কলকাতা, 14 এপ্রিল: মহিলাদের সুরক্ষাকে সামনে রেখে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল সিপিআইএম ৷ আজ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে লোকসভা ভোটের মহিলা বাম প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিলেন, মানুষ তাঁদের জয়ী করলে তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন মহিলাদের নানা প্রয়োজনীয়তার উপর ৷ আর এ জন্য তাঁরা জিতলে এক বছরের মধ্যে তৈরি করবেন মহিলা আত্মমর্যাদা কেন্দ্র ৷ যা সাংসদ তহবিলের অর্থের এক-তৃতীয়াংশ খরচ করে তৈরি করা হবে ৷
এ দিন সন্দেশখালি থেকে হাথরসের প্রসঙ্গ টেনে এনে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদলকে বিঁধেছেন দীপ্সিতা ধর, সায়রা হালিম ও সোনামণি টুডুরা ৷ তাঁদের বার্তা, যে বিকল্প হাথরস তৈরি করবে না, যে বিকল্প সন্দেশখালি তৈরি করবে না, সে রকম বিকল্প তৈরি করুন ৷ নারীদের সুরক্ষাকে হাতিয়ার করেই বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই জোরদার করার ডাক দিয়েছেন তাঁরা ৷
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএমের বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের মহিলা প্রার্থী শ্যামলী প্রধান, জাহানারা খান, সায়রা শাহু হালিম, দীপ্সিতা ধর ও সোনামণি টুডু । বিআর আম্বেদকরের জন্মদিনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে আজ বক্তব্যের শুরুতেই সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় বলেন, "মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলেছিলেন আম্বেদকর ৷ আর আজ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে ৷ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন মহিলারা ৷ 26 জন এমএলএ-এমপির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে ৷ কোথায় নারীদের সুরক্ষা ৷ হাথরস, উন্নাও, মণিপুরের মতো ঘটনা ঘটছে ৷ আমরা বেঁচে থাকার সংগ্রাম, বাঁচানোর সংগ্রাম থেকে পিছপা হব না ৷"
মহিলাদের বিরুদ্ধে যাঁরা অন্যায় করছে, প্রশাসনের লোকেরাই তাঁদের ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মীনাক্ষী ৷ সেই কারণে লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁর দল 15 দফা কর্মসূচি নিয়েছে বলে জানান তিনি ৷ তাঁর কথায়, "দোষারোপ নয়, পায়ের নীচের জমিকে শক্ত করে যাতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি তার জন্য লোকসভা ভোটের আগে আমরা কিছু কর্মসূচি নিচ্ছি ৷"
মীনাক্ষী জানান, লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএম প্রার্থীরা জয়ী হলে তাঁরা মহিলা আত্মমর্যাদা কেন্দ্র তৈরি করবে ৷ সাংসদ তহবিলের টাকার এক-তৃতীয়াংশ খরচ করে বিজয়ী প্রার্থী এই কেন্দ্র তৈরি করবেন ৷ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান শ্রীরামপুরের বাম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর ৷ তিনি বলেন, "আত্মরক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজন আত্মমর্যাদার ৷ 11 সালের পর থেকে মহিলাদের ক্ষমতায়ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কম হয়েছে ৷ আমরা মহিলাদের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কথা বলছি ৷ গাল ভরা নির্ভয়া ফান্ড তৈরি হয়েছিল ৷ 14 সালের পর থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই অর্থ খরচ করা হয়নি ৷ সেই অর্থ ডাইভার্ট করার প্রস্তাব আমরা দিচ্ছি ৷ সাংসদ তহবিল থেকে তৈরি হবে মহিলা আত্মমর্যাদা কেন্দ্র ৷"
এই কেন্দ্রের সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দীপ্সিতা বলেন, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি হতে পারে বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক ৷ এই কেন্দ্র থেকে মহিলাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে, গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ জানাতে হেল্পলাইন নম্বর থাকবে সেখানে, গণউদ্যোগ গড়ে তুলে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে, নির্যাতিতার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরি হবে, মার্শাল আর্ট-সহ আত্মরক্ষামূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে এই কেন্দ্র, সমিতি আটকাবে বাল্যবিবাহ ও পণপ্রথা, নারীপাচার রুখতে কার্যকরী পদক্ষেপ করবে এই কেন্দ্র ৷
কী কী সুবিধে থাকবে এই কেন্দ্রে ? দীপ্সিতা জানান, গর্ভাবস্থায় মাতৃসহায়তা করা, সারা বছর মহিলাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, এলাকাজুড়ে স্যানিটরি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন, তা বাড়ি বাড়িও পৌঁছে দেওয়া হবে, মেনস্ট্রুয়েশন কাপের উপকারিতা, পরিবেশবান্ধব স্যানিটরি প্যাডের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতনতার প্রচার করবে এই কেন্দ্র, কর্মরত মহিলাদের সন্তান প্রতিপালনের জন্য স্থানী ক্রেশের ব্যবস্থা করা হবে, শ্রমজীবী মহিলাদের জন্য এলাকাভিত্তিক যৌথ রান্নাঘরের জোর দেবে এই কেন্দ্র ৷
এ ছাড়াও মহিলাদের জন্য স্বাক্ষরতা ও বিজ্ঞান শিক্ষা কেন্দ্র করা হবে, মহিলাদের স্বনির্ভরতার স্বার্থে সমবায় সমিতি ও বিপণনসংস্থা চালু করা হবে এবং মাইক্রো ফিনান্সের কবল থেকে বাঁচতে কম সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা ও তার বিষয়ে সচেতনতা প্রচার করা হবে ৷ মহিলাদের সাংস্কৃতিক বিকাশের স্বার্থে কালচারাল সেন্টারও করবে এই কেন্দ্র ৷ তার পাশাপাশি খেলার মাঠে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও ধারাবাহিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে ৷ এই কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের সবরকম সহযোগিতারও অঙ্গীকার করা হয়েছে বামেদের তরফে ৷ দীপ্সিতা জানান, 2024 সালেই এই রাজ্যের সর্বত্র গড়ে উঠবে মহিলা আত্মরক্ষা কেন্দ্র ৷
আরও পড়ুন: