চুঁচুড়া, 15 মে: শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচারে এসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে হীরক-রানি বলে কটাক্ষ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ ৷ বুধবার শাহের এই কটাক্ষের জবাব কয়েকঘণ্টার মধ্যেই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে লকেট রানি বলে কটাক্ষ করলেন মমতা ৷
আগামী সোমবার, 20 মে হুগলিতে ভোট ৷ বুধবার হুগলির চুঁচুড়ায় নির্বাচনী জনসভা করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ৷ সেখানে উপস্থিত জনতার ভিড় দেখে মমতা জানান, এই মানুষগুলোই যদি তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেন, তাহলেই তাঁর দলের প্রার্থী রচনা বন্দ্য়োপাধ্যায় জিতে যাবেন ৷ আর ‘লকেট-রানি’ হেরে যাবেন ৷
যদিও এর পর তাঁর ভাষণে আর লকেটের প্রসঙ্গ ওঠেনি ৷ বরং আগাগোড়া তিনি আক্রমণ করেছেন বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ জনতাকে তিনি জানিয়েছেন, বিজেপিকে হারাতে প্রতিটা সিট খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ বিজেপি এবার ক্ষমতায় এলে কারও অস্তিত্ব থাকবে না, মা-বোনেদের সম্মান থাকবে না ৷ নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে আর কারও নিয়োগ হবে না ৷
মমতার দাবি, একটা রাজনৈতিক দলকে মানুষ ভোট দেয়, তার দায়বদ্ধতা দেখে ৷ তৃণমূল সব প্রতিশ্রুতি পালন করে ৷ কিন্তু গত 10 বছরে বিজেপি যে কথা বলে ভোট নিয়েছে, সেই কথাগুলো পালন তারা করেনি ৷ 15 লক্ষ টাকা, বছরে দু কোটি চাকরি দেবে বলেছিল ৷ কিন্তু দেয়নি ৷ তার মানে পুরোটা ভাঁওতা ৷ এই প্রসঙ্গে মোদিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘ওঁর (নরেন্দ্র মোদি) নাম দিয়েছি প্রচারবাবু ৷ ছবি তুলতে এত ভালোবাসেন আর নিজের প্রচার করতে ৷’’
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিয়েও তিনি বিজেপির সমালোচনা করেন ৷ মমতার কথায়, সত্তরোর্ধ্বদের চিকিৎসা খরচ দেবে বলছে মোদি সরকার ৷ তাহলে সত্তরের নিচে যাঁদের বয়স, তাঁদের কী হবে ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি স্বাস্থ্যসাথীর প্রসঙ্গ টানেন ৷ রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পে সবাই চিকিৎসা পান বলে তিনি জানান ৷ মমতার আরও অভিযোগ, আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত আদর্শ আচরণবিধি ভেঙেছেন মোদি ৷ কিন্তু মোদির হাতের পুতুল হওয়ায় নির্বাচন কমিশন এই নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ৷
মমতার আরও প্রশ্ন, আড়াই মাস ধরে ভোট হলে উন্নয়ন হবে কী করে ? তাঁর দাবি, মোদির গ্যারান্টি মানে ফোর টোয়েন্টি ৷ তাঁর অভিযোগ, যেখানে যেখানে ক্ষমতায় আছে বিজেপি, সেখানে সেখানে মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷
মমতার দাবি, বিজেপি এবার জিততে পারবে না ৷ দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ-সহ সর্বত্র হারছে বিজেপি ৷ বিজেপির জেতার কোনও অঙ্ক নেই ৷ 2004 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী হেরে যাবেন, কেউ বুঝতে পারেনি ৷ ভেতরে ভেতরে হাওয়া বদলে গিয়েছে ৷ এবারও তাই হবে ৷
তাঁর আরও দাবি, বিজেপির মতো চোর পার্টি একটাও নেই ৷ সবচেয়ে বড় চোর৷ সারা বিশ্ব বুঝতে পারছে কী চলছে দেশে ৷ বিজেপি চারটে পর্বে হেরেছে ৷ আর তিনটেতে বেশি জেতার সম্ভাবনা নেই ৷ ‘ইন্ডিয়া’ জোট থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাইরে থেকে সবরকম সাহায্য করে তৃণমূল কেন্দ্রে সরকার গঠন করে দেব ৷
মমতার আরও দাবি, প্রচারক, প্রকাশকের নাম ছাড়া যা ইচ্ছে তাই বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় না ৷ কোর্টে রিট পিটিশন করা হচ্ছে ৷ এ দিন আবারও মমতা জানান যে তাঁরা এনআরসি-সিএএ করতে দেবেন না ৷ তাই তিনি বলেন, ‘‘দেশ বাঁচুক, বিজেপি বিদায় নিক ৷’’ এই সময় বিজেপিকে তিনি ‘আপদ’ বলেও কটাক্ষ করেন ৷
আরও পড়ুন: