মালদা, 31 জানুয়ারি: রাহুল গান্ধির গাড়ি কাচ ভাঙা নিয়ে বুধবার সরগরম বাংলা তথা দেশের রাজনীতি ৷ একদিকে অধীর চৌধুরী যখন এই ঘটনা নিয়ে বাংলার সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন ৷ ঠিক সেই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের জাতীয়স্তরের নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাতের গলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর শোনা গিয়েছে ৷ মমতার মতো তিনিও জানিয়েছেন যে এই ঘটনা বিহারে ঘটেছে ৷ এই পরিস্থিতি কংগ্রেসে রাহুল গান্ধির ঘনিষ্ঠ শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত জয়রাম রমেশ জানান, এই ঘটনায় বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’য় কোনও প্রভাব ফেলবে না ৷
মালদার রতুয়ার দেবীপুর লাইব্রেরি ময়দানে সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেসের অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, “মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, কোনও রাজ্যেই কংগ্রেসের সরকার নেই ৷ এসব জায়গায় ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে ৷ আমাদের এসব সমস্যার মুখে পড়তে হয় ৷ জলপাইগুড়িতে আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে, আজ গাড়ির কাচ ভাঙা হয়েছে ৷ এসব হতেই পারে ৷’’
এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘এসবের জন্য ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা থমকাবে না ৷ এর জন্য ইন্ডিয়া জোট কমজোরও হবে না ৷ যারা এই জোটকে কমজোর করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের জানাতে চাই, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বীকার করেছেন, ইন্ডিয়া জোট শক্তিশালী করা তাঁরও দায়িত্ব ৷ আমাদেরও সেই দায়িত্ব রয়েছে ৷ তাই এসব ঘটনায় জোটে কোনও প্রভাব পড়বে না ৷”
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই ‘ইন্ডিয়া’ জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন নীতিশ কুমার ৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলায় একা লড়াই করার কথা জানিয়েছেন ৷ তার পরও এ দিন জয়রামের গলায় মমতার সম্বন্ধে নরম সুর শোনা গেল ৷ জয়রাম রমেশ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ট্রেনিং কংগ্রেসেই হয়েছে ৷ আমরা মমতাদিদির কাছ থেকে লড়াই করার প্রেরণা পাই ৷ সোনিয়াজি, রাহুলজি, খাড়গেজি-সহ দলের সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান করেন ৷ মমতাজির সঙ্গে সরাসরি কথাও বলেন খাড়গেজি ৷ মমতাজি জানিয়েছেন, এই রাজ্যের 42টি আসনে তাঁরা লড়বেন ৷ আমার মনে হয়, আমরা যখন একটি জোটে রয়েছি, তখন আসন নিয়ে লেনদেন চলবেই ৷ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি ফর্মুলা বের হলেই কোনও জোট সফল হবে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘জোটে কোনও একতরফা ফর্মুলা চলে না ৷ কোনও দলই নিজেদের ফর্মুলা জোর করে চাপিয়ে দিতে পারে না ৷ যতক্ষণ না সব দল মিলে আলোচনা করে একটি ফর্মুলা বের না করবে, ততক্ষণ কিছু হবে না ৷ আর আসন সমাঝোতা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয় ৷ প্রতিটি আসন নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন ৷ আমাদের যেমন কিছু আসন নিতে হবে, কিছু আসন ছাড়তেও হবে ৷’’
এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা জানি, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় তৃণমূলের সরকার ৷ এই রাজ্যে তাদের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ৷ ইন্ডিয়া জোটের নির্মাতাদের মধ্যে যেমন মল্লিকার্জুন খাড়গে রয়েছেন, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রয়েছেন ৷ একসময় নীতিশ কুমারও ছিলেন ৷ এখন তিনি গিরগিটির মতো পালটি খেয়েছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে হারানো ৷ কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সারা দেশে বিজেপিকে হারাতে চায় ৷’’
এখানেই না থেমে জোট গঠনে জাতীয় স্বার্থের কথা তিনি তুলে ধরেন ৷ জয়রাম বলেন, ‘‘জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে ইন্ডিয়া জোট গঠিত হয়েছে ৷ এই জোট কোনও রাজ্য সরকার কিংবা বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে তৈরি হয়নি ৷ এই জোটের সদস্য দলগুলির মধ্যে মতভেদ হতেই থাকে ৷ কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে এই জোট লোকসভা নির্বাচনের জন্যই তৈরি করা হয়েছে ৷”
জয়রাম রমেশ আরও বলেন, “রাহুলজি জানিয়েছেন, আমাদের পাঁচটি ন্যায় রয়েছে ৷ এই পাঁচটি ন্যায়ের দাবি নিয়েই ভারতজোড়ো ন্যায় যাত্রা বের করেছেন তিনি ৷ এই ন্যায়ের মধ্যে আমরা যুবাদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি ভাবছি ৷ তাঁদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে ৷ সেই আইনের মাধ্যমে আমরা তাঁদের অবশ্যই সামাজিক সুরক্ষা দেব ৷”
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে কানহাইয়া কুমারও ছিলেন ৷ তবে কানহাইয়া সেভাবে কোনও মন্তব্য করেননি ৷ অন্যদিকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মালদায় অন্তত 30 জন কংগ্রেস কর্মীকে খুনের যে অভিযোগ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব বারবার দাবি করে, সেই প্রশ্নেও নীরব ছিলেন জয়রামরা ৷
আরও পড়ুন: