হুগলি, 15 মে: সিঙ্গুর ইস্যুকে হাতিয়ার করে বাম দুর্গ হুগলিতে তৃণমূলের ঝান্ডা তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ 2009 লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রত্না দে নাগকে প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূলের টিকিটে ৷ আর প্রথমবারেই পালাবদলের ঝড়ে প্রতিপক্ষ রূপচাঁদ পালকে 81 হাজার 523 ভোটে হারিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, 2019 লোকসভা নির্বাচনে মোদি-ঝড় ও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে কার্যত ধুলিসাৎ হয়ে যান দু’বারের সাংসদ রত্না দে নাগ ৷ 2024 লোকসভা নির্বাচনেও বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি ৷ আর তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
টলিপাড়ার প্রাক্তন ও বর্তমান অভিনেত্রীদের কট্টরে, লাইম-লাইটের বাইরে সিপিআইএমের মনোদীপ ঘোষ ৷ জনপ্রিয় না-হলেও, রাজনীতির আঙিনায় তিনি বেশ পোড়খাওয়া ৷ তবে, উন্মাদনায় রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন ৷ হুগলি লোকসভার এই আসনের কুর্সিতে শেষ পর্যন্ত কে বসবেন ? সেই নিয়েই ইটিভি ভারতের পুনঃমূল্যায়ন ৷
রাজনৈতিক পালা বদলে 2009 সালে তৃণমূলের প্রার্থী রত্না দে নাগ জয়ী হন সিপিআইএমের রূপচাঁদ পালের বিরুদ্ধে ৷ পরপর দু’বারের সাংসদ হলেও, 2019 সালে জয় অব্যাহত রাখতে পারেনি রত্না ৷ তাঁকে 73 হাজার 362 ভোটে হারিয়ে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষণে মোদি-ঝড় ও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রত্না দে নাগের হারের মূল কারণ ছিল ৷ তবে, 2021 বিধানসভায় গত লোকসভার কোনও প্রভাবই পড়েনি ৷ সিঙ্গুর, ধনেখালি, চন্দননগর, চুঁচুড়া, আদিসপ্তগ্রাম, পান্ডুয়া ও বলাগড় বিধানসভা, সবক’টি তৃণমূলের দখলে যায় ৷
এই পরাজয়ের পুরো দায় গিয়ে পড়েছিল সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ৷ স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, সাংসদ হওয়ার পর লকেট চট্টোপাধ্যায়কে মানুষজন প্রয়োজনে কাছে পাননি ৷ বিশেষত, 2020-2021 সালে করোনা অতিমারির ভয়াবহ প্রকোপের সময় সাংসদকে হুগলির মানুষের পাশে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ৷ এই অভিযোগ তৃণমূল নয়, এসেছে স্বয়ং বিজেপির মাঝারি ও নিচুতলার নেতা কর্মীদের থেকে ৷ তারপরেও, অবশ্য এই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব লকেটে আস্থা রেখেছে ৷
শীর্ষনেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে খুব একটা খুশি নন হুগলি জেলা বিজেপির নেতারা ৷ চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাঁদের মধ্যে ৷ তবে, দ্বিতীয়বার প্রার্থী হয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে বেশ সক্রিয় দেখা গিয়েছে ৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেখানেই কোনও অভিযোগ পাচ্ছেন, সটান গিয়ে হাজির হচ্ছেন তিনি ৷ আন্দোলন, প্রতিবাদে গর্জে উঠছেন ৷ লকেটের মতে নরেন্দ্র মোদিকে দেখে মানুষ ভোটটা দেবেন ৷ তাই এই নির্বাচনে তাঁর জয় নিশ্চিত ৷ এবারেও তিনি মোদি-ঝড়েই বিশ্বাস রাখছেন ৷ কিন্তু, সাধারণ মানুষের হয়ে কাজটা তো তাঁকেই করতে হবে ! সেটা কি তিনি করেছেন ? লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তো শুধুমাত্র রাজনীতি ও তৃণমূল বিরোধিতার জন্য সাংসদ করা হয়নি ? তাঁকে সাংসদ করা হয়েছিল, মানুষের পাশে থেকে কাজ করার জন্য ৷ কিন্তু, গত পাঁচ বছরে সেদিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে তিনি ৷
আর এখানেই রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে হাতিয়ার করে হুগলির ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ অবশ্য রাজনীতিতে নবীন রচনার বেঁফাস মন্তব্য ও সেলিব্রিটি সুলভ আচরণ তৃণমূলকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে ৷ যদিও, শীর্ষনেতৃত্বের প্রশিক্ষণে সেই খামতি গত একমাসে অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন রচনা ৷ বিতর্ক ও বিতর্কিত প্রসঙ্গ এড়িয়ে রাজনীতির ময়দানে পা জমাচ্ছেন তিনি ৷ তাই প্রতিদ্বন্দ্বী লকেটকে রাজনৈতিক নিশানাও করছেন ৷
দুই হেভিওয়েটের দ্বৈরথে পুরোপুরি প্রচারের আলোর বাইরে সিপিআইএম প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ ৷ তবে, তিনি নিজের মতো করে মানুষের কাছে যাচ্ছেন ৷ হাতিয়ার করছেন দুর্নীতি, মাফিয়ারাজ, বেকারত্ব ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির মতো জ্বলন্ত ইস্যুকে ৷ তাঁর মতে, সেলিব্রিটি বা জনপ্রিয়তা একজন জনপ্রতিনিধির ইউএসপি হতে পারে না ৷ জনপ্রতিনিধি তিনি যিনি, মানুষের সমস্যাটা বুঝবেন এবং সেই মতো সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন ৷ যে কাজটা তিনি মাঠেঘাটে ঘুরে ভালোই রপ্ত করেছেন বলে জানান মনোদীপ ঘোষ ৷
আরও পড়ুন: