কলকাতা, 18 মার্চ: গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় কলকাতা পৌরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে তুলোধোনা করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ তাঁর কথায়, ওই এলাকা মেয়রের নিজের মাঠ ৷ কাজেই সেখানে ঘটা কিছু তিনি জানেন না এটা হতে পারে না ৷ দীর্ঘ টুইটে শুভেন্দু লিখেছেন, "এটা কি বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, তাঁর অজান্তে তাঁর নাকের নীচে এ ধরনের অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে, আর সে বিষয়ে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না ?" সরাসরি শুভেন্দুর নাম না করলেও গার্ডেনরিচ নিয়ে বিরোধীদের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "দিল্লিতে বসে বড় বড় টুইট না করে এই কঠিন সময়ে মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান ৷ রাজনীতি করার সময় এটা নয় ৷"
শুভেন্দু দীর্ঘ টুইটে একগুচ্ছ অভিযোগ করার পর অভিষেক তাঁর নাম না করেই কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতাকে ৷ আজ উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে তিনি বলেন, "এই নিয়ে এখন রাজনীতি করা উচিত নয় ৷ এখন যাঁরা আটকে রয়েছেন, উদ্ধারকাজে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে উদ্ধার করতে হবে ৷ রাজনীতি 48 ঘণ্টা পরেও হতে পারে ৷ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান ৷ মানুষের প্রাণের থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশি কিছু নয় ৷আজকের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, পুরসভা প্রশাসন ও কোর্ট সবার সমন্বয় থাকা উচিত ৷ দিল্লি থেকে টুইট না করে, বড় বড় ভাষণ না দিয়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান ৷"
এ দিন শুভেন্দু দিল্লি থেকে তাঁর দীর্ঘ টুইটে লিখেছেন, _"টিএমসির তৈরি বিপর্যয়...5-তলার বিল্ডিং গার্ডেনরিচ এরিয়াতে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ায়, সে বিষয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ।
প্রথমত, ধ্বংসাবশেষের নীচে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল । যদি রাজ্য প্রশাসনের আরও সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাদের অবিলম্বে এনডিআরএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত । 2010 সাল থেকে তৃণমূল দল বামফ্রন্টকে সরিয়ে দিয়ে কলকাতা পৌনগিমের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পরে, 5000টিরও বেশি জলাশয় অবৈধভাবে ভরাট করা হয়েছে এবং কেএমসি এলাকার মধ্যেই তা হয়েছে ।
স্থানীয় কাউন্সিলর, প্রচারকারী এবং স্থানীয় পুলিশের মধ্যে স্পষ্ট যোগসাজশ রয়েছে ৷ শীর্ষস্থানীয় তৃণমূল নেতাদের তত্ত্বাবধানে, যখন এই ধরনের জলাশয়গুলি কোনও আইনি ও প্রশাসনিক ঝামেলার সম্মুখীন না হয়েই ভরাট করা হয় তখন সহজেই প্রত্যক্ষ করা যায় গোটা বিষয়টি । এরপর কেএমসির কোনও অনুমোদিত পরিকল্পনা বা তত্ত্বাবধান ছাড়াই এই ধরনের প্লটে অবৈধ ভবন নির্মাণ করা হয় ।
গার্ডেনরিচ এলাকায় এ ধরনের আটশোরও বেশি অবৈধ নির্মাণ রয়েছে । এলাকাটি কেএমসি মেয়র ফিরহাদ হাকিমের হোম টার্ফ । তিনি এ ব্যাপারে জানতেন না এটা কী করে বলেন ? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, তাঁর অজান্তেই তাঁর নাকের নীচে এ ধরনের অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে ৷ অথচ তাঁর এ ব্যাপারে কোনও ধারণা ছিল না ? অপরাধীর জন্য নিজে ত্রাণকর্তার ছদ্মবেশ ধারণ করা এবং ত্রাণ অভিযানের সময় ফুটেজ দখল করা কতটা লজ্জাজনক ?"
134 নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান মেয়র ৷ তাঁর দাবি, "স্থানীয় কাউন্সিলর তথা 134 নং ওয়ার্ডের শামস ইকবাল ও ধসে পড়া কাঠামোর প্রোমোটারকে গ্রেফতার করার সময় এসেছে ৷ 2021 সালের শেষ পৌরসভা নির্বাচনে শামস ইকবাল 134 নং ওয়ার্ডে (গার্ডেনরিচ এলাকা) 98.28 শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন ৷ সব কাউন্সিলরদের থেকে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ী হন তিনি ৷ তিনি অবৈধ নির্মাণের অবিসংবাদিত রাজা । তিনি একবার কেএমসি হেড অফিসে লাল রঙের অ্যাস্টন মার্টিন গাড়ি চালিয়ে গিয়ে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন । তাঁর চটকদার জীবনধারা এই মুহূর্তে ধ্বংসাবশেষের নীচে আটকে থাকা মানুষের জীবনের উপর নির্মিত । সম্প্রতি তিনি একটি বেন্টলি গাড়ি কিনেছেন, যার দাম পাঁচ কোটি টাকার উপর ৷ একজন কাউন্সিলর কীভাবে এত উপার্জন করতে পারেন তা ভাবতে পারেন !"
দুর্গতদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণও বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন শুভেন্দু ৷ তিনি বলেন, "আমি মনে করি, ক্ষতিপূরণ হিসেবে মৃতদের জন্য 5 লক্ষ এবং আহতদের জন্য 1 লক্ষ টাকার যে ঘোষণা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে অপর্যাপ্ত কারণ এটি একটি তৃণমূলের তৈরি বিপর্যয় । আমি দাবি করছি যে, মৃতের আত্মীয়দের কমপক্ষে 50 লক্ষ টাকা দেওয়া হোক এবং আহতদের কমপক্ষে 10 লক্ষ টাকা দিতে হবে ।"
তবে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করাটা নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা ৷ শুভেন্দু এ দিন লেখেন, "এই মুহূর্তে আমি নয়াদিল্লিতে আছি । আমার প্রার্থনা তাঁদের সঙ্গে আছে, যাঁরা এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে রয়েছেন, উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছেন এবং আমার ভাবনা রয়েছে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ৷"
আরও পড়ুন: