কলকাতা, 4 জুন: 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ থেকে 18টি আসন জিতে রাজ্য রাজনীতিতে চমক দিয়েছিল ৷ কিন্তু পাঁচ বছর পর 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য রাজনীতি যে আরও বড় চমক দেখা যাবে, তা তখন কে আর জানত ! 2019 সালে যে দল একধাক্কায় 12টি আসন হারিয়েছিল, সেই তৃণমূল কংগ্রেসই এবার বাংলায় ‘সবুজ ঝড়’ তুলল ৷ ঠিক যেমন হয়েছিল 2021 সালে ৷
আর এই সবুজ ঝড় পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে হইচই ফেলে দিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও ৷ কারণ, আসন সংখ্যার নিরিখে তৃণমূল কংগ্রেস এখন চতুর্থ স্থানে ৷ বিজেপি, কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির পরেই রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দল ৷
আর বিজেপি, যারা 2021 সালে বাংলার প্রধান বিরোধী দল হওয়ার পর থেকে বিধানসভার অন্দরে ও বাইরে রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসক দলকে বিভিন্ন ইস্যুতে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করে ভালো ফলের যে আশা জাগিয়েছিল, সেই ভালো ফলের কাছাকাছিও তারা পৌঁছাতে পারল না ৷ বরং 2019 সালে তাদের জেতা আসনের বেশ কয়েকটি হারাতে হল তাদের ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গত বছর তিনেক একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ-সহ আরও অনেক অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কেন মানুষ সেই ঘাস-ফুল প্রতীকের উপরই আস্থা রাখলেন ? কেন বিজেপি তাদের কাঙ্খিত 30-35 আসন জয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে পারল না ?
রাজনৈতিক মহলের মতে, 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির গায়ে যে বাংলা বিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস, সেই ট্যাগ 2024 সালে এসেও মুছে ফেলতে পারেনি গেরুয়া শিবির ৷ ফলে ভোটের ঠিক মুখে তৃণমূলের তৈরি করা স্লোগান ‘জনতার গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’ সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে ৷ তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিষয়টি ৷ ফলে সব মিলিয়ে বিজেপি বিরোধী যে আবহ তৈরি হয়, তার ফলস্বরূপ বিজেপির আসন সংখ্যা আগেরবারের চেয়ে কমে গিয়েছে ৷
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা বিরোধী হওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি, এই রাজ্যে তারা অনেক বেশি ব্যক্তিনির্ভর হয়ে পড়াও ফ্যাক্টর হয়েছে ৷ প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচার, বাংলায় একজন নেতার উপরই বেশি ভরসা করে ফেলেছিল তারা ৷ কিছুটা হলে সংগঠন গৌণ হয়ে গিয়েছিল ৷ যার খেসারত দিতে হল ভোটের ফলে ৷
যদিও শতাংশের হিসেবে 2019 এর চেয়ে মাত্র 2 শতাংশ ভোট কমেছে তাদের ৷ কিন্তু পাঁচ বছরে শতাংশের হিসেবে প্রায় 3 শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে তৃণমূল ৷ এমনকী ভোট কমেছে বাম ও কংগ্রেসেরও ৷ এখন প্রশ্ন হল, নিয়োগ দুর্নীতি থেকে রেশন কেলেঙ্কারি-সহ একাধিক অভিযোগ ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৷ তার পরও কেন মানুষ তৃণমূলকেই ভরসা করল ? কেন সিপিএম ও কংগ্রেসের উপর আস্থা রাখতে পারল না ?
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তৃণমূলের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে একটা অংশ অবশ্যই কংগ্রেস ও সিপিএমকে ভোট দিয়েছে ৷ কিন্তু সেটা ভোটে জেতানোর মতো অংশ অবশ্যই নয় ৷ তাছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের তরফে দেওয়া একাধিক প্রকল্প, বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্প ইতিবাচক ফ্য়াক্টর হয়েছে তৃণমূলের জন্য ৷ মহিলাদের ভোট অনেক বেশি গিয়েছে তৃণমূলের দিকে ৷
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উপর আস্থা ও বর্তমানে তৃণমূলের তরুণ তুর্কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি নেতৃত্বে ভরসাও তৃণমূলের কাছে ভোট টানার ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হয়েছে ৷ তাই এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘সবুজ সুনামির’ সাক্ষী হল বাংলা ৷
(এই প্রতিবেদন পাবলিশ করার সময় বাংলায় তৃণমূল 29টি, বিজেপি 12টি ও কংগ্রেস 1টি আসন পেয়েছে৷)