ব্যারাকপুর, 21 ফেব্রুয়ারি: আজ বুধবার তৃণমূলের তারকা বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর জন্মদিন । সেই উপলক্ষে বিধায়ককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল । এই পর্যন্ত ঠিকঠাকই রয়েছে সবকিছু । কিন্তু গোল বাঁধল পোস্টারের বেশকিছু শব্দ নিয়ে । যেখানে লেখা, ‘এবার ব্যারাকপুরে জনতার রাজ’ । এর ঠিক নিচে রয়েছে, সৌজন্যে ভাটপাড়া বিধানসভা নাগরিকবৃন্দ । আর এখানেই লুকিয়ে রয়েছে যাবতীয় জল্পনা ! ইতিমধ্যে এই নিয়ে কানাঘুষোও শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে ! তাহলে কি এবার ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে শাসকদলের হয়ে টিকিট পাচ্ছেন না সাংসদ তথা তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং ? নাকি সাংসদকে চাপে রাখতেই অর্জুন বিরোধী গোষ্ঠীর এই কৌশল ? এই নিয়ে একদিকে যেমন রাজনীতির পারদ চড়ছে, তেমনই ইঙ্গিতপূর্ণ এই পোস্টার ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনীতি ।
2021-এর বিধানসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন মমতার আস্থাভাজন তারকা পরিচালক রাজ চক্রবর্তী । বিধায়ক হিসেবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে তাঁর । তাছাড়া ব্যারাকপুরের ভূমিপুত্র তিনি । রাজের আদি বাড়ি হালিশহরে । এখানেই তাঁর পড়াশোনা এবং বেড়ে ওঠা । সেই কারণেই কি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তারকা বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীকে এবারের লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন তৃণমূলেরই একাংশ ? সেই কারণেই কি জন্মদিনকে হাতিয়ার করে আগেভাগে তাঁর নাম ভাসিয়ে দেওয়া হল শাসকদলেরই একটা অংশ থেকে ? এই নিয়েই জোর চর্চা শুরু হয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে ।
রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, এর পিছনে জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের ঘনিষ্ঠদেরও কারসাজি থাকতে পারে । কারণ, ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের দ্বন্দ্বের কথা অজানা নয় কারোরই । সাংসদ-বিধায়কের সেই দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসেছে । বিশেষ করে তৃণমূলকর্মী ভিকি যাদব খুনের ঘটনার পর থেকেই অর্জুন-শ্যামের বাকযুদ্ধ রীতিমতো চরমে পৌঁছেছে । ভিকি যাদব খুনে সরাসরি সাংসদের দিকে আঙুল তুলে তাঁকে 'খুনি' বলতেও ছাড়েননি বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম ।
পালটা অর্জুনও তাঁর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে শ্যামের সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করেছিলেন । সাংসদ-বিধায়কের এই দ্বন্দ্ব মেটাতে একসময় ব্যারাকপুরে ছুটে আসতে হয়েছিল তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে । কিন্তু, তাতে কোনও লাভ হয়নি । উলটে রাজ্য নেতৃত্বের সতর্কতা উপেক্ষা করেই অর্জুনকে ক্রমাগত নিশানা করেছেন জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক । তবে, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নির্দেশের পর থেকে আর সেভাবে সোমনাথের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি সাংসদ অর্জুন সিং ।
এদিকে, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ অর্জুন সিং তৃণমূলের টিকিটে লড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় দিন পনেরো আগে বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে সতীর্থ বিধায়ক সুবোধ অধিকারীকে পাশে নিয়ে সোমনাথ অর্জুনকে আক্রমণ করে বলেন, "খুনি বা খুনির পরিবারকে দলে যেন রাখা না হয়, দল যেন টিকিট না দেয় । সেটা ব্যাক্তিগতভাবে তিনি দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন করবেন ।"
এর দু'সপ্তাহ পরেই বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর হয়ে পোস্টার পড়ল ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের আনাচে কানাচে । যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ । বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের তারকা বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "ব্যারাকপুরের মানুষ এমনিতেই আবেগপ্রবণ । যাঁরা আমাকে ভালোবাসেন, তাঁরাই হয়তো আবেগবশত এটা করেছেন । এর মধ্যে কোনও রাজনীতি আছে বলে আমার মনে হয় না ।"
যদিও এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না গেরুয়া শিবির । এই বিষয়ে বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক রূপক মিত্র বলেন, "ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত তৃণমূল । শ্যাম-কূল ছাড়াও ওদের দলে একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে । তাই, মানুষ তিতিবিরক্ত । ব্যারাকপুরে জনতার পছন্দ একমাত্র নরেন্দ্র মোদি । তাঁর স্নেহের প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবে ব্যারাকপুরের মানুষ । এতে কারোরই দ্বিমত নেই ।"
আরও পড়ুন: