কলকাতা, 20 জুন: 2024 লোকসভা নির্বাচনেও আশানুরূপ ফল করেনি সিপিএম । এবারও বঙ্গে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে । আট বছর ক্ষমতায় থাকার পরও কেরলেও সিপিএমের বিপর্যয় ঘটেছে । প্রাথমিকভাবে সেই বিপর্যয় নিয়ে ইতিমধ্যে একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে কেরালা সিপিএমে । সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নিজে কেরলে গিয়ে প্রাথমিক আভাস নিয়ে বঙ্গে আসেন বুধবার । এখানেও দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সীতারাম ইয়েচুরি ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম । সেই বৈঠকে এক প্রশ্নের উত্তরে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যা বললেন, তাতে স্পষ্ট কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সিপিএমের স্ক্যানারে আছেন । অর্থ তছরূপ, অবৈধ লেনদেন-সহ একাধিক যে অভিযোগ বিজয়নের বিরুদ্ধে আছে, সেই কারণেই এবারের ভোটে সিপিএম কেরলে খারাপ ফল করেছে কি না, তা অবশ্যই দেখা হবে ।
2024 লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সিপিএম পলিটব্যুরো থেকে বিবৃতি জারি করা হয় । সেখানে কেরলে খারাপ ফলাফলের উল্লেখ থাকলেও বাংলা ও ত্রিপুরার বিপর্যয় নিয়ে একবিন্দু লেখা হয়নি । সেই বিষয়কে মাথায় কেরলের খারাপ ফলের জন্য পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগ ভোট বিপর্যয়ের কারণ কি না প্রশ্ন করা হয় ।
সেই প্রশ্নে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজাফফর আহমেদ ভবনে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, "কেরলে ফলাফল নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে । কেরল থেকেই বুধবার বাংলায় আসি । এখানে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে । কেরালা নিয়ে আলোচনা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি । আগামীতে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে । কেরলে ফল নিয়ে অবশ্যই বিশ্লষণ করা হবে ।"
এসব কথা বললেও পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যে নিয়ে একটি কথাও বলেননি ইয়েচুরি । ফলে, কেরলে মুখ্যমন্ত্রীকে আগামীতে দলের কাছে একাধিক বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।
তবে, দেশে ইন্ডিয়া ব্লকের ভালো ফলের জন্য আগামীতে সংসদের ভিতরে বাইরে আন্দোলন সংগঠন করার কথা জানিয়েছেন ইয়েচুরি । যা প্রাথমিকভাবে নিট, ইউজিসি-নেট-সহ একাধিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন । আদালতের নজরদারিতে নিট, ইউজিসি-নেট কেলেঙ্কারির তদন্তের দাবি করেন ।
ইয়েচুরি বলেন, "এখন আমাদের কাজ মোদি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা । যা ইতিমধ্যে নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে শুরু করা হয়েছে । ম্যাল প্র্যাকটিস অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে । তাঁরা ইতিহাস ধ্বংস করে হিন্দুরাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায় । যে কারণে পাঠ্যবইয়ে বদল ঘটানো হচ্ছে । পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে । যা দেখা যাচ্ছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র । দ্রুত এনটিএ-কে বাতিল করতে হবে পরীক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা থেকে । বিজেপিকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে । প্রথম অধিবেশনের দিনেই । এখন পরীক্ষারগুলোর কি অবস্থা ! শিক্ষা দফতরের মন্ত্ৰীর দায়িত্ব নিতে হবে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘রেলের ম্যানেজমেন্টের মারাত্মক সমস্যা রয়েছে । পরিচর্যা হয় না । খারাপ অবস্থা । রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত । টেট, নেট সব জায়গায় খারাপ করা হচ্ছে । জীবন ভবিষ্যত নিয়ে খেলা করা হচ্ছে । কোর্ট মনিটর করে তদন্ত হওয়া উচিত । বাচ্চাদের জীবন নিয়ে খেলা করা হচ্ছে । সিবিআই-এর বিশেষ সত্ত্বেও বিরোধীদের পিছনে পড়া । যারা দুর্নীতি করে, তাদের কোনও তফাৎ নেই । সেটা গুজরাত কিংবা বাংলা তা আলাদা ব্যাপার নেই । শিক্ষার বিষয়ে ওদের কোনও ধ্যান নেই । শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে ওরা নিজেদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা ফুলফিল করতে চেয়েছে । ইতিহাস এখন পৌরাণিক কাহিনিতে বদল ঘটছে ।"