মালদা, 16 ফেব্রুয়ারি: মালদা জেলার রাজনীতিতে একসময় তিনি ছিলেন ‘গ্ল্যামার গার্ল’ ৷ বিধানসভা হোক কিংবা লোকসভা, কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছেন বরাবর ৷ কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের পর জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারেননি ৷ সেই হারের ‘দাগ’ মুছতে কি তিনি আবারও লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন ?
উত্তরে দলের কোর্টের বল ঠেললেন রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মৌসম নুর ৷ ইটিভি ভারত-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, ‘‘এখনও দল লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঠিক করেনি ৷ উত্তর মালদা কেন্দ্রে আমি দু’বারের বিজয়ী, একবার পরাজিত ৷ এবার আমি ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হব কি না, সেটা দলই ঠিক করবে ৷’’
কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর মালদায় শাসক দলের সভানেত্রী হয়েছিলেন ৷ এখন অবশ্য তিনি দলের কোনও পদে নেই ৷ এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী ময়দানে সাফল্য কতটা মসৃণ হবে ? মৌসমের কথায়, ‘‘এটা ঠিক, আগের নির্বাচনগুলিতে আমি দলের জেলা সভানেত্রী ছিলাম ৷ প্রথমে কংগ্রেসের, পরে তৃণমূলের ৷ কিন্তু আমার যা পরিচিতি, তাতে মনে হয় না নির্বাচনে জিততে গেলে কোনও সাংগঠনিক পদে থাকতেই হবে ৷ সাংসদ হিসাবে উত্তর মালদায় 10 বছর কাজ করেছি ৷ সেখানকার মানুষ আমাকে চেনে ৷ ফলে আমাকে নতুন করে কোনও পরিচয় দিতে হবে না ৷ আমার নামটাই আমার পরিচিতি ৷’’
মালদা একসময় কংগ্রেসের গড় ছিল ৷ বলা ভালো গণি খান চৌধুরির গড় বলেই মালদাকে চিনতেন বাংলার মানুষ ৷ সেই গণি পরিবারের সদস্য মৌসমের রাজনীতিতে প্রবেশ মা রুবি নুরের (গণি খানের বোন) মৃত্যুর পর ৷ সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচিত হয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ মৌসমের ৷ এর পর ধীরে ধীরে জেলা কংগ্রেসের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন তিনি ৷
বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরেই তাঁর সামনে খুলে যায় সংসদ-যাত্রার সুযোগ ৷ ডিলিমিটেশনের পর মালদা জেলায় দু’টি লোকসভা কেন্দ্র গঠিত হয় ৷ উত্তর ও দক্ষিণ মালদা ৷ উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রে তিনি কংগ্রেসের টিকিটে দু’বার প্রার্থী হন ৷ প্রতিবারই তাঁকে সংসদে পাঠিয়েছেন সেখানকার ভোটাররা ৷ ফলে নিজের পরিচিতি সম্পর্কে বলতে গিয়েই সাংসদ হিসেবে কাজের পাশাপাশি সেই রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কথাই তিনি সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন ৷
তাছাড়া তাঁর ছক কাটা নকশায় চলেই গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় বিপুল জয় পেয়েছে রাজ্যের শাসক দল ৷ এবারও যদি তাঁকে আবার উত্তর মালদা কেন্দ্রে ঘাসফুলের প্রার্থী করা হয়, তাহলে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ৷ কিন্তু উত্তর মালদা তৃণমূলের অনেকেই তাঁকে আর সেখানকার প্রার্থী হিসাবে দেখতে চাইছেন না বলে কোনও কোনও মহল থেকে শোনা যাচ্ছে ৷ এই নিয়ে মৌসমের বক্তব্য, ‘‘আশাপুরে ব্যবসায়ী সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় একজন সোশাল মিডিয়ায় বিরূপ উক্তি করেছেন ৷ এসব কোনও ফ্যাক্টর নয় ৷”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইন্ডিয়া’ জোট থেকে বেরিয়ে আসা নিয়ে মৌসমের প্রতিক্রিয়া, “মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু নিজে ওই জোট ভাঙেননি ৷ তিনি জোটের কাছে কিছু প্রস্তাব রেখেছিলেন ৷ কিন্তু তাঁর প্রস্তাবগুলিকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি ৷ রাহুলজি রাজ্য সফরে এলেও তাঁকে সেভাবে কিছু জানানো হয়নি ৷ ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম কান্ডারি হিসাবে তাঁকে যে গুরুত্ব কিংবা সম্মান দেওয়া উচিত ছিল, তা দেওয়া হয়নি ৷ তার সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি যেভাবে উলটো পালটা মন্তব্য করছেন, সেটাও জোটের পক্ষে ভালো নয় ৷ উপরতলায় কী আলোচনা হচ্ছে, তা আমার জানা নেই ৷ কিন্তু জোট ভাঙা নিয়ে তাঁকে যেভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয় ৷”
লোকসভা ভোটের মুখে রাহুল গান্ধির মালদা সফর নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন মৌসম ৷ তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না রাহুলজির সফর জেলা কংগ্রেসকে বাড়তি কোনও অক্সিজেন দিল ৷ মুখ্যমন্ত্রী সবসময় মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকছেন ৷ এ রাজ্যে যথেষ্ট ভালো কাজ হয়েছে ৷ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা 1000 ও 1200 টাকা করা হয়েছে ৷ 21 লাখ মানুষকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের তরফে 100 দিনের কাজের বকেয়া মেটাচ্ছেন ৷ রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা খুব চাপে রয়েছে ৷ তার মধ্যেও তিনি এই কাজগুলো করছেন ৷ রাজ্য সরকার টাকার ব্যবস্থা করছে ৷ আমাদের মূল লড়াই বিজেপির সঙ্গে ৷ তাদের পরাস্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী সবসময় মানুষের পাশে রয়েছেন ৷ মানুষের কাছে আমার আবেদন, তৃণমূলের পাশে থাকুন ৷”
আরও পড়ুন: