কলকাতা, 12 এপ্রিল: পশ্চিমবঙ্গ আন্তর্জাতিক অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল ৷ এটা আগেও প্রমাণিত হয়েছে ৷ বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে এনআইএ কাঁথি থেকে দু'জনকে গ্রেফতার করার পর এমনই অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালব্যও এই একই সুরে তোপ দেগেছেন ৷ তিনি টুইটে লিখেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে ৷ যদিও কাঁথি থেকে গ্রেফতার হওয়ায় এই নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর পরিবারের দিকে আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ৷
বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা কলকাতা থেকে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে ৷ রাজ্য পুলিশ সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়িত দুই সন্দেহভাজনকে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এই ঘটনায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে একহাত নিয়েছে বিজেপি ৷
বিরোধী দলনেতার এলাকার এই ঘটনা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, "আমি এটা জেনেছি । কাঁথি আমার হোমটাউন । পশ্চিমবঙ্গ আন্তর্জাতিক অপরাধীর মুক্তাঞ্চল, এটা আগেও প্রমাণিত । পঞ্জাব পুলিশ চপারে করে এখানে এসে পাঞ্জাবের দুষ্কৃতীদের এনকাউন্টার করেছে । মুজিবর রহমান খুনের দু'জন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত খুনির একজন হাওড়ায় হোমিওপ্যাথ ডাক্তার হিসেবে ছিল । পরে পার্ক সার্কাস থেকে মাজেদকেও ধরা হয় । পার্ক সার্কাস মানে শহরের প্রাণকেন্দ্র ।"
শুভেন্দুর দাবি, এ রাজ্য বিচ্ছিন্নতাবাগী ও সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ৷ এ কথা বলে তিনি বলেন, "সিপিএমও তাই করত । এখন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ও তাই করছে । মমতা নিজে দেশবিরোধী কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত । দিল্লিতে জাহাঙ্গীরপুরীতে হনুমান জয়ন্তীর দিন যে ঘটনা ঘটেছিল, তার মূল অভিযুক্ত ফিরোজ ৷ যে আমাকে হলদিয়ায় পাথর ছোড়ায় অভিযুক্ত, তার বাড়ি তমলুকের একটি গ্রামে । লাল্টু শেখ, আবদুল মান্নান ফেক আই কার্ড তৈরি করত । তারা গত বছর সোনারপুর থেকে গ্রেফতার হয় । গত বছরে ইন্দোরে যে সেক্স ব়্যাকেট পাওয়া যায় তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগ প্রমাণিত হয় ।"
পুলিশকে দলদাস করে রেখে কাজ করতে না-দেওয়ার কারণেই রাজ্যের আজ এই পরিস্থিতি বলে দাবি করেন শুভেন্দু ৷ তিনি বলেন, "এইখানে রাষ্ট্রবিরোধী একটি সরকার থাকার জন্য তাদের পুলিশকে পার্টি ক্যাডারে পরিণত করে পুলিশের নিজস্ব কাজ না-করতে দেওয়ার কারণে এই অবস্থা হয়েছে । এই কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 72টি জায়গায় বিএসএফ-কে জমি দেননি । যাতে কাঁটাতারের বেড়া না লাগানো যায় ।"
তবে এ সব নাশকতা মূলক ঘটনাকে ঘিরে নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন বিরোধী দলনেতা । একইসঙ্গে তিনি শাসকদলকে কটাক্ষ করে বলেছেন, "ওরা বলছে 26 তারিখের পর আমাদের সেন্ট্রাল বাহিনী থাকবে । এই সেন্ট্রাল বাহিনী কে ? শেখ শাহাজাহান, মেহেদি হাসান, মিনাখাঁর আয়ুব গাজি, বাসন্তীর রাজা গাজি, ফলতার জাহাঙ্গীর, আর ক্যানিং-এর শওকত মোল্লা ।"
এই ঘটনায় একই ভাষায় আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় সরব হন বিজেপির মিডিয়া সেলের নেতা অমিত মালব্য ৷ তিনি টুইটে লিখেছেন, "রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণে দুই প্রধান সন্দেহভাজন, বোমারু মুসাভির হুসেন শাজিব এবং সহযোগী আবদুল মাথিন আহমেদ তাহাকে কলকাতা থেকে আটক করেছে এনআইএ । দু'জনেই সম্ভবত কর্ণাটকের শিবমোগায় আইসিস সেলের সদস্য । দুর্ভাগ্যবশত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে ।"
যদিও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন যে, রাজ্য পুলিশ যে সহযোগিতা করেছে, তা মেনে নিয়েছে এনআইএ-ও ৷ এনআইএ কাঁথি থেকে দু'জনকে গ্রেফতার করায় এ প্রসঙ্গে শুভেন্দুকেও একহাত নিয়েছেন তিনি ৷ টুইটে কুণাল লিখেছেন, "এনাইএ-কেও মানতে হল রাজ্য পুলিশের সক্রিয় সহযোগিতার কথা । বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণে জড়িত বলে যে গ্রেফতার তারা করেছে, তাতে তাদের প্রেস রিলিজেও রাজ্য পুলিশের সহযোগিতার উল্লেখ । আর কোথা থেকে ধরেছে ? কাঁথি । সবাই জানে সেখানে কোন পরিবার দুষ্কৃতীদের আনে, আশ্রয় দেয় । এসবে তাদের ভূমিকার তদন্ত হোক । বাংলার পুলিশ দেশবিরোধী অশুভ শক্তিকে দমন করতে অবিচল এবং অন্য এজেন্সিকে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত, আবার প্রমাণিত ।"
আরও পড়ুন: