কলকাতা, 13 জুন: লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবির পর থেকেই প্রকাশ্যে চলে এসেছে অন্তর্কলহ ৷ আকারে-ইঙ্গিতে দলের বর্তমান নেতৃত্বকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন বঙ্গ-বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ ৷ বিজেপি কর্মীদের অনেকেই নেতৃত্বের সমালোচনা শুরু করেছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির খারাপ ফল নিয়ে মুখ খুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ তাঁর কথায়, ‘‘ভালো হলে নিজেরা কৃতিত্ব নেন ৷ খারাপ হলে আমার ঘাড়ে চাপান ৷’’
যদিও দিলীপ ঘোষ হোক বা অন্য কেউ, এতদিন যাঁরা বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন, তাঁদের কেউই সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর উপর দায় চাপাননি ৷ বুধবার সন্ধ্যায় নিউটাউনে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের সামনে এই মন্তব্য করার সময় শুভেন্দুও কারও নাম করেননি ৷
তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘আমি কোনওদিন প্রকাশ্য়ে একটা কথাও বলিনি ৷ আমি ভারতীয় জনতা পার্টি করি, তাতে সবাই আমাকে পুরস্কার দেয় না ৷ কেউ তিরস্কারও দিতে পারে ৷ অনেকে অনেক কিছু পোস্টও করতে পারেন ৷ তির্যক মন্তব্যও করতে পারেন ৷ ভালো হলে নিজেরা কৃতিত্ব নেন ৷ খারাপ হলে আমার ঘাড়ে চাপান ৷ কিন্তু আমি কখনওই আমার দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বাইরে বলতে চাই না ৷’’
আসলে রানাঘাটে বিজেপির জয়ী প্রার্থী জগন্নাথ সরকার ভোট পরিচালনায় নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ৷ সেই বিষয়টি নিয়েই জানতে চাওয়া হয় শুভেন্দুর কাছে ৷ তখনই তিনি এই মন্তব্য করেন ৷ রানাঘাটের সাংসদের বক্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও শুভেন্দু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল নির্বাচন কমিশনের অর্ডারে ৷ এখানে তাদের স্বতন্ত্র ভূমিকা ছিল না ৷ তারা রাজ্য পুলিশের হাতে নিয়ন্ত্রিত ছিল ৷’’
তবে ভোটের ফল নিয়ে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ তাঁর দাবি, সারা রাজ্যে অন্তত 25 লক্ষ ভোট ছাপ্পা দেওয়া হয়েছে ৷ দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসন থেকে জিতেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ সেই আসনে 10 লাখের বেশি ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে । শুভেন্দু অধিকারীর আরও দাবি, কেশপুরে ছাপ্পা হয়েছে দেড় লাখের বেশি ভোট । জয়নগরের ক্যানিং পূর্ব ও পশ্চিম এবং যাদবপুরের ভাঙড় মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষ ভোটের ছাপ্পা হয়েছে ।
বিরোধী দলনেতার আরও অভিযোগ, প্রায় 95 ভাগ সংখ্যালঘু মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে । এমনকী মুর্শিদাবাদের ধর্মীয় স্থান থেকে মাইকে বলে ভোট করানো হয়েছে । 15 থেকে 20 লক্ষ হিন্দু ভোটারদের ভোট দিতেই দেওয়া হয়নি । তবে তিনি এও উল্লেখ করেন যে বিজেপির আসন জয়ের সংখ্যাটি যদি 12 না হয়ে 21 হত, তাহলে নিঃসন্দেহে বিজেপি কর্মীরা খুশি হতেন । তবে বিধানসভা ভিত্তিক দেখতে গেলে তৃণমূলের চেয়ে খুব একটা খারাপ ফল করেনি বিজেপি ।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির হেরে যাওয়া চার প্রার্থী - বসিরহাটের রেখা পাত্র, ঘাটালের হিরন্ময় চট্টোপাধ্য়ায় ওরফে হিরণ, জয়নগরের অশোক কান্ডারী ও ডায়মন্ড হারবারের অভিজিৎ দাস আগামী সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন দায়ের করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন ৷
শুভেন্দু আরও জানান, কোচবিহারে 18 রাউন্ড পর্যন্ত ওখানকার বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক এগিয়েছিলেন ৷ তবে 19 ও 20তম রাউন্ডে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয় । ওই দুই রাউন্ডে 17সি ফর্মের সঙ্গে ইভিএমের নম্বর মেলেনি ৷ প্রতিবাদ করায় বিজেপির কয়েকজন এজেন্টকে গণনাকেন্দ্র থেকেই জেলাশাসকের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয় ৷ পাঁচদিন পর তাঁরা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন ৷ এই বিষয়টি নিয়েও ইলেকশন পিটিশনের পথে হাঁটতে পারে বিজেপি ৷ শনিবার তিনি কোচবিহার যাবেন ৷ তার পরই এই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতা ৷
পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের বিধায়ক তৃণমূলের সোহম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে নিউটাউনের হোটেলে ‘দাদাগিরি’র যে অভিযোগ উঠেছে, সেই নিয়ে খুনের চেষ্টার মামলা হওয়া উচিত বলে মনে করেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ তবে মানিকতলা উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাই বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাময়িক রাজনীতি থেকে বিরতি প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিরোধী দলনেতা ৷