রায়গঞ্জ, 28 ফেব্রুয়ারি: লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হবে না ঘোষণা করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তার পরও কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব আশা ছাড়ছেন না ৷ এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত ৷ তাঁর দাবি, রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করতে চায় বাংলার শাসক দল ৷ সেই কারণে তাঁকে নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে ৷
এই নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন মোহিত সেনগুপ্ত ৷ সেখানে তিনি এই নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ৷ যদিও এই প্রস্তাব সরাসরি আসেনি বলেই জানিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর দাবি, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের মাধ্যমে এই কাজ করা হয়েছে ৷ আইপ্যাকের নাম শুনে বিষয়টিকে ‘প্রতারণার ফাঁদ’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তৃণমূল ৷ জেলার তৃণমূল নেতাদের দাবি, রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে বাইরের কাউকে প্রার্থী করা হবে না ৷
কিন্তু মোহিত সেনগুপ্তর এই পোস্ট ঘিরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে উত্তর দিনাজপুরে ৷ স্বাভাবিকভাবেই সকলের আগ্রহ তৈরি হয়েছে ওই পোস্ট ঘিরে ৷ কী লিখেছেন মোহিত সেনগুপ্ত সেখানে, এটাই সকলে জানতে চান ৷ পুরো পোস্টেই তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন তিনি ৷ লিখেছেন, "জেলায় কি তৃণমূলের কোনও নিভর্রযোগ্য নেতা নেই, যিনি লোকসভায় প্রার্থী হবেন ? কী জানি হয়তো নেই ! তাই হয়তো দিদিমণি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দূত পাঠান বারবার । মোহিতবাবু আপনাকে তৃণমূল দলে আসতেই হবে ৷ আপনাকে সব দেওয়া হবে ৷ লোকসভার প্রার্থী, জেলা সভাপতি আর আপনি যা চান ! রায়গঞ্জ পৌরসভা, বিধানসভা, সব আপনার পছন্দ মতো করা হবে ।’’
তিনি যে তৃণমূলের দেওয়া এই ‘প্রলোভনে’ সম্মত হবেন না, সেটাও ওই পোস্টে জানিয়ে দিয়েছেন ৷ পাশাপাশি কেন তাঁকে এই প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ৷ রাহুল গান্ধির দলের এই নেতা আরও লিখেছেন, ‘‘কেন দিদিমণি, আপনার দলে সবাই তো রত্ন ! আমরা নিঃস্ব । তবুও আমাদেরই চাই কেন ? কারণ, আপনিও জানেন দল পালটানো শিল্পপতি লোকসভায় প্রার্থী হয়ে যদি জিতে যায় (তৃণমূলে থেকে বিরোধী হিসেবে পিএসি কমিটির চেয়ারম্যান) তাঁকে আটকে রাখা অসম্ভব ৷ যদি বা কোনও মন্ত্রী প্রার্থী হন, তাঁকেও আটকে রাখা অসম্ভব ৷ কারণ, আজও দাড়িভিটের রক্ত তাঁর হাতে লেগে আছে । তাই সব ছেড়ে মোহিত সেনগুপ্তকে ধরো । বাহ ! আজও এতো ভয় কংগ্রেসকে ?’’
পোস্টের একেবারে শেষে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে তিনি কোনওভাবেই কংগ্রেস ছাড়ছেন না ৷ তাঁর কথায়, ‘‘দলত্যাগের থেকে দেহত্যাগ অনেক বেশি আনন্দের ৷’’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে তিনি দুর্নীতির অভিযোগ সরব হয়েছেন ৷ তাই সেই দলে তিনি নাম লেখাবেন না বলে জানিয়েছেন ৷ একই সঙ্গে জানিয়েছেন যে তৃণমূলের তরফে সরাসরি তাঁর কাছে রায়গঞ্জ লোকসভায় ঘাসফুলের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব আসেনি ৷ প্রস্তাব এসেছিল আইপ্যাকের মাধ্যমে ৷
এই নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই । সেই কারণে কোনও মন্তব্য করতে চান না । তবে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য তথা এই জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসে কোনও সংকট নেই । সংগঠন যথেষ্ট মজবুত রয়েছে ।’’
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি অরিন্দম সরকার জানান, দলের নিয়ম অনুসারে জেলা কমিটি থেকে নাম প্রস্তাব করে রাজ্যে পাঠানো হয় । রাজ্য সেই প্রস্তাব অনুসারে নাম ফাইনাল করে । এই জেলায় এখনও পর্যন্ত এমন কোনও বৈঠক হয়নি । তবে মোহিতবাবু যে আইপ্যাকের ফোনের কথা বলছেন, সেটি প্রতারণা চক্রের ফাঁদও হতে পারে । তাই তিনি এই ধরনের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য কংগ্রেস নেতাকে সাবধানও করেন ৷
যদিও বুধবার মোহিত সেনগুপ্তের বক্তব্য বা তাঁর পোস্টকে কটাক্ষ করেছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী । তিনি বলেন, ‘‘2021 সালে মোহিতবাবুর জমানত জব্দ হয়েছে । উনি নিরাশায় ভুগছেন ।’’
আরও পড়ুন: