নয়াদিল্লি, 26 জুলাই: বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে বিজেপি ৷ এই অভিযোগ তুলে শুক্রবার লোকসভায় সরব হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের বিরুদ্ধে তিনি সরব হন ৷ এর জেরে সাময়িক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় সংসদের নিম্নকক্ষে ৷ তার জেরে কিছুক্ষণের জন্য মুলতুবি করতে হয় লোকসভার অধিবেশন ৷
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন সুকান্ত মজুমদার ৷ তিনি দু’টি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ তার মধ্যে একটি উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন বিষয়ক ৷ সেই সূত্রে তিনি উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৷ পরে বিষয়টি নিজেই জানান সুকান্ত ৷
এর পরই এই নিয়ে হইচই শুরু হয় ৷ অভিযোগ ওঠে যে বাংলাকে ভাগ করার কথা বলছেন সুকান্ত ৷ স্বাভাবিকভাবেই সরব হয় তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এর মধ্যে বৃহস্পতিবার লোকসভায় নতুন একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব দেন ঝাড়খণ্ড থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ৷ সেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পশ্চিমবঙ্গের দু’টি জেলা মুর্শিদাবাদ ও মালদাকে রাখার প্রস্তাব দেন তিনি ৷
ফলে এই নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়তে শুরু করে ৷ তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ায় ৷ এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার লোকসভায় অধিবেশন শুরু হতেই এই নিয়ে হইচই শুরু করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ প্রশ্নোত্তর পর্বেই তিনি এই বিষয়টি উত্থাপন করতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা তাঁকে সেই অনুমতি দেননি ৷ তখন কল্যাণ সুকান্তর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন ৷
যদিও প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতে থাকে ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি শান্ত হয় ৷ কিন্তু বেলা 12টায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হতেই ফের এই নিয়ে বলতে চান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ নিজের আসনে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, ‘‘সুকান্ত মজুমদার বলেছেন যে উত্তরবঙ্গকে ভাগ করে দেওয়া হবে ৷’’
তাঁর কথা শুনে অধ্যক্ষ জানতে চান, ‘‘কোথায় বলেছেন ? লোকসভায় বলেননি তো ?’’ তখন কল্যাণ উত্তরে জানান যে সুকান্ত মজুমদার এই কথা লোকসভার অন্দরে বলেননি ৷ বরং বাইরে বলেছেন ৷ এর পর অধ্যক্ষ জানিয়ে দেন সংসদের বাইরে বলা কোনও কথা নিয়ে অধিবেশনে আলোচনা হবে না ৷ তখন কল্যাণ নিশিকান্ত দুবের প্রসঙ্গ তোলেন ৷ কিন্তু তার পরও ওম বিড়লা এই নিয়ে আলোচনার দাবি খারিজ করে দেন ৷
তখন কল্যাণ এই নিয়ে পালটা সরব হন ৷ এই পরিস্থিতিতে কর্ণাটক থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা সাংসদ পিসি মোহনকে বলতে নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ ৷ মোহন কর্ণাটকের বাল্মিকী কর্পোরেশন দুর্নীতির প্রসঙ্গ তোলেন ৷ দাবি করেন, এই দুর্নীতিতে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার একজন মন্ত্রী জড়িত ৷ এই নিয়ে পালটা সরব হয় কংগ্রেস ৷ ট্রেজারি বেঞ্চ থেকেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই নিয়ে নানা টিপ্পনি করা হয় ৷
অধ্যক্ষ অবশ্য় পিসি মোহনকেও এই নিয়ে আর কিছু বলতে দিতে রাজি হননি ৷ সেই সময় সংসদের নিম্নকক্ষে কার্যত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন ৷ কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্য়ে তর্কাতর্কি চলতে থাকে ৷ তখন বেলা সাড়ে 12টা পর্যন্ত সভা মুলতুবি করে দেন অধিবেশন ৷