কলকাতা, 3 অগস্ট: কারামন্ত্রী অখিল গিরির তরফে বনাধিকারিককে হুমকি দেওয়া-সহ একাধিক ঘটনা নিয়ে শনিবার সরব হলেন বিজেপির মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ৷ এই ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন তিনি ৷ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে এই রাজ্যে একটা চরম নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘উর্দিপরা পুলিশকে আক্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ ৷ বিডিও-কে বোতল ছুঁড়ে মারা হচ্ছে বৈঠকের মধ্যে ৷ একদিকে মুখ্যমন্ত্রী অন্তঃসারশূন্য ঘোষণা করছেন সরকারি জমি দখলদারদের থেকে মুক্ত করার জন্য ৷ আর সেই ক্য়াবিনেটের মন্ত্রী প্রশাসনকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন ৷ যে ভাষায় একজন মন্ত্রী একজন মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে কথা বললেন, তাহলে মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি ও আশ্বাস কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে সেটা দেখাই যাচ্ছে !’’
তাঁর আরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় খুব ভালো করে জানেন দখলদারি উঠে গেলে সরকার পড়ে যাবে । তাই এই কাজ সম্ভব নয় ৷ সেই কারণে হকার উচ্ছেদ মুখ্যমন্ত্রীর একটা ঘোষণা ছাড়া আর কিছুই না । শমীকের আরও দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরের পার্টি লাইনেই কথা বলেছেন অখিল গিরি । এটাই তৃণমূলী সংস্কৃত । যেভাবে রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের দেখে, সেভাবেই মন্ত্রী অখিল গিরি কথা বলেছেন সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে । রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্বন্ধেও অখিল গিরি আগে যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন শমীক ৷
এখানেই না থেমে তাঁর আরও দাবি, শাসক দলেরই তৃণমূলের উপর কোনও আস্থা নেই ৷ মানুষের কোনও আস্থা নেই ৷ তবে তাঁর মতে, পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সুখকর নয় ৷ অত্যন্ত বিপজ্জনক ৷ পাশাপাশি তিনি বৃষ্টিতে মানুষের জল-যন্ত্রণা নিয়েও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি ৷ তাঁর দাবি, রাজ্যের এই নৈরাজ্যের পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস ৷ সেই কারণেই তাঁরা জিএসটি নিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছে ৷
শমীকের দাবি, জিএসটি কাউন্সিলে কেন্দ্রের কোনও ভোট নেই ৷ সেখানে রাজ্যগুলিরই ভোট রয়েছে ৷ রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যখন জিএসটি কাউন্সিলে ছিলেন, সেই সময় তাঁর (অমিত মিত্র) দেওয়া 40টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে ৷ সেই কারণে শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এই বঞ্চনার কথা বলছে রাজ্য ।
তাঁর আরও অভিযোগ, জল জীবন মিশন থেকে আবাস যোজনা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলায় দুর্নীতি হচ্ছে ৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়িত করতে দিচ্ছে না রাজ্য সরকার ৷ জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ-সহ একাধিক প্রকল্পে রাজ্য সরকার নীরব হয়ে রয়েছে ৷ তিনি আলুচাষিদের দুরাবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন ৷ তৃণমূল সাংসদরা কেন এই নিয়ে সরব হচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷
বিজেপির এই মুখপাত্রের আরও দাবি, বাংলায় অনুপ্রবেশ হচ্ছে ৷ জনবিন্যাস পরিবর্তিত হচ্ছে৷ বিজেপি এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব ৷ এই সূত্রেই তিনি তৃণমূলের তরফে তোলা বাংলাভাগের অভিযোগ নিয়ে জবাব দিয়েছেন ৷ তিনি জানান, বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল বাংলাভাগের অভিযোগ করছে ৷ অথচ সেই দলের সাংসদ রাজ্যসভায় কেন্দ্রের কাছে উত্তরবঙ্গের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ চাইছেন ৷ তাহলে তৃণমূলই তো স্বীকার করে নিচ্ছে যে উত্তরবঙ্গে উন্নয়ন হয়নি ৷ এ দিন আবার সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্যের সাফাই দিয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য ৷ তাঁর দাবি, সুকান্ত মজুমদার রাজ্যভাগের কথা বলেননি ৷
ডিভিসির জল ছাড়া নিয়ে তাঁর অভিযোগ, কোনও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেই । রাস্তা থেকে বাঁধ একটা বন্যায় শেষ হয়ে যাচ্ছে । ডিভিসি তো জল ছাড়বে । কিন্তু রাজ্যের সেচ দফতরের কোনও পরিকাঠামো না থাকলে, সেটা তো ম্যান মেড বন্যা হবেই । তৃণমূল কংগ্রেসের জমানায় কেন রাজ্যের জলমগ্ন পরিস্থিতি এড়ানো গেল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শমীক ভট্টাচার্য ৷
হাওড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, এর আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে । বিদ্যুতের তার খোলা বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুটা মর্মান্তিক । এর দায় নিতে হবে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরকে ।