কাটোয়া, 19 অগস্ট: রাখিবন্ধন উৎসবে যোগ দিতে এসে আরজি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে পালটা আক্রমণ করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ ৷ আর তা করতে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য় করে বসেন তিনি ৷ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আগে তিনি (মমতা) নিজেকে বাঘিনী বলতেন, আজ রাজ্যের পরিস্থিতি এমনই যে ম্যাওম্যাও করতে শুরু করেছেন ।’’ সোমবার পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া স্টেশন চত্বরে দিলীপ ঘোষ নিজে মহিলাদের হাতে রাখি বেঁধে দিয়ে তাঁদের সুরক্ষার বার্তা দেন । ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন ৷
এ দিন দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আরজি করকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে । পুলিশকে দিয়েও চেষ্টা চলছে । ছশো কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি থেকে একাধিক খারাপ কাজ ওখানে হয়ে আসছে । কেউ ভয়ে ঘাঁটায় না । কিন্তু এটাকে বাঁচানোর জন্য যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিচে নেমেছেন, সেটা মেনে নেওয়া যায় না ৷’’
মমতাকে আক্রমণ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘তিনি তো একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী । সেখানে মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন ভাবা যায় ! ওদের দলের সিনিয়র সাংসদরাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন । তাদের তাঁদেরকেও ডেকে পাঠাচ্ছে লালবাজার । এইভাবে কতজনের মুখ বন্ধ করবে । যারা ভাঙচুর করেছে, কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না ? সব ভিডিও তো সামনেই আছে ! কাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে ? হয় তাদেরকে সরিয়ে দিন । না হলে লোকে আপনাকে সরিয়ে দেবে ।’’
এর পরই মুখ্যমন্ত্রী সম্বন্ধে বেফাঁস মন্তব্য করেন তিনি ৷ বলেন, ‘‘আজ সরকার কত অসহায় হয়ে গিয়েছে । আগে মহিলার কত দাম্ভিকতা ছিল ৷ নিজেকে বাঘিনী বলতেন ৷ আর এখন তো ম্যাওম্যাও করছেন ।’’
রবিবার যুবভারতীর সামনে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রসঙ্গও তিনি তুলেছেন ৷ তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতেই বাংলার ফুটবল শেষ হয়ে গিয়েছে । যাঁরা বাঁচিয়ে রেখেছে, আজ সেই সমর্থকদের উপরে পুলিশ হামলা করছে । পুলিশকে বলব আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না । জনগণ যদি ক্ষেপে যায়, তাহলে পুলিশকে পেটাতে শুরু করবে বাংলাদেশের মতো ।’’
পুলিশের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ৷ তিনি বলেন, ‘‘সত্যি কে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ । আজ যদি মানুষ পুলিশকে বয়কট করে, পুলিশ কোথায় যাবে ? এই পরিস্থিতি যাতে না আসে, সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের ।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফের আক্রমণ শানান দিলীপ ৷ তাঁর দাবি, ‘‘সিবিআই যাদের সন্দেহ করছে, তাদেরকে ডাকা হচ্ছে । এবার যেদিন মুখ্যমন্ত্রীকে ডাকবে সেদিন সব সত্যি বেরিয়ে যাবে । সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় নিজেদের লোককে বসিয়ে রেখে অরাজকতা তৈরি করেছেন তিনি । এই বাংলায় সারা বছর মাতৃশক্তির পুজো করা হয়, সেই মহিলাদের সুরক্ষা না দিয়ে তাদের অসম্মান করছেন মুখ্যমন্ত্রী । আজ পরিস্থিতি এমন জায়গায় যে মেয়েদের হাতে আমরা রাখি বেঁধে তাদের সুরক্ষার শপথ নেব ।’’
দিলীপের আরও দাবি, ‘‘আজ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেওয়া হলেও বাংলার লক্ষ্মীরা সুরক্ষিত নেই । সমাজে যেভাবে জাগরণ হয়েছে তৃণমূলের অনেক নেতারা জেনেশুনেও কিছু করতে পারছে না । বাংলাদেশের মতো অবস্থা হবে । উলটো দিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেবে । মানুষ এত ক্ষেপে গিয়েছে । যেকোনও সময় নেতাদের গায়ে হাত পড়বে । তাই এই পরিস্থিতি যাতে না হয়, শুধরে যাওয়া উচিত তাদের । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে দমন পীড়ন শুরু করেছে, সেই কারণে জনরোষ তৈরি হচ্ছে । এটা আর চলবে না । মমতার অস্তিত্ব আজ সংকটে ।’’