কলকাতা, 28 ফেব্রুয়ারি: তিনপাতার পত্রাঘাতে কংগ্রেস ছাড়লেন আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী ৷ যে চিঠির পরতে পরতে শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি ৷ সঙ্গে নাম না করে সরাসরি প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি তথা শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধিকে নিশানা করলেন কৌস্তভ ৷ অভিযোগ তুললেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জেতার বদলে, এক ব্যক্তি বিশেষের ইমেজ-বিল্ডিংয়ে বেশি ব্যস্ত কংগ্রেস ৷ সঙ্গে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সদা-নরম মনোভাবের বিরুদ্ধেও সরব হলেন তিনি ৷
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গুলাম আহমেদ মীরকে উদ্দেশ্য করে তিনপাতার ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন কৌস্তভ ৷ যার শুরুটা তিনি করেছেন, 14 বছর বয়স থেকে হাফ-প্যান্টে কংগ্রেসের পার্টি অফিসে যাওয়ার সময় থেকে ৷ সেখান থেকে কংগ্রেস সেবাদল, ছাত্র পরিষদ ও যুব কংগ্রেস হয়ে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য এবং মিডিয়া প্যানেলিস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ৷
কৌস্তভের ইস্তফাপত্রের শুরুতেই উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পর, তাঁর জেলযাত্রা ৷ যেখানে অধীর চৌধুরীর মৃত কন্যাকে নিয়ে মমতার মন্তব্যের সমালোচনা করায় মাঝরাতে তাঁকে কলকাতা পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন কৌস্তভ ৷ তাঁর বক্তব্য, এত কিছুর পরেও, তিনি তৃণমূলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকেননি ৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে সরব হয়েছেন ৷ আর সেখানেই কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চুপ থেকেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ৷
কৌস্তভের আক্ষেপ 46 বছর একটি রাজ্যে ক্ষমতায় না থাকা সত্ত্বেও, প্রত্যেক নেতা-কর্মী সততার সঙ্গে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছেন ৷ কিন্তু তারপরেও যখন এই রাজ্যে তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে কংগ্রেসকে নিঃশেষ করে দিয়েছে, তখন শীর্ষনেতৃত্ব চুপ করে থেকেছে ৷ তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনওরকম প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের পথে হাঁটেনি দিল্লির নেতারা ৷ একপ্রকার শীর্ষনেতৃত্বের নীরবতার কারণেই রাজ্যে কংগ্রেসের সংগঠন ভেঙে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ৷
কৌস্তভের এই পত্রাঘাতে নাম না-করেও বিজেপির 'পরিবারতন্ত্র' সুর শোনা গেল ৷ তিনি বলেন, "যখন নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন কংগ্রেস পার্টির লক্ষ্য নির্বাচনে জেতা নয় ৷ বরং, একজন ব্যক্তি বিশেষের ইমেজ-বিল্ডিংয়ে তারা বেশি ব্যস্ত ৷" নাম না-করেই রাহুল গান্ধি ও তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রাকে নিশানা করলেন কৌস্তভ ৷
প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতি বি-মাতৃসুলভ আচরণের আরও একটি অভিযোগ করেছেন কৌস্তভ বাগচী ৷ আর তা হল, আইনী সাহায্য ৷ রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক দুর্নীতি অভিযোগে প্রদেশ নেতারা সরব হচ্ছেন ৷ সেখানে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরের নেতা তথা দুঁদে আইনজীবীরা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ মূলত তাঁর নিশানায় ছিলেন, পি চিদম্বরম, অভিষেক মুনু সিংভি এবং কপিল সিবলরা ৷
আরও পড়ুন: