মালদা, 14 মার্চ: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদানকে ইতিমধ্যেই লোকসভা ভোটের প্রচারে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ বিচারপতি থাকাকালীন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া রায় রাজনৈতিক পদক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে অভিযোগ করা হচ্ছে ৷ এ দিকে, সেই একই অভিযোগের সুর শোনা যাচ্ছে উত্তর মালদার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ৷ প্রাক্তন এই আইপিএস অফিসার ইস্তফা দেওয়ার পরদিনই তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণ করা তৃণমূল ৷ তাহলে তিনিও কি এতদিন কর্মক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করেছেন ? এই প্রশ্নের জবাব শুনতে সরাসরি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছে ইটিভি ভারত ৷
এখনও লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়নি ৷ তৃণমূল ছাড়া অন্য দলগুলি রাজ্যের 42টি আসনে নিজেদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণাও করেনি ৷ তবে সবকিছু ঠিক থাকলে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্রে এ বার বিজেপি প্রার্থী করতে পারে কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ৷ স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা তাঁর নামে দেওয়াল লিখনও শুরু করে দিয়েছেন ৷ আর শুরু থেকেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির উদ্দেশে একের পর এক বাণ নিক্ষেপ করে চলেছেন তৃণমূলের উঁচু থেকে নিচু সারির নেতা-নেত্রীরা ৷ তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে বিচারপতির চেয়ারটি ছিল নাটকের রঙ্গমঞ্চ ৷ বিভিন্ন মামলায় তাঁর রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলেও মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের অনেকে ৷
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম এখনও প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেনি পদ্ম শিবির ৷ কিন্তু গত শনিবার রাতে কর্মক্ষেত্র থেকে ইস্তফা দেওয়া প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পরদিনই উত্তর মালদার তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সোমবার রাতে মালদা চলে এসেছেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার প্রসূন ৷ মঙ্গলবার থেকে প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন তিনি ৷ এ নিয়ে বিজেপির তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বটে, তবে আমজনতার মধ্যে কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ সবার বক্তব্য, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া রায় যদি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে থাকে, তবে শনিবার পর্যন্ত কর্মরত প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় যে তৃণমূলের স্বার্থে পুলিশি তদন্ত অথবা মামলা পরিচালিত করেননি, বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে থাকা তথ্য প্রমাণ লোপাট করেননি, তার গ্যারান্টি কোথায় ?
এ সব বিষয় নিয়ে কথা বলতেই বুধবার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হয় ইটিভি ভারত ৷ প্রাক্তন আইপিএস অফিসার বলেন, "শনিবার রাতে আমি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছি ৷ তমলুক নিয়ে আমি কিছু বলব না ৷ তবে 2017 সালে এই জেলায় বিধ্বংসী বন্যা হয়েছিল ৷ সেই সময় এই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ই নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষকে বাঁচিয়েছিল ৷ সে তখন কে কোন দল করে দেখেনি ৷ করোনার সময় এই মালদাতেই কাজ করেছি ৷ তখনও কে কোন দল করে তা না দেখে আমরা কাজ করেছি ৷ তখন আমি পুলিশে ছিলাম ৷ পুলিশে থাকাকালীন অনেক নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয় ৷ তখন কিন্তু মানুষের রাজনৈতিক রং দেখা হয়নি ৷ এখন এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে ৷ আসলে যখন এভাবে কোনও ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়, তার পিছনে ভয় কাজ করে ৷ এ সব ভয়ের চিহ্ন ৷ আমি প্রার্থী হওয়ায় অনেক জায়গায় ভয় শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ তাই এই আক্রমণ ৷ এ নিয়ে আর কিছু বলা সম্ভব নয় ৷"
প্রচারের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "অন্যান্য পেশার থেকে রাজনীতি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে থেকে মানুষের অনেক বেশি সেবা করা যায় ৷ এই ক্ষেত্রে এলেই একজন মানুষের জন্ম খানিকটা সার্থক হতে পারে ৷ উত্তর মালদায় কাজের জন্য সামান্য সময় পেয়েছি ৷ জেলা থেকে নিচুস্তরের তৃণমূলের সংগঠন সবসময় আমাকে সাহায্য করছে ৷ দলের এই শক্তিশালী টিমওয়ার্কের সঙ্গে যোগ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অসংখ্য জনমুখী প্রকল্প ৷ আমরা তৃণমূলের সৈনিক ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে আমাদের নির্দেশ দেন, সেভাবে কাজ করি ৷ এই শক্তিশালী টিমওয়ার্কের জন্যই এ বার আমরা রাজ্যের 42টি আসনেই জিতব ৷ আমি রাজনীতিতে ব্যক্তি আক্রমণে বিশ্বাসী নই ৷ কিন্তু উত্তর মালদার সাংসদ গত পাঁচ বছরে কী কাজ করেছেন, তিনি নিজেই বলতে পারছেন না ৷ দল হিসাবেও বিজেপি বাংলার সঙ্গে বঞ্চনা করছে ৷ এই দুটি বিষয়ই আমাদের কাছে অ্যাডভান্টেজ ৷ মানুষ এ বার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, এ বার তাঁরা তৃণমূলকে জেতাবেন ৷ "
আরও পড়ুন: