মেদিনীপুর, 5 মার্চ: পশ্চিম মেদিনীপুরের সভা থেকে একযোগে বিজেপি ও সিপিএমকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মঙ্গলবার শালবনি, লালগড়, কেশপুর, নেতাইয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তুলোধোনা করেন বামেদের ৷ একইসঙ্গে, বাংলাকে বঞ্চিত করার অভিযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় তোপ দেগেছেন তিনি ৷ এ দিন ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মিথ্যেবাদী বলে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ দিল্লির কাছে ভিক্ষে না চেয়ে রাজ্য সরকারই মানুষের জন্য বাড়ি ও অন্যান্য পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে 'গ্যারান্টি' দিয়েছেন মমতা ৷ তাঁর কথায়, "আমি রাজ্যের দিদি, বিশ্বের দিদি ৷ আমি ইউনিভার্সাল দিদি ৷"
আজ মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্য়াস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই প্রশাসনিক সভা থেকেই তিনি ফের টেনে আনেন 'রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা'র অভিযোগ ৷ গতকালের মতো আজও মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন যে, রাজ্যে এসে আবাস যোজনার টাকা দেওয়া নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
এ দিন মমতা বলেন, "সেদিন এসে মিথ্যে কথা বলে গিয়েছেন ৷ তিনি বলেছেন, কেন্দ্র রাজ্যকে 47 হাজার কোটি টাকা দিয়েছে ৷ আর আমরা সব খেয়ে নিয়েছি ৷ আসল তথ্য হল, 2014-15 সাল থেকে 2021-22 সাল পর্যন্ত আবাস যোজনা প্রকল্পে কেন্দ্র বাংলাকে 29 হাজার 834 কোটি টাকা দিয়েছে ৷ আর রাজ্য দিয়েছে বিশ হাজার কোটি টাকা ৷ আর জমিটাও রাজ্যের ৷ কাজেই বেশিরভাগই আমাদের দিতে হয় ৷ আমরা 43 লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছি ৷"
টাকার জন্য বাংলা আর কেন্দ্রের কাছে ভিক্ষে করবে না বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর কথায়, "আমরা মে মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করব ৷ তারপরও যদি টাকা না দেয়, তাহলে আর অপেক্ষা করব না ৷ 11 লক্ষ বাড়ির কাজ আমরাই শুরু করে দেব ৷ ধাপে ধাপে সব করে দেব ৷ দিল্লির কাছে আর ভিক্ষে করব না ৷"
প্রধানমন্ত্রীকে বারবার বলতে শোনা যায় মোদির গ্যারান্টির কথা ৷ আজ তা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "লক্ষ্মীর ভান্ডার এখন মডেল হয়ে গিয়েছে ৷ দিল্লিও সেই পথ অনুসরণ করছে ৷ কিন্তু বাংলা অনেক বড় রাজ্য ৷ বাংলায় কিছু করতে গেলে টাকা বেশি দিতে হয় ৷ এটা ভবিষ্যতের গ্যারান্টি ৷ বাংলার সরকার গ্যারান্টি দিলে সেটা রক্ষা হয়, দিল্লির সরকার গ্যারান্টি দিলে সেটা কাজে লাগে না ৷ নির্বাচনের আগে গ্যাস বেলুন ৷"
আগের অশান্ত জঙ্গলমহলের কথা তুলে এ দিন বামেদেরও একহাত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "একদিন জঙ্গলমহলে মানুষ বেরতে ভয় পেত ৷ শালবনী, লালগড়, কেশপুর, নেতাইয়ে মানুষ ভয় পেত ৷ যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন একবার জলপাইগুড়িতে গিয়েছিলাম ৷ শুনলাম কেশপুরে 7 জনকে সিপিএম খুন করেছে ৷ সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যাই ৷ হলদিয়ায় মিটিং করতে দেখেছি, মাইক আনতে দেয়নি ৷ গড়বেতায় একটা গ্রামে গিয়েছিলাম ৷ এক বিধবা মা বলেন, আমার দুটো ছেলেকে সিপিএম খুন করে দিল, তারাই এখন বিজেপির হার্মাদ ৷ চমকাইতলায় মিটিং করে ফেরার সময় অজিত পাঁজাকে ঘিরে ধরেছে ৷ কেশপুরে মিটিং থেকে ফিরে শুনলাম মারধর করছে ৷ লালগড়ে চার ঘণ্টা জঙ্গলে আমার গাড়ি আটকে রেখে দিয়েছে ৷ নেতাইতে খুন করা হয়েছে ৷"
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কপালেশ্বর কেলেঘাই প্রকল্পে 700 কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছে রাজ্য ৷ আর আগামী দিনে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্যও রাজ্য আর দিল্লির অপেক্ষায় থাকবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে দেব আমাকে অনেকবার বলেছে ৷ ওখানে 250 কোটি টাকা খরচ করে কিছু কাজ করেছি ৷ আগামী 2-3 বছরের মধ্যে আমরাই বাকিটা করব ৷ যখন কিছুই ওরা করে না, তখন ওদের আর করার দরকার নেই ৷ এর ফলে মানুষ বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে ৷"
এ দিন ব্রিগেডের জনগর্জন সভায় যোগ দেওয়ার জন্যও মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "কেন বাংলা বঞ্চিত হচ্ছে ? কেন বাংলাকে টাকা দেওয়া হচ্ছে না ? একেক জনের জন্য একেক নিয়ম কেন ? আগামী দিনের লড়াই বাংলাই লড়বে ৷ চলুন সবাই ব্রিগেডের জনগর্জন সভায় ৷"
এ দিন সভার শেষে ইন্দ্রনীল সেন উপস্থিত সবাইকে বলেন, "তোমরা সবাই দিদি নাম্বার ওয়ান দেখেছো ?" তখনই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি ছোট-বড় সবার দিদি ৷ আমি রাজ্যের দিদি ৷ দেশের দিদি ৷ আমি বিশ্বের দিদি ৷ ইউনিভার্সাল দিদি ৷"
আরও পড়ুন: