কলকাতা, 1 মার্চ: রাজনৈতিক পদ থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করলেন কুণাল ঘোষ ৷ এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ৷ বৃহস্পতিবার রাতে আকস্মিকভাবে সোশাল মিডিয়ায় তাঁর রাজনৈতিক পদ সরিয়ে নেন কুণাল ঘোষ । তখন থেকেই দলের অন্দরে তাঁর এই অবস্থান নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল । কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ মুখ না খোলায় বিষয়টি স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল না । অবশেষে কুণাল ঘোষ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিলেন যে, দলে থাকলেও এই মুহূর্ত থেকে আর দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব তিনি পালন করতে পারছেন না । দলে থাকছেন তিনি । তবে কোনও পদে থাকছেন না । এখানেই শেষ নয়, তাঁকে দেওয়া সরকারি নিরাপত্তাও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি ।
পাশাপাশি তীব্র আক্রমণ করলেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। সুদীপ প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, " উনি এমন আচরণ করেন যেন মনে হয় তিনি আগে বিজেপির নেতা তারপর তৃণমূলের সাংসদ। তিনি নিজেও একজন শেখ শাহজাহান। বিজেপির আমলে একাধিক দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে বলে সুদীপ তাদের প্রতি নরম অবস্থান নেন। "
তবে তাঁকে নিয়ে যাতে দলবদলের কোনও রটনা না হয়, তা নিশ্চিত করে টুইটে কুণাল লিখেছেন, "আমি তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র পদে থাকতে চাইছি না । সিস্টেমে আমি মিসফিট । আমার পক্ষে কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না । আমি দলের সৈনিক হিসেবেই থাকব । দয়া করে দলবদলের রটনা বরদাস্ত করবেন না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সেনাপতি, তৃণমূল কংগ্রেস আমার দল ।"
এখানেই প্রশ্ন, হঠাৎ করে কী এমন ঘটল, যার জন্য দলীয় সব পদ থেকে সরে গেলেন কুণাল ঘোষ । যিনি রোজ নিয়ম করে সরকার ও দলের মুখপাত্র হিসেবে সংবাদমাধ্যম সামলাতেন, কী এমন হল যার কারণে তাঁকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল ।
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কুণাল ঘোষ এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত দেননি । তবে ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে ক্ষোভের কারণ হিসেবে যতটুকু জানা যাচ্ছে, কুণাল উত্তর কলকাতার ছেলে এবং সেখানে থেকেই তাঁর রাজনীতিতে উত্থান ৷ তবে ব্রিগেডকে কেন্দ্র করে উত্তর কলকাতার সাংগঠনিক বৈঠকে ডাক পাননি তিনি । গতকাল এই বৈঠক হয়েছে, উত্তর কলকাতা জেলাতে থাকলেও সাংগঠনিক বৈঠকে তিনি ডাক পাননি, সেটাই তাঁর ক্ষোভের অন্যতম কারণ ।
2021-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে কুণাল ঘোষের দায়িত্বেই পূর্ব মেদিনীপুর তথা নন্দীগ্রামে সাংগঠনিক জমি উদ্ধারে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস । গত দু'বছর ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি । কিন্তু দেখা গিয়েছে এই পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক এবং কাঁথি সাংগঠনিক জেলা নিয়ে বৈঠকেও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি । পরপর দুটি এমন ঘটনায় মনে করা হচ্ছে ক্ষুব্ধ কুণাল ঘোষ । আর সেই জায়গা থেকেই তিনি সাংগঠনিক সমস্ত দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । এমনকি তাঁকে যে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, সেটিও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন বলে খবর । লোকসভা নির্বাচনের আগে এহেন ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । কুণাল ঘোষের পদ থেকে সরে যাওয়ার কথা জানানোর পর, দলের তরফ থেকে আদৌ কিছু বলা হয় কি না সেদিকে সকলের চোখ রয়েছে ।
আরও পড়ুন: