বসিরহাট, 15 এপ্রিল: নির্বাচনী হাওয়ায় একের পর এক কুকথার বন্যা ৷ এ বার বসিরহাটে বিরোধী নেতাদের ঝাঁটা, চ্যালাকাঠ দিয়ে পেটানোর নিদান দিলেন এক তৃণমূল নেতা ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ৷
বঙ্গে এখন নির্বাচনী হাওয়া ক্রমে গরম হচ্ছে শাসক-বিরোধীর হুমকি, হুঁশিয়ারিতে । শুধু হুমকিই নয় ! ভোটমুখী বাংলাতে বইছে কু-কথার স্রোতও । যা ঘিরে চড়ছে রাজনৈতিক পারদ । লাগাম নেই যুযুধান শাসক-বিরোধী, কারওই । ভোটে বিরোধীদের শায়েস্তা করতে এ বার গ্রামের মহিলা এবং যুবকদের ঝাঁটা ও চ্যালা কাঠ হাতে তুলে নেওয়ার নিদান দিলেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মিনাজুল ইসলাম । হুমকির সুরে এই শাসক নেতা বলেন, "সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি । এই তিন রাজনৈতিক দল বসিরহাটের কোথাও ভোট চাইতে এলে ঝাঁটা এবং চ্যালা কাঠ দিয়ে এমন মার মারুন, যাতে তাঁদের এলাকা থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে বঙ্গোপসাগরে ফেলা যায় ।"
তৃণমূল নেতার এই বিতর্কিত মন্তব্যের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনীতির অন্দরে । এ নিয়ে সমালোচনার ঝড়ও উঠেছে বিভিন্ন মহলে । অনেকেই মনে করছেন, "ভোটের মুখে তৃণমূল নেতার এই হুমকি নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী ! এভাবে সরাসরি হুমকি দিয়ে কার্যত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন তিনি ।" নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ ।তবে, সমালোচনা হলেও তাঁর করা মন্তব্যে এতটুকু অনুতপ্ত নন বিতর্কিত এই তৃণমূল নেতা । বরং নিজের মন্তব্যে অনড় থেকে এই ধরনের কথাবার্তা আরও বেশি বলা উচিত ছিল বলে জোর গলায় জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা মিনাজুল ইসলাম ।
জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতার মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত । রবিবার রাতে বসিরহাটের বেগমপুরে নির্বাচন সম্পর্কিত এক পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল । তৃণমূল প্রার্থী ও হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামের সমর্থনে আয়োজিত সেই পথসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়েই এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিবিপুর-বেগমপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি মিনাজুল ইসলাম ।
কেন বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে ঝাঁটা এবং চ্যালা কাঠ দিয়ে মারা উচিত, তার ব্যাখা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি । এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা মিনাজুল ইসলাম বলেন, "ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সব তিনি রেখেছেন । বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা ছোট রাজ্য চালান । আর নরেন্দ্র মোদি সারা ভারত চালাচ্ছেন । ক্ষমতায় আসার পর তিনি বলেছিলেন, প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে 15 লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে । সেই ১৫ লক্ষ টাকা কেউ কী পেয়েছেন ? অথচ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর 2 টাকা কিলো দরে চাল দিচ্ছেন । সেই চাল সবাই পাচ্ছেন তো ? সেই চালও এখন ফ্রি-তে করে দেওয়া হচ্ছে ।"
এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করতে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন এই তৃণমূল নেতা । তাঁর কথায়, "এই কারণে নরেন্দ্র মোদিকে ঝাঁটা নাকি চ্যালা কাঠ দিয়ে মারতে হবে, সেটার ভার আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম । আপনারাই বিচার করবেন । আর কংগ্রেস, সিপিএম, আইএসএফ তো নিজেদের পা ঠিক রাখতে পারছে না । তাই ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে আমাদের ।"
এ দিকে, এই মন্তব্যের নিন্দা করে উত্তর 24 পরগনা জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, "বিজেপি এবং তৃণমূল । এই দুই দলই এখন হতাশায় ভুগছে । সেই কারণে এই ধরনের হুমকি, হুঁশিয়ারি দিতে হচ্ছে দু'দলের নেতাদের । এটা হতাশার বহিঃপ্রকাশ । ভয় পেয়েছে ওরা । নির্বাচনের দিন মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছবে এবং এই দুই শক্তিকে পরাস্ত করতে যা করার তাই করবে ।"
আরও পড়ুন: