কোচবিহার, 16 এপ্রিল: উত্তরবঙ্গের অন্য়তম হেভিওয়েট কেন্দ্র কোচবিহার । 19 এপ্রিল দেশজুড়ে প্রথম দফার ভোটে বাংলার তিনটি কেন্দ্র- জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে লোকসভা ভোট । এই তিনটি আসনই বিজেপির দখলে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি জনসভা থেকে আক্ষেপ করে বলেন, ‘আপনারা বিজেপিকে কেন ভোট দেন? তৃণমূল কী দোষ করেছে?’
আসন্ন ভোটে বিজেপি, তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিলেও ভোটযুদ্ধ প্রধানত দ্বিমুখী অর্থাৎ জোড়াফুল বনাম পদ্মফুল হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। 2019 সালের নির্বাচনে জয়ী নিশীথ প্রামাণিকের উপরে এবারও ভরসা রেখেছে বিজেপি। তাঁর বিপরীতে তৃণমূলের জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। এছাড়া কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পিয়া রায় চৌধুরী ।
রাজ্যে যখন বাম জমানা, সেই সাতের দশকের শেষ থেকে দীর্ঘ তিন দশকের কিছু বেশি সময় কোচবিহার বামফ্রন্টের দখলে ছিল। তবে 2014 সালের লোকসভা নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপককুমার রায়কে হারিয়ে এই কেন্দ্রে ঘাসফুল ফোটান তৃণমূলের রেণুকা সিনহা । এরপর 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ফের পালাবদল ঘটে। বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক এই আসনটিতে জয়ী হন। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় বারবার জগদীশ চন্দ্র বসুনিয়ার হয়ে কোচবিহারে প্রচার করেছেন । 13 এপ্রিল তিনি জলপাইগুড়ির জনসভা থেকে এই কেন্দ্রে তৃণমূলকে জেতানোর আবেদন জানিয়েছেন । আবার নিশীথ প্রামাণিকের হয়ে জনসভা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চব্বিশের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কে দখল নেবে ইন্দো-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের এই রাজ্যের ? জানা যাবে ৪ জুন।
কোচবিহার লোকসভায় 7টি বিধানসভা কেন্দ্র – মাথাভাঙা, কোচবিহার উত্তর (এসসি সংক্ষরিত), কোচবিহার দক্ষিণ, শীতলকুচি (এসসি সংরক্ষিত), সিতাই (এসসি সংরক্ষিত), দিনহাটা, নাটাবাড়ি। এই কেন্দ্রের একটা বড় অংশে বাংলাদেশ সীমান্ত। তাই আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ, বিভিন্ন বেআইনি পাচার এখানে বড় সমস্যা। জেলায় শিল্প সেভাবে না-থাকায় সীমান্ত এলাকার বহু মানুষ ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান। এছাড়া এখানে কৃষিকাজের উপরেই মানুষের রুটি-রুজি নির্ভর করে।
গত 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার লোকসভার অন্তর্গত 7টি বিধানসভার মধ্যে 6টিতেই জয়ী হয় বিজেপি। একমাত্র সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূলের জগদীশ বর্মা বসুনিয়া, যিনি এবার লোকসভা প্রার্থী । পরে অবশ্য দিনহাটা বিধানসভা উপনির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জয়ী হন উদয়ন গুহ। এরপর 2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কোচবিহারে ব্যাপক ফল করে তৃণমূল।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অভিযোগ, সাংসদকে এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়নি। এছাড়া সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের টাকায় তেমন একটা কাজও হয়নি । 2024 সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি দখলে মরিয়া তৃণমূল । উদয়ন গুহ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক থেকে প্রাক্তন বিধায়ক হিতেন বর্মন-সহ বহু পুরনো নেতা এবারে মাঠে নেমেছেন। ফলে বিজেপির পক্ষে এবার লড়াইটা অনেকটা কঠিন এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। অন্যদিকে বিজেপির হাতিয়ার তৃণমূলের একাধিক দুর্নীতি । প্রচার পালটা প্রচার ঘিরে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক পারদ চড়ছে কোচবিহারে। তবে শেষ হাসি কে হাসবে, তার জন্য দেড়মাস অপেক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন: