ETV Bharat / state

সম্পত্তির লোভেই খুন ! মধ্যমগ্রামের ঘটনার পুনর্নিমাণ পুলিশের - BODY IN TROLLEY BAG AT KOLKATA

কীভাবে খুন করা হয়েছিল সুমিতা ঘোষকে ? উত্তর খুঁজতে ধৃতদের মধ‍্যমগ্রামের ভাড়া বাড়িতে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল পুলিশ । রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে ।

BODY IN TROLLEY BAG AT KOLKATA
মধ্যমগ্রামে ধৃতকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার পুনর্নিমাণ পুলিশের (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 26, 2025, 7:34 AM IST

মধ‍্যমগ্রাম, 26 ফেব্রুয়ারি: কুমারটুলিতে ট্রলি ব্যাগে দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ৷ কীভাবে খুন করা হয়েছিল সুমিতা ঘোষকে ? সেই উত্তর খুঁজতে মঙ্গলবার রাতে কড়া নিরাপত্তায় অন‍্যতম অভিযুক্ত ফাল্গুনী ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে মধ‍্যমগ্রামের বীরেশ পল্লীর ভাড়া বাড়িতে পৌঁছয় কলকাতার উত্তর বন্দর থানার পুলিশ । সঙ্গে ছিল ফরেন্সিক দল ৷ ধৃতকে সঙ্গে নিয়ে 5 ঘণ্টা ধরে চলে ঘটনার পুনর্নির্মাণ ৷

পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুনে ব্যবহৃত ইটের টুকরো ও রক্তের নমুনা ৷ পুনর্নির্মাণের সময় ফাল্গুনীর সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পারেন খুনে ব‍্যবহৃত বঁটিটি কোথায় ফেলা হয়েছে । বুধবার বঁটির খোঁজে তল্লাশি করা হবে বলে জানা গিয়েছে ৷ তদন্তের স্বার্থে এই নিয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ পুলিশের পদস্থ কর্তারা ।

ঘটনার টের পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা (ইটিভি ভারত)

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার বলেন, "মৃতা সুস্মিতা ঘোষের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আমাদের হাতে এসেছে ৷ দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল ৷ দেহটি খণ্ডিত অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ রাখার ফলে পচন ধরে যায় ৷" কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সম্পত্তির লোভেই সুমিতা ঘোষকে খুন করে মা ও মেয়ে । প্রথমে মৃতা প্রৌঢ়ার মাথায় ইট দিয়ে একাধিকবার আঘাত করা হয় । মাথার খুলিতে রক্ত জমাট এবং হাড় ক্ষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে । এরপর মৃতার পা বঁটি দিয়ে কেটে বাড়ির পাশের জলাশয়ে ফেলে দেয় মা ও মেয়ে ৷

খুনে ব‍্যবহৃত সেই ধারালো অস্ত্রটি উদ্ধার হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ধৃত ফাল্গুনীর কাছ থেকে প্রথমেই ভাড়া বাড়ির চাবি নিয়ে তদন্তকারীরা প্রবেশ করেন ঘরের ভিতরে । তাঁদের সঙ্গে প্রবেশ করেন ফরেন্সিক দলের সদস্যরাও । সংগ্রহ করা হয় রক্তের নমুনা । এরপর খুনের জায়গাটি ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন তদন্তকারীরা।

BODY IN TROLLEY BAG AT KOLKATA
মধ্যমগ্রামের ভাড়া বাড়ি (নিজস্ব চিত্র)

এরপর ধৃত ফাল্গুনীকে বাইরে এনে খুনে ব‍্যবহৃত অস্ত্র কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানতে চান তদন্তকারীরা ৷ আকার ইঙ্গিতে তদন্তকারীদের বাড়ি লাগোয়া একটি ফাঁকা জমি দেখিয়ে দেয় ধৃত মহিলা । টর্চের আলো নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ওই ফাঁকা জমি থেকে উদ্ধার হয় রক্তমাখা ইটের টুকরো।

পুনর্নির্মাণের সময়ে আরও বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ । খুনের আগের দিন নীল রঙের ট্রলি ব‍্যাগটি বাজার থেকে কিনে এনেছিলেন আরতি ও তাঁর মেয়ে ফাল্গুনী । সেই ট্রলি ব‍্যাগ নিয়ে তাঁদের দু'জনকে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতেও দেখেছেন স্থানীয়দের অনেকে । তার পরের দিনই মেলে প্রৌঢ়া সুমিতা ঘোষের দেহাংশ ভরা নীল রঙের ট্রলি ব‍্যাগটি । অর্থাৎ, আগে থেকেই তৈরি ছিল খুনের 'চিত্রনাট্য'!

BODY IN TROLLEY BAG AT KOLKATA
ট্রলি ব্যাগ নিয়ে ধৃত মা ও মেয়ে (নিজস্ব চিত্র)

পুলিশ সূত্রে খবর, মধ্যমগ্রামের ভাড়া বাড়িতে গত 11 ফেব্রুয়ারি যান প্রৌঢ়া সুমিতা ঘোষ । তাঁর বাড়ি অসমের যোরহাটে । শ্বশুরবাড়ি বর্ধমানের নন্দঘাটে । দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না প্রৌঢ়ার । ফাল্গুনীও স্বামীর থেকে আলাদা থাকতেন ৷ অভিযোগ, ফাল্গুনীর উৎশৃঙ্খল আচরণ পছন্দ করতেন না স্বামী । সেই কারণে এই দূরত্ব । তাঁর বেপরোয়া জীবনযাত্রা এবং উৎশৃঙ্খল আচরণ নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ফাল্গুনীর ভাড়া বাড়ির প্রতিবেশীরাও ।

অবশ্য, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না-হওয়া সত্ত্বেও কেন ফাল্গুনীর মধ‍্যমগ্রামের ভাড়া বাড়িতে গিয়েছিলেন তাঁর পিসি শাশুড়ি সুমিতা ঘোষ ? সেই উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি ৷ তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, সুমিতা ঘোষের বেশ কিছু সম্পত্তি রয়েছে অসমে । সেই সম্পত্তির নিয়ে বিবাদের জেরে এই খুন কি না, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।

এদিকে, পুনর্নির্মাণের গোটা পর্বে কার্যত নিরুত্তাপ ছিলেন প্রৌঢ়া খুনের অন‍্যতম অভিযুক্ত ফাল্গুনী ঘোষ । সংবাদমাধ্যমের সামনেও তিনি একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি । তবে, তদন্তে ফাল্গুনী সহযোগিতা করছেন বলে জানা গিয়েছে ৷

পড়ুন: ট্রলিতে দেহ নিয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে, ধৃত মা-মেয়ের উৎশৃঙ্খল জীবনযাত্রায় অতিষ্ঠ পড়শিরা

মধ‍্যমগ্রাম, 26 ফেব্রুয়ারি: কুমারটুলিতে ট্রলি ব্যাগে দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ৷ কীভাবে খুন করা হয়েছিল সুমিতা ঘোষকে ? সেই উত্তর খুঁজতে মঙ্গলবার রাতে কড়া নিরাপত্তায় অন‍্যতম অভিযুক্ত ফাল্গুনী ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে মধ‍্যমগ্রামের বীরেশ পল্লীর ভাড়া বাড়িতে পৌঁছয় কলকাতার উত্তর বন্দর থানার পুলিশ । সঙ্গে ছিল ফরেন্সিক দল ৷ ধৃতকে সঙ্গে নিয়ে 5 ঘণ্টা ধরে চলে ঘটনার পুনর্নির্মাণ ৷

পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুনে ব্যবহৃত ইটের টুকরো ও রক্তের নমুনা ৷ পুনর্নির্মাণের সময় ফাল্গুনীর সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পারেন খুনে ব‍্যবহৃত বঁটিটি কোথায় ফেলা হয়েছে । বুধবার বঁটির খোঁজে তল্লাশি করা হবে বলে জানা গিয়েছে ৷ তদন্তের স্বার্থে এই নিয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ পুলিশের পদস্থ কর্তারা ।

ঘটনার টের পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা (ইটিভি ভারত)

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার বলেন, "মৃতা সুস্মিতা ঘোষের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আমাদের হাতে এসেছে ৷ দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল ৷ দেহটি খণ্ডিত অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ রাখার ফলে পচন ধরে যায় ৷" কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সম্পত্তির লোভেই সুমিতা ঘোষকে খুন করে মা ও মেয়ে । প্রথমে মৃতা প্রৌঢ়ার মাথায় ইট দিয়ে একাধিকবার আঘাত করা হয় । মাথার খুলিতে রক্ত জমাট এবং হাড় ক্ষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে । এরপর মৃতার পা বঁটি দিয়ে কেটে বাড়ির পাশের জলাশয়ে ফেলে দেয় মা ও মেয়ে ৷

খুনে ব‍্যবহৃত সেই ধারালো অস্ত্রটি উদ্ধার হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ধৃত ফাল্গুনীর কাছ থেকে প্রথমেই ভাড়া বাড়ির চাবি নিয়ে তদন্তকারীরা প্রবেশ করেন ঘরের ভিতরে । তাঁদের সঙ্গে প্রবেশ করেন ফরেন্সিক দলের সদস্যরাও । সংগ্রহ করা হয় রক্তের নমুনা । এরপর খুনের জায়গাটি ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন তদন্তকারীরা।

BODY IN TROLLEY BAG AT KOLKATA
মধ্যমগ্রামের ভাড়া বাড়ি (নিজস্ব চিত্র)

এরপর ধৃত ফাল্গুনীকে বাইরে এনে খুনে ব‍্যবহৃত অস্ত্র কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানতে চান তদন্তকারীরা ৷ আকার ইঙ্গিতে তদন্তকারীদের বাড়ি লাগোয়া একটি ফাঁকা জমি দেখিয়ে দেয় ধৃত মহিলা । টর্চের আলো নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ওই ফাঁকা জমি থেকে উদ্ধার হয় রক্তমাখা ইটের টুকরো।

পুনর্নির্মাণের সময়ে আরও বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ । খুনের আগের দিন নীল রঙের ট্রলি ব‍্যাগটি বাজার থেকে কিনে এনেছিলেন আরতি ও তাঁর মেয়ে ফাল্গুনী । সেই ট্রলি ব‍্যাগ নিয়ে তাঁদের দু'জনকে ভাড়া বাড়িতে ঢুকতেও দেখেছেন স্থানীয়দের অনেকে । তার পরের দিনই মেলে প্রৌঢ়া সুমিতা ঘোষের দেহাংশ ভরা নীল রঙের ট্রলি ব‍্যাগটি । অর্থাৎ, আগে থেকেই তৈরি ছিল খুনের 'চিত্রনাট্য'!

BODY IN TROLLEY BAG AT KOLKATA
ট্রলি ব্যাগ নিয়ে ধৃত মা ও মেয়ে (নিজস্ব চিত্র)

পুলিশ সূত্রে খবর, মধ্যমগ্রামের ভাড়া বাড়িতে গত 11 ফেব্রুয়ারি যান প্রৌঢ়া সুমিতা ঘোষ । তাঁর বাড়ি অসমের যোরহাটে । শ্বশুরবাড়ি বর্ধমানের নন্দঘাটে । দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না প্রৌঢ়ার । ফাল্গুনীও স্বামীর থেকে আলাদা থাকতেন ৷ অভিযোগ, ফাল্গুনীর উৎশৃঙ্খল আচরণ পছন্দ করতেন না স্বামী । সেই কারণে এই দূরত্ব । তাঁর বেপরোয়া জীবনযাত্রা এবং উৎশৃঙ্খল আচরণ নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ফাল্গুনীর ভাড়া বাড়ির প্রতিবেশীরাও ।

অবশ্য, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না-হওয়া সত্ত্বেও কেন ফাল্গুনীর মধ‍্যমগ্রামের ভাড়া বাড়িতে গিয়েছিলেন তাঁর পিসি শাশুড়ি সুমিতা ঘোষ ? সেই উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি ৷ তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, সুমিতা ঘোষের বেশ কিছু সম্পত্তি রয়েছে অসমে । সেই সম্পত্তির নিয়ে বিবাদের জেরে এই খুন কি না, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।

এদিকে, পুনর্নির্মাণের গোটা পর্বে কার্যত নিরুত্তাপ ছিলেন প্রৌঢ়া খুনের অন‍্যতম অভিযুক্ত ফাল্গুনী ঘোষ । সংবাদমাধ্যমের সামনেও তিনি একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি । তবে, তদন্তে ফাল্গুনী সহযোগিতা করছেন বলে জানা গিয়েছে ৷

পড়ুন: ট্রলিতে দেহ নিয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে, ধৃত মা-মেয়ের উৎশৃঙ্খল জীবনযাত্রায় অতিষ্ঠ পড়শিরা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.