলে আসবে ।" হাইকোর্টের রায়ের পর মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে তাঁর চেয়ারে বসে আছেন, তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার ।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এক কলমের খোঁচায় সোমবার চাকরি খুইয়েছেন 2016 সালের প্যানেলে থাকা এসএসসির প্রায় 26 জন হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী । সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ঘুরপথে টাকার বিনিময়ে এঁদের অধিকাংশই চাকরি পেয়েছিলেন বলে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে । সেই কারণে এসএসসির চারটি বিভাগে নিয়োগের গোটা প্যানেলই হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছে । সেই সঙ্গে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া সমস্ত শিক্ষককে বেতনের টাকা সুদ-সহ চার সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভশন বেঞ্চ । এ নিয়ে সোমবারই নির্বাচনী সভা থেকে বিচারব্যবস্থাকে আক্রমণ করে এই রায়কে 'বেআইনি' বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তারই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীকে 'নির্লজ্জ' এবং 'অশিক্ষিত' বলে তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বারাসতের বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার ।
এই বিষয়ে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "বিচারব্যবস্থাকে নিশানা করে আসলে মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি আদালতেরও উপরে ! চোরের মায়ের বড় গলা ! অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা দরকার । সারা বছর চুরি করেছো ! কাটমানি খেয়েছো । চাকরি বিক্রি করেছো । আর বিচারব্যবস্থা যখন সঠিক কথা বলছে, তখন বিচারব্যবস্থা খারাপ ! তদন্তেই তো উঠে এসেছে এই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কারচুপি হয়েছে । সাদা খাতা জমা দেওয়া হয়েছে । ওএমআর শিট বিকৃত করে কীভাবে নম্বর বাড়ানো হয়েছে ! তাই, এই নিয়োগ বাতিল করেছে হাইকোর্ট । এটা নিয়ে তিনি আবার সুপ্রিম কোর্টে যাবেন । বিচারব্যবস্থা ভালো নয় ! কত কিছু বলছেন । তিনি কী ভগবান হয়ে গিয়েছেন ! এই রাজ্যটাকে সর্বনাশ করেছেন ৷ বাকি যেটুকু আছে সেটুকুও সর্বনাশ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন ।"
এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলেন, "বিচারব্যবস্থার উপরে তিনি নিজেকে মনে করে থাকলে ভুল করবেন ! এর আগে, অনেক মুখ্যমন্ত্রী জেলে গিয়েছেন । তাঁরও সময় হয়ে এসেছে জেলে যাওয়ার । তিনি বিভিন্ন পাপে জর্জরিত । সেই পাপের ফল তাঁকে পেতে হবে আগামী দিনে ।"
এ দিকে, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে হাইকোর্টের সমালোচনা প্রসঙ্গে বারাসতের বিজেপি প্রার্থী বলেন,"তৃণমূলে তো সবাই চোর ! প্রথমে ওদের মধ্যে 'কোটা' ভাগ হয়েছে । পরে কিছু ছোট, মেজো চোর বাকি ছিল । সেগুলোকে দেওয়ার জন্য কোটা বাড়িয়েছে। এটা তো স্বাভাবিক । সেটা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত । বাকিগুলোকেও জেলে পোড়া উচিত ।"
আরও পড়ুন: