চুঁচুড়া, 23 ফ্রেব্রুরারি: অভিনেত্রী দিয়ে তৃণমূল নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইলেও কোনও লাভ হবে না । হুগলি লোকসভায় মিমি চক্রবর্তী বা অন্য যে কেউ প্রার্থী হোন না কেন, তাঁদের হুগলি থেকে খালি হাতেই ফিরতে হবে ৷ এমনই দাবি হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের । তাঁর আরও দাবি, যে মুসলিমদের সঙ্গে তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে শাসকদল, তারাও পাশে থাকবে না মুখ্যমন্ত্রীর । ইটিভি ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা জানানোর পাশাপাশি তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র সমালোচনা করলেন বিজেপি নেত্রী ৷
কিছুদিনের মধ্যে দেশে 2024 সালের লোকসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে । পশ্চিমবঙ্গে 2019 সালের লোকসভা ভোটে ভালো ফল করেছিল বিজেপি । তার মধ্যে হুগলি লোকসভায় বিজেপির প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় 73,362 হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ।এ বছরের বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা না হলেও এটা মোটের উপর ঠিকই আছে যে, হুগলি লোকসভায় প্রার্থী হচ্ছেন লকেট । সেই অনুযায়ী এখন থেকেই সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন তিনি । জোর কদমে চলছে প্রচারের কাজ ৷ একইসঙ্গে চলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ ৷ ইটিভি ভারতের নানা প্রশ্ন তিনি কীভাবে সামলালেন, দেখে নিন ৷
ইটিভি ভারত: তৃণমূলের বিভিন্ন মহল থেকে শোনা যাচ্ছে, হুগলি লোকসভায় প্রার্থী হতে পারেন মিমি চক্রবর্তী । সেই জায়গা থেকে মিমি বা অন্য কোনও অভিনেত্রী হুগলি থেকে প্রার্থী হলে লড়াই কি কঠিন হবে ?
লকেট: রাজনৈতিকভাবে লড়াইয়ের জায়গাটা শক্ত হলেই তৃণমূল নানা রকম অভিনেত্রীদের নিয়ে এসে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় । তাঁদেরকে দেখেও খুব খারাপ লাগে, একদিনও তাঁরা পার্লামেন্টে যান না । যাঁর কথা উঠে আসছে (মিমি চক্রবর্তী) তিনি খুবই ভালো অভিনেত্রী । আমি কাজ করছি তাঁর সঙ্গে । কিন্তু তাঁরা রাজনীতিতে শোভা পান না । যে-ই সাংসদ হোন না কেন, তাঁকে মানুষের সেবা করতে হবে । কখনওই এ রকম হয় না আমি সামনে দাঁড়ালাম জিতে গেলাম । আর পিছন থেকে সবাই কাজ করছে । আমি কিছুই জানি না, এটা রাজনীতিতে হওয়া উচিত না । যে কাজটা করছো তাকে একশো শতাংশ দিতে হবে মানুষকে । তৃণমূল যেখানে যাঁকে প্রার্থী করুক না কেন, কেউই তৃণমূলকে আর চাইছে না । যাঁকেই হুগলির লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী করুক, তিনি যেন ভেবেচিন্তে হুগলিতে আসেন । তিনি বুঝতে পারবেন যে, হুগলিতে এলে খালি হাতেই তাঁকে বাড়ি ফিরতে হবে ।
ইটিভি ভারত: তৃণমূলের একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রী সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন ।
লকেট: তাঁদের স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই ৷ কিন্তু যাঁরা যে পার্টিই করুন, যাঁরা কাজ না করে এই রাজনীতিটাকে দ্বিতীয় অপশন হিসেবে ধরে নিয়েছেন, এটা ঠিক নয় । পার্লামেন্টে বছরে একবার কি দুবার গিয়ে সেখানে ঢুকলাম না । আমার কাজ আমার পিছনের লোক করে দিল । লোকসভার জনপ্রতিনিধিদের মানুষের কাজ করা উচিত এবং প্রত্যেকের সমস্যার কথা শোনা উচিত ৷
সন্দেশখালির পর তৃণমূলের হয়ে সকলেই প্রার্থী হতে ভয় পাবেন । সন্দেশখালির ঘটনা সকলকেই নাড়িয়ে দিয়েছে । তৃণমূল কোনও ব্যক্তিগত পার্টি না ৷ তৃণমূলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেন, সব জায়গায় একাই প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি নিজেই বলেন, তাঁকে দেখেই মানুষ ভোট দেবে । আজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মহিলা থেকে যুবসমাজ রিজেক্ট করে দিয়েছে । তাঁকে কেউই চাইছে না ৷"
ইটিভি ভারত: হুগলি লোকসভায় অনেকটা অংশে সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে । মুসলিম ভোট কি ফ্যাক্টর হবে ?
লকেট: যাঁরা সত্যিকারের উন্নয়ন চান, তাঁরা এই নির্বাচনে কখনওই বাধা হতে পারেন না । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাতারে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন । তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । প্রধানমন্ত্রী নিজেও জাতির ভিত্তিতে দূরে করে রাখেননি । আমরাও এটাকে সমর্থন করি । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুষ্টিকরণের রাজনীতি করেন । জাতির ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতি করে সেই ভোটটাকে নিজের দিকে টানতে চাইছেন । এইজন্যেই গন্ডগোলটা বাঁধছে । হিন্দুদের আলাদা করে, মুসলিমদের তুষ্টিকরণ রাজনীতি করছেন । উনি তোষামোদ করে 30 শতাংশ ভোটটা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন ।মুখ্যমন্ত্রী মনে করেছেন, তাহলেই কেল্লাফতে । মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরাও একসঙ্গে হয়েছেন । এ বারের ভোটে মুসলিমরাও মমতার সঙ্গে থাকবেন না ৷"
ইটিভি ভারত: হুগলির সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, লোকসভা এলাকায় তাঁকে দেখা যায় না । সে নিয়ে দলের অন্দরে কর্মী ও শাসকদলের নানা অভিযোগ রয়েছে ।
লকেট: দলের মধ্যে কর্মীদের নানা দাবি থাকে, সেটা স্বাভাবিক । সেটা সবসময় পূরণ করা সম্ভব হয় না । জনপ্রতিনিধির অনেক দায়িত্ব থাকে ।আমাদের কাছে সবাই এক । অবশ্যই আমাদের কাছে আমাদের কর্মীরা রত্ন । যে যেরকমই বলুন না কেন, ক্ষণিকের রাগ সেটা মিটেও যায় । সকলেই আমাদের পরিবারের মধ্যে । আমি চেষ্টা করি সকলকে নিয়ে একসঙ্গে চলার ৷"
ইটিভি ভারত: লকেট চট্টোপাধ্যায় বিজেপির অন্যতম মুখ এই রাজ্যের ক্ষেত্রে । তাঁর মতে, লোকসভা নির্বাচনে এ বারের ফল কী হতে চলেছে ?
লকেট: রাজ্যের অবস্থা এ বারে খুব খারাপ হবে তৃণমূলের ক্ষেত্রে । সন্দেশখালির ঘটনায় বেছে বেছে মহিলাদের উপর অত্যাচার এটা একটা বড় বিষয় । তৃণমূলের দুর্নীতি তো আছেই ৷ গোটা রাজ্যে দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে । যদি ঠিকমতো ভোট হয়, তৃণমূলের এই গুন্ডা, মস্তান, বাহিনীদের যদি জেলের মধ্যে পোরা যায়, তাহলে আজকের তৃণমূলের আসন সংখ্যার প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে । রাজ্য বিজেপির টার্গেট 35টি আসনের চেয়েও বেশি হবে । আর হুগলি জেলাতেও তিনটে লোকসভাতেই বিজেপি জয়ী হবে । বিশেষ করে শ্রীরামপুর লোকসভায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন নেগেটিভ মানুষ । যেভাবে মহিলাদের সম্বন্ধে ও উপরাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে যেভাবে কথা বলেছেন, যেভাবে তাঁর গুণ প্রকাশ করেছেন, সেটা কখনওই মানুষ ভালো চোখে দেখবেন না । আরামবাগের ক্ষেত্রেও আমাদের সংগঠন যথেষ্টই ভালোভাবে কাজ করছে । আরামবাগেও জয় নিশ্চিত । গোটা হুগলিতেই বিজেপি জয় পাবে ৷"
আরও পড়ুন: