পটনা, 11 ফেব্রুয়ারি: সোমবার কি বিহারে 'খেলা' হবে ? আচমকা ডিগবাজি দিয়ে বিজেপির সঙ্গে নতুন সরকার গঠন করেছেন নীতীশ কুমার ৷ আর তার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব কি তাহলে আস্থা ভোটের দিন বিধানসভায় অন্য কোনও খেলা খেলবেন ? ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দলগুলি নিজেদের বিধায়কদের অন্য শিবিরের থেকে 'নিরাপদ' রাখার চেষ্টা করছে ।
তেজস্বীর বাসভবনে আরজেডি বিধায়করা: নীতীশ কুমারের পুনরায় শপথ গ্রহণের পর প্রাক্তন ডেপুটি সিএম তেজস্বী যাদব দাবি করেছিলেন যে, বিহারে 'খেলা এখনও বাকি আছে ৷' শনিবার সন্ধ্যায় তিনি আরজেডি এবং বাম দলগুলির সমস্ত বিধায়ককে নিজের বাসভবনে এনে রেখেছেন । বিধায়কদের স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুবিধার দিকে সম্পূর্ণ যত্ন নেওয়া হচ্ছে । চা, সকালের খাবার, দুপুরের খাবার ও নৈশভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এছাড়াও আবাসনের বাইরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে । জানা গিয়েছে যে, সমস্ত বিধায়ক সোমবার সকাল পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন এবং সেখান থেকেই তাঁরা সোজা যাবেন বিধানসভা অধিবেশনে ৷ শনিবার রাতেই বিধায়কদের পোশাক ও জিনিসপত্র অর্ডার করা হয়েছে ।
হায়দরাবাদ থেকে পটনায় কংগ্রেস বিধায়করা: এ দিকে, এক সপ্তাহ পর আজ পটনায় ফিরছেন কংগ্রেস বিধায়করা । এই বিধায়কদেরও তেজস্বী যাদবের বাড়িতে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে । 19 জনের মধ্যে 16 জন কংগ্রেস বিধায়ক হায়দরাবাদে গিয়েছিলেন। সিদ্ধার্থ সৌরভ, আফাক আলম এবং বিজয় শংকর দুবে হায়দরাবাদে যাননি, তাঁরা বর্তমানে পটনাতেই রয়েছেন ।
জেডিইউ বিধায়কদের বৈঠকের ডাক নীতীশের: অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আজ জেডিইউ বিধায়ক ও বিধান পরিষদের সদস্যদের বৈঠক ডেকেছেন । আজ বিকেল 5টায় শিক্ষামন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধুরীর বাসভবনে জেডিইউ বিধায়ক দলের বৈঠক হবে । হুইপও জারি করেছে জেডিইউ । দলীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, আস্থা ভোটের সময় কোনও বিধায়ক অনুপস্থিত থাকলে তাঁর বিধায়কের সদস্যপদ বাতিল করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
জেডিইউ বিধায়করা অনেকে ভোজসভায় অনুপস্থিত: শনিবার গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শ্রবণ কুমারের বাসভবনে আয়োজিত ভোজসভায় অনেক জেডিইউ বিধায়ক অংশ নেননি । ভোজসভায় অনুপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিমা ভারতী, শালিনী মিশ্র, অশোক কুমার চৌধুরী, অনিরুদ্ধ যাদব, দিলীপ যাদব, আমান হাজারি, গুঞ্জেশ্বর শাহ, সুদর্শন এবং সঞ্জীব কুমার।
বিজেপি বিধায়কদের জন্য বোধগয়ায় কর্মশালা: ভারতীয় জনতা পার্টিও তাদের বিধায়কদের কোনও ধরনের ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য বোধগয়ায় রেখেছে । প্রশিক্ষণ শিবিরের নামে সব বিধায়ককে এক করে রাখার চেষ্টা চলছে । আজ কর্মশালার দ্বিতীয় ও শেষ দিন । সোমবার বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিতে সব বিধায়ক সেখান থেকেই রওনা হবেন ৷ প্রথম দিনে বিজেপির 5 জন বিধায়কও প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেননি । শনিবার বিজেপির কর্মশালায় অনুপস্থিত ছিলেন পবন যাদব, রশ্মি ভার্মা, বিনয় বিহারী এবং সৌরভ তিওয়ারি ।
বিধানসভার পাটিগণিত: 243 সদস্যের বিহার বিধানসভায় 128 জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে নীতীশ কুমারের । এর মধ্যে রয়েছে বিজেপির 78 জন বিধায়ক, 45 জন জেডিইউ, 4 জন হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা এবং একজন স্বতন্ত্র বিধায়ক । যেখানে মহাজোটের 114 জন বিধায়ক রয়েছে, যার মধ্যে আরজেডি রয়েছে 79, কংগ্রেসের 19 এবং বাম দলগুলির 16 জন । প্রয়োজনে এআইএমআইএম বিধায়কও বিরোধী শিবিরের সঙ্গে যেতে পারেন ।
কেন 'খেলা' হওয়ার আলোচনা: গত কয়েকদিন ধরে বিহারে তুমুল চর্চা চলছে যে, আরজেডি শাসক দলের কয়েকজন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে । ডেপুটি সিএম সম্রাট চৌধুরী এবং মন্ত্রী শ্রবণ কুমারও স্বীকার করেছেন যে, তাঁদের বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে আরজেডি ৷ তবে তাঁর দাবি, নীতীশ কুমার সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরীক্ষায় সফল হবেন । বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, আস্থা ভোটে যদি কমপক্ষে 7 জন এনডিএ বিধায়ক ক্রস-ভোট করেন বা 10-12 জন বিধায়ক বিধানসভা থেকে উধাও হয়ে যান, তবে 'খেলা' হতে পারে ।
স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব: বিহারে এনডিএ সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বিহার বিধানসভার স্পিকার অবধ বিহারী চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিশ দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক নন্দ কিশোর যাদব । এই অবস্থায় তিনি পদত্যাগ না করলে তাঁর বিরুদ্ধে ভোটাভুটি হবে । তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্পিকার । উল্লেখ্য, আরজেডির টিকিটে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন অবধ বিহারী চৌধুরী । এই অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল 'খেলা' হওয়ার আশংকা করছে ।
আরও পড়ুন: