কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি: রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি মাঝেমধ্যেই শোনা যায় পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতাদের মুখে । এই রাজ্যে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটলেই এই দাবি ওঠে । কিন্তু এবার বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করেছে জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশন । সন্দেশখালি কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এই সুপারিশ করেছে তারা । আর এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা । তৃণমূল এর পিছনে বিজেপির চক্রান্ত দেখেছ । অন্যদিকে বিজেপি কমিশনের এই সুপারিশের মধ্যে যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে । একই সঙ্গে তারা জানাচ্ছে যে বিজেপি নীতিগত ভাবে 356 ধারা জারি করার বিপক্ষে ।
উল্লেখ্য, সন্দেশখালি কাণ্ডের প্রেক্ষিতে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে এসসি কমিশন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ৷ আবার হাইকোর্টেও মামলা হয়েছে । বৃহস্পতিবারই সন্দেশখালি নিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেছেন কেন্দ্রীয় এসসি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অরুণ হালদার । তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে দুষ্কৃতিরা মানুষের উপর অত্যাচার করছে ৷ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় । প্রশাসন যদি সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ওখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারেন ।’’ সেই কারণে তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুর কাছে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য সুপারিশ করেছেন ।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই এর পালটা সরব হয়েছে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস । শাসক দলের মুখপাত্র তথা দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে রাষ্ট্রপতি শাসন করে দেখুক । বিজেপির একটা চার আনার নেতা । দলের পদে গিয়েছে বলে বড় বড় কথা । আমি বলছি ওঁকে, ওঁর যদি ক্ষমতা থাকে রাষ্ট্রপতি শাসন করে দেখান । এই চমক নামক অন্য কোথাও দেখাবে । যত রাষ্ট্রপতি শাসন, সিবিআই-ইডির কথা বলা হবে । মানুষ ততই বিজেপির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হবে ।’’
এখানেই শেষ নয় কুণাল ঘোষ আরও বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে লাগাতার ধর্ষণের কুৎসা চলছে । যদি আদৌ কিছু হয়ে থাকত দিনের পর দিন, সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস স্থানীয় নেতারা আগে বলেননি কেন ? কেন মিডিয়াতেও কোনও অভিযোগ ছিল না ? বিরোধী কুৎসা আর নাটকের প্রচার চলছে বাংলা মিডিয়ায় । কারা ছদ্মবেশে মিথ্যা বলছে, ধরা পড়ছে । শুধু মুখের কথার নাটক ।’’
এদিকে এই কমিশনগুলির সদস্য কারা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শান্তনু সেন । তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের কমিশনের সমস্ত সদস্যই বিজেপি কর্মী অথবা বিধায়ক । তাদের কাছ থেকে এই ধরনের সুপারিশ পাওয়া যাবে, সেটাই তো স্বাভাবিক । ডাবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্যে যখন অনেক বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তখন এদের চোখ পড়ে না । তখন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও যায় না, রাষ্ট্রপতি শাসনের কথাও বলা হয় না । শুধু এখানেই কিছু হলে গেল গেল রব রব তোলা হয় ।’’
এই নিয়ে বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান যে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা যে কি সেটা নতুন করে রাজ্যের মানুষকে বোঝাবার দরকার নেই । এখানে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে । সাংবিধানিক সংস্থা আক্রান্ত হচ্ছে । আদালতকে আক্রমণ করা হচ্ছে । বিচারপতি আক্রান্ত । সাংবিধানিক প্রধান আক্রান্ত । এর সঙ্গে মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে শুরু করে মহিলাদের সম্ভ্রম, সবকিছু বাজেয়াপ্ত হয়ে যাচ্ছে ।
তাঁর আরও বক্তব্য, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠছে, সেগুলির সুরাহা না করে তারা কার্যত মানুষকেই আক্রমণ করছে । একটা জনবিচ্ছিন্ন অবস্থা তৈরি হয়েছে । তফশিলি কমিশন নিজেদের অবজারভেশন থেকে বলেছে । পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই মুহূর্তে এটাই চায় ।
একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, যদি বিজেপির রাজনীতির কথা বলা হয়, তাহলে কোনও নির্বাচিত সরকারকে 356 ধারা জারি করে ফেলে দেওয়ার পক্ষে নীতিগত ভাবে বিজেপি নয় । আবার সংবিধান থেকে 356 ধারা তুলে দেওয়ার পক্ষেও বিজেপি নয় । তবে কি পরিস্থিতিতে এটা ব্যবহার করা হবে, সেটা সংবিধান রক্ষকরাই বলতে পারবেন ।
বিজেপির আরেক নেতা দিলীপ ঘোষ জানান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেখানে পৌঁছাচ্ছে আর তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরাই যেভাবে লুট চালাচ্ছে, তার থেকে বাঁচার কোনও রাস্তা নেই । যে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে সুশাসন দেবে, তারাই যদি লুটপাট করে, তখন আর মানুষের যাওয়ার রাস্তা থাকে না । তাই বাঁচতে কেউ রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছেন, কেউ রাষ্ট্রপতির কাছে যাচ্ছেন। আবার কেউ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন । দেখা যাক কোন রাস্তাটা ঠিক ।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বাংলায় বিজেপি তৃণমূলের মিলিজুলি সরকার চলছে । ফলে, কখনোই বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে না । বরং, সন্দেশখালিতে যে অত্যাচার হয়েছে, তা নিয়ে বিজেপি তৃণমূল ধর্মীয় রাজনীতি শুরু করেছে । আদালতে গিয়েও কী হবে ? এতদিন হয়ে গেল এখনও মূল অপরাধীদের গ্রেফতার করা গেল না । এসব নাটক চলছে ।"
সিপিএমের আদিবাসী জনজাতি সংগঠনের নেতা তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুলিন বিহারী বাস্কে বলেন, "আদৌ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে কি না জানি না । কিন্তু সন্দেশখালিতে যা হয়েছে এবং যা চলছে তা কখনও বাংলার মানুষ তা দেখেনি । শাসক দল তৃণমূলের মদতে এবং তাদের বিধায়কদের যে বর্তমান মন্তব্য আদিবাসী জনজাতির মানুষদের নিয়ে, সেটাও সংবিধানিক । সবমিলিয়ে রাজ্যের সরকার তথা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার সামাজিক যে ক্ষতি করছে, তা অপূরণীয় । অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করা উচিত ।"
আরও পড়ুন: