ETV Bharat / entertainment

'সুখটান দিতে দিতে গান রেকর্ড করতেন'- শ্যামল মিত্রের জন্মদিনে ফাঁস সৈকত মিত্রর - SAIKAT MITRA ON SHYAMAL MITRA

সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে শ্যামল মিত্র এক আবেগের নাম ৷ শিল্পীর 96তম জন্মদিনে অনেক কথা প্রকাশ্যে আনলেন ছেলে তথা গায়ক সৈকত মিত্র ৷

Etv Bharat
শ্যামল মিত্রর সৈকত মিত্র (Etv Bharat)
author img

By ETV Bharat Entertainment Team

Published : Jan 14, 2025, 2:52 PM IST

Updated : Jan 14, 2025, 3:25 PM IST

কলকাতা, 14 জানুয়ারি: কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী তথা সুরকার শ্যামল মিত্রর আজ 96তম জন্মদিন ৷ বাবাকে স্মরণ করে অনেকগুলো বছর পিছিয়ে গেলেন পুত্র সৈকত মিত্র ৷ ইটিভি ভারতে তুলে ধরলেন সেদিনের সেই সব সোনা ঝরা সন্ধ্যার স্মৃতি।

ইটিভি ভারত: প্রতি বছর আজকের দিনটা কীভাবে কাটান?

সৈকত: গানে গানে কাটাই। বাবা বেঁচে থাকতে এদিন কিছুই হত না। বাবা মারা যাওয়ার পরই শুরু হল তাঁর জন্মদিন পালন। তবে, শুরুটা হয় বাবার মৃত্যু বার্ষিকী দিয়ে। তারপর থেকে 14 জানুয়ারি নানা জায়গায় বাবার জন্মদিন পালন করা শুরু হয়। আমি ছাড়াও অনেক সংস্থা আয়োজন করে। আবার অনেক টিভি চ্যানেলও এদিন বাবার স্মৃতিতে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।

ইটিভি ভারত: উনি খুব ব্যস্ত ছিলেন। সময় দিতে পারতেন পরিবারকে?

সৈকত: খুব ছোটবেলার কথা যদি বলি, তা হলে বলব আমি যখন স্কুলের পথে বাবা তখন ঘুমোচ্ছেন। আর বাবা যখন ফিরতেন আমি তখন ঘুমোচ্ছি। তখন তাঁদের ব্যস্ততা এমনই ছিল। ওনারা যতটা কাজের মধ্যে জড়িয়ে থাকতেন এখন তার সিঁকিভাগও জড়িয়ে থাকি না কেউ। তার থেকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকি সামাজিক মাধ্যমে।

ইটিভি ভারত
: আপনি একজন প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিল্পী। বাবাই কি আপনার শিক্ষাগুরু ছিলেন?

সৈকত: না, শিক্ষাগুরু কখনোই বলা যাবে না। কেননা বাবা কোনওদিন আমাকে হাতে ধরে গান শেখাননি। কিন্তু বাবা আমার আইডল। যেটা উনি আমাকে শিখিয়ে গিয়েছেন সেটা বহু মূল্যবাণ। সবার আগেই শিখিয়েছেন যে কী কী করব না। শিখিয়েছেন গানের কথায় কীরকমভাবে গলা থ্রো করলে তা কর্কশ লাগবে না, বলেছিলেন রবীন্দ্র সঙ্গীতে বেশি কাজ করার দরকার নেই। আরও বলেন, উচ্চারণ স্পষ্ট হতে হবে, গানের কথা যেন ঠিকভাবে বলা হয়। আরও দুটো কথা বলতেন, কারোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না, কারোর নিন্দা করবে না।

ইটিভি ভারত: শ্যামল মিত্রর পছন্দের গায়ক গায়িকা কারা ছিলেন?

সৈকত: বাবা মাঝে মাঝে যাঁদের কথা বলতেন আমি তাঁদের কথাই বলতে পারব। পঙ্কজ মল্লিকের গান বাবার খুব ভালো লাগত। বলতেন ওরকম 'মীড়' আর কেউ এই ভূ ভারতে করতে পারবে না। বলতেন, হেমন্ত দা যেটাতে হাত দিয়েছেন সেটাই সোনা হয়ে গেছে। মেহেদি হাসানের গানের খুব ভক্ত ছিলেন বাবা। 1972-এ যখন বঙ্গবন্ধু বাবাকে ডাকলেন বাবা গিয়েছিলেন। ওখান থেকে নিয়ে আসেন মেহেদি হাসানের গানের রেকর্ড। ওঁর গান শুনতেন আর চোখের জল ফেলতেন বাবা। বলতেন, এরকম গান কোনওদিন গাইতে পারব না। যে তিনটে গানের রেকর্ড বাবা এনেছিলেন সেগুলির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করেন 'জানি না আজ যে আপন...', 'সবকিছু বদলে গেছে, এই তুমি তো সেই তুমি নও...', 'এ তো পুতুল খেলা নয়...'-এর মতো তিনটি জনপ্রিয় গান।

ওই সময়ে ওঁরা কেউ কারো গান কপি করতেন না। অনুপ্রেরণা থেকেই বানাতেন। সলিল চৌধুরী, লতা মঙ্গেশকর, শচীন দেব বর্মন এবং আশা ভোঁসলের কথা বাবা খুব বলতেন। মুম্বইতে গেলে শচীন কর্তার বাড়িতে যেতেন, থাকতেন। সেই সময়ে সলিল চৌধুরীর গণনাট্যের দল বেশ জনপ্রিয়। স্বাধীনতা আগে এই 'আইপিটি এ' দল একটা বড় ব্যাপার ছিল। 12-15 জনের একটা দল ছিল। আমাদের কাঁচড়াপাড়ার বাড়িতে তাঁদের যাতায়াত ছিল। খাওয়াদাওয়া, ঢালাও বিছানা করে ঘুম- রঙিন ছিল নাকি সেই সব দিন। কত গান তৈরি হয়েছে তখন। 'কোনও এক গাঁয়ের বধূ' গানের সেই লাইন 'ডাকিনী যোগিনী এল কত নাগিনী এল পিশাচেরা এল রে' আমাদের বাড়িতেই তৈরি হয়।

বাবা আশা ভোঁসলেকে দিয়ে অনেক গান গাইয়েছেন। ওঁর গায়কী বাবার পছন্দ ছিল। উনি আমাদের বাড়িতেও এসেছেন। আমার বৌভাতেও এসেছিলেন। বাবা পছন্দ করতেন মুকেশ জি'র উচ্চারণ। নচিকেতা ঘোষ মারা যাওয়ার পর বাবা আফসোস করে বলেছিলেন, সিনেমার গানের 60 শতাংশ ক্ষতি হয়ে গেল। উনি যেভাবে সিচুয়েশনাল গান বানাতেন সেরকম আর কেউ পারেননি। বাবা মদন মোহনের সুর ভালোবাসতেন। কোনও গানে মহম্মদ রফির ধরা এবং ছাড়া বাবার পছন্দ ছিল খুব। আমি যখন গানবাজনা শুরুও করিনি তখনই আমাকে বলেছিলেন যদি কখনও গানবাজনা করি তা হলে যেন মহম্মদ রফিকে ফলো করি। বাবার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল সুধীন দাশগুপ্তর সঙ্গে।

ইটিভি ভারত: আর কিশোর কুমার? উনি তো 'অমানুষ' ছবির গানে সাড়া ফেলেছিলেন।

সৈকত: উনি তো প্রথমে 'কী আশায় বাঁধি খেলাঘর' গানটা গাইতেই চাননি। প্রথমে রাজি ছিলেন। পরে রুমা গুহ ঠাকুরতা গানটা কিশোর কুমারের কাছ থেকে গানটার কথা শুনে ওনাকে বলেছিলেন, খবরদার তুমি এই গান গেও না। শ্যামল দা'র কণ্ঠে আমরা রেডিওতে শুনেছি এই গান। ওই ইমোশন নিয়ে তুমি গাইতে পারবে না। তুমি ফ্ল্যাট গাও। বাংলার শ্রোতা তোমাকে ছ্যা ছ্যা করবে। কিশোর কুমার বাবাকে ফোন করে বলেন, আমি গাইব না এই গান। রুমা বলেছে আমার গলায় মানাবে না। বাবা অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়ে গাওয়ান ওনাকে দিয়ে। আর গানটাও হিট হয়। বলা ভালো, ওই গানের মাধ্যমেই কিশোর কুমারের বাংলা সিনেমার গানে বিগ এন্ট্রি হয়। তার আগে উনি বাংলা সিনেমার গানে সেভাবে সাড়া ফেলেননি।

ইটিভি ভারত: সেই সময় নতুনদের নিয়ে কী বলতেন?

সৈকত: নতুনদের উৎসাহ দিতেন। খোঁজ নিতেন কে তখন ভালো গাইছেন। আর যিনি সেই খবরটা দিতেন তাঁর প্রতিও ছিল অগাধ বিশ্বাস ৷ যিনি ভালো গাইছেন শুনতেন তাঁকে ডেকে এনে গান তুলিয়ে গাওয়াতেন। এভাবেই কত কালজয়ী গান তৈরি হতে দেখেছি তখন। একটা গান লিখতে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার সবথেকে কম সময় নিতেন। সুর করতেও সময় লাগত না বাবা ও তাঁর সমসাময়িকদের। হাঁটতে চলতে সুর ভেজে ফেলতেন। যেন কোনও ব্যাপারই না। বাবা তো সুখটান দিতে দিতেও গান রেকর্ড করেছেন। বাবা ভীষণ ধূমপান করতেন ৷

ইটিভি ভারত: লম্বা সঙ্গীত জীবনে উনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন কখনও?

সৈকত: বাবা মুম্বইতে তখন শক্তি সামন্তর পরিচালনায় 'দেয়ানেয়া'র হিন্দি রিমেক 'অনুরোধ'-এর জন্য গান বানাচ্ছেন। পরিচালক শক্তি সামন্ত এসে বাবাকে আরও তিনটে ছবির গানের সুর করতে বলেন। বাবা বলেন, ধুর মশাই, একসঙ্গে করব কীভাবে? একে একে করব। তখন উনি বাবাকে 'দেয়ানেয়া'র সুর করা ছেড়ে দিতে বলেন। 'দেয়ানেয়া' তৈরি হয় বাবার নিজের জীবনের গল্প নিয়ে। ওটা নিয়ে বাবার অনেক বড় সেন্টিমেন্ট ছিল। বাবা বলেছিলেন, আমি তা হলে কোনওটাই করব না। এগুলো তখন মুম্বইতে চলতই। এখন এখানে হয়। এটাকে ষড়যন্ত্র বলব না তো কী?

কলকাতা, 14 জানুয়ারি: কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী তথা সুরকার শ্যামল মিত্রর আজ 96তম জন্মদিন ৷ বাবাকে স্মরণ করে অনেকগুলো বছর পিছিয়ে গেলেন পুত্র সৈকত মিত্র ৷ ইটিভি ভারতে তুলে ধরলেন সেদিনের সেই সব সোনা ঝরা সন্ধ্যার স্মৃতি।

ইটিভি ভারত: প্রতি বছর আজকের দিনটা কীভাবে কাটান?

সৈকত: গানে গানে কাটাই। বাবা বেঁচে থাকতে এদিন কিছুই হত না। বাবা মারা যাওয়ার পরই শুরু হল তাঁর জন্মদিন পালন। তবে, শুরুটা হয় বাবার মৃত্যু বার্ষিকী দিয়ে। তারপর থেকে 14 জানুয়ারি নানা জায়গায় বাবার জন্মদিন পালন করা শুরু হয়। আমি ছাড়াও অনেক সংস্থা আয়োজন করে। আবার অনেক টিভি চ্যানেলও এদিন বাবার স্মৃতিতে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।

ইটিভি ভারত: উনি খুব ব্যস্ত ছিলেন। সময় দিতে পারতেন পরিবারকে?

সৈকত: খুব ছোটবেলার কথা যদি বলি, তা হলে বলব আমি যখন স্কুলের পথে বাবা তখন ঘুমোচ্ছেন। আর বাবা যখন ফিরতেন আমি তখন ঘুমোচ্ছি। তখন তাঁদের ব্যস্ততা এমনই ছিল। ওনারা যতটা কাজের মধ্যে জড়িয়ে থাকতেন এখন তার সিঁকিভাগও জড়িয়ে থাকি না কেউ। তার থেকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকি সামাজিক মাধ্যমে।

ইটিভি ভারত: আপনি একজন প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিল্পী। বাবাই কি আপনার শিক্ষাগুরু ছিলেন?

সৈকত: না, শিক্ষাগুরু কখনোই বলা যাবে না। কেননা বাবা কোনওদিন আমাকে হাতে ধরে গান শেখাননি। কিন্তু বাবা আমার আইডল। যেটা উনি আমাকে শিখিয়ে গিয়েছেন সেটা বহু মূল্যবাণ। সবার আগেই শিখিয়েছেন যে কী কী করব না। শিখিয়েছেন গানের কথায় কীরকমভাবে গলা থ্রো করলে তা কর্কশ লাগবে না, বলেছিলেন রবীন্দ্র সঙ্গীতে বেশি কাজ করার দরকার নেই। আরও বলেন, উচ্চারণ স্পষ্ট হতে হবে, গানের কথা যেন ঠিকভাবে বলা হয়। আরও দুটো কথা বলতেন, কারোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না, কারোর নিন্দা করবে না।

ইটিভি ভারত: শ্যামল মিত্রর পছন্দের গায়ক গায়িকা কারা ছিলেন?

সৈকত: বাবা মাঝে মাঝে যাঁদের কথা বলতেন আমি তাঁদের কথাই বলতে পারব। পঙ্কজ মল্লিকের গান বাবার খুব ভালো লাগত। বলতেন ওরকম 'মীড়' আর কেউ এই ভূ ভারতে করতে পারবে না। বলতেন, হেমন্ত দা যেটাতে হাত দিয়েছেন সেটাই সোনা হয়ে গেছে। মেহেদি হাসানের গানের খুব ভক্ত ছিলেন বাবা। 1972-এ যখন বঙ্গবন্ধু বাবাকে ডাকলেন বাবা গিয়েছিলেন। ওখান থেকে নিয়ে আসেন মেহেদি হাসানের গানের রেকর্ড। ওঁর গান শুনতেন আর চোখের জল ফেলতেন বাবা। বলতেন, এরকম গান কোনওদিন গাইতে পারব না। যে তিনটে গানের রেকর্ড বাবা এনেছিলেন সেগুলির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করেন 'জানি না আজ যে আপন...', 'সবকিছু বদলে গেছে, এই তুমি তো সেই তুমি নও...', 'এ তো পুতুল খেলা নয়...'-এর মতো তিনটি জনপ্রিয় গান।

ওই সময়ে ওঁরা কেউ কারো গান কপি করতেন না। অনুপ্রেরণা থেকেই বানাতেন। সলিল চৌধুরী, লতা মঙ্গেশকর, শচীন দেব বর্মন এবং আশা ভোঁসলের কথা বাবা খুব বলতেন। মুম্বইতে গেলে শচীন কর্তার বাড়িতে যেতেন, থাকতেন। সেই সময়ে সলিল চৌধুরীর গণনাট্যের দল বেশ জনপ্রিয়। স্বাধীনতা আগে এই 'আইপিটি এ' দল একটা বড় ব্যাপার ছিল। 12-15 জনের একটা দল ছিল। আমাদের কাঁচড়াপাড়ার বাড়িতে তাঁদের যাতায়াত ছিল। খাওয়াদাওয়া, ঢালাও বিছানা করে ঘুম- রঙিন ছিল নাকি সেই সব দিন। কত গান তৈরি হয়েছে তখন। 'কোনও এক গাঁয়ের বধূ' গানের সেই লাইন 'ডাকিনী যোগিনী এল কত নাগিনী এল পিশাচেরা এল রে' আমাদের বাড়িতেই তৈরি হয়।

বাবা আশা ভোঁসলেকে দিয়ে অনেক গান গাইয়েছেন। ওঁর গায়কী বাবার পছন্দ ছিল। উনি আমাদের বাড়িতেও এসেছেন। আমার বৌভাতেও এসেছিলেন। বাবা পছন্দ করতেন মুকেশ জি'র উচ্চারণ। নচিকেতা ঘোষ মারা যাওয়ার পর বাবা আফসোস করে বলেছিলেন, সিনেমার গানের 60 শতাংশ ক্ষতি হয়ে গেল। উনি যেভাবে সিচুয়েশনাল গান বানাতেন সেরকম আর কেউ পারেননি। বাবা মদন মোহনের সুর ভালোবাসতেন। কোনও গানে মহম্মদ রফির ধরা এবং ছাড়া বাবার পছন্দ ছিল খুব। আমি যখন গানবাজনা শুরুও করিনি তখনই আমাকে বলেছিলেন যদি কখনও গানবাজনা করি তা হলে যেন মহম্মদ রফিকে ফলো করি। বাবার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল সুধীন দাশগুপ্তর সঙ্গে।

ইটিভি ভারত: আর কিশোর কুমার? উনি তো 'অমানুষ' ছবির গানে সাড়া ফেলেছিলেন।

সৈকত: উনি তো প্রথমে 'কী আশায় বাঁধি খেলাঘর' গানটা গাইতেই চাননি। প্রথমে রাজি ছিলেন। পরে রুমা গুহ ঠাকুরতা গানটা কিশোর কুমারের কাছ থেকে গানটার কথা শুনে ওনাকে বলেছিলেন, খবরদার তুমি এই গান গেও না। শ্যামল দা'র কণ্ঠে আমরা রেডিওতে শুনেছি এই গান। ওই ইমোশন নিয়ে তুমি গাইতে পারবে না। তুমি ফ্ল্যাট গাও। বাংলার শ্রোতা তোমাকে ছ্যা ছ্যা করবে। কিশোর কুমার বাবাকে ফোন করে বলেন, আমি গাইব না এই গান। রুমা বলেছে আমার গলায় মানাবে না। বাবা অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়ে গাওয়ান ওনাকে দিয়ে। আর গানটাও হিট হয়। বলা ভালো, ওই গানের মাধ্যমেই কিশোর কুমারের বাংলা সিনেমার গানে বিগ এন্ট্রি হয়। তার আগে উনি বাংলা সিনেমার গানে সেভাবে সাড়া ফেলেননি।

ইটিভি ভারত: সেই সময় নতুনদের নিয়ে কী বলতেন?

সৈকত: নতুনদের উৎসাহ দিতেন। খোঁজ নিতেন কে তখন ভালো গাইছেন। আর যিনি সেই খবরটা দিতেন তাঁর প্রতিও ছিল অগাধ বিশ্বাস ৷ যিনি ভালো গাইছেন শুনতেন তাঁকে ডেকে এনে গান তুলিয়ে গাওয়াতেন। এভাবেই কত কালজয়ী গান তৈরি হতে দেখেছি তখন। একটা গান লিখতে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার সবথেকে কম সময় নিতেন। সুর করতেও সময় লাগত না বাবা ও তাঁর সমসাময়িকদের। হাঁটতে চলতে সুর ভেজে ফেলতেন। যেন কোনও ব্যাপারই না। বাবা তো সুখটান দিতে দিতেও গান রেকর্ড করেছেন। বাবা ভীষণ ধূমপান করতেন ৷

ইটিভি ভারত: লম্বা সঙ্গীত জীবনে উনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন কখনও?

সৈকত: বাবা মুম্বইতে তখন শক্তি সামন্তর পরিচালনায় 'দেয়ানেয়া'র হিন্দি রিমেক 'অনুরোধ'-এর জন্য গান বানাচ্ছেন। পরিচালক শক্তি সামন্ত এসে বাবাকে আরও তিনটে ছবির গানের সুর করতে বলেন। বাবা বলেন, ধুর মশাই, একসঙ্গে করব কীভাবে? একে একে করব। তখন উনি বাবাকে 'দেয়ানেয়া'র সুর করা ছেড়ে দিতে বলেন। 'দেয়ানেয়া' তৈরি হয় বাবার নিজের জীবনের গল্প নিয়ে। ওটা নিয়ে বাবার অনেক বড় সেন্টিমেন্ট ছিল। বাবা বলেছিলেন, আমি তা হলে কোনওটাই করব না। এগুলো তখন মুম্বইতে চলতই। এখন এখানে হয়। এটাকে ষড়যন্ত্র বলব না তো কী?

Last Updated : Jan 14, 2025, 3:25 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.