বর্ধমান, 22 ফেব্রুয়ারি: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র বিজেপি ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে । দলের মধ্যে অনেকেই চাইছেন বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার পরিবর্তে নতুন মুখ আনা হোক । কেউ কেউ আবার চাইছেন, যেভাবে আসানসোলের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাতে তাঁর মতো প্রার্থী পেলে কর্মীদের মনোবল বাড়তে পারে ৷ যদিও বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, দলের প্রার্থী ঠিক করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব । তবে এই বিষয়ে বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে ।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে সেভাবে তাঁকে দেখা যায়নি । এই অভিযোগ সাধারণ মানুষের তো আছেই, বিজেপি কর্মীদের একাংশের অন্দরেও একই কথা ঘোরাফেরা করছে ৷ এ নিয়ে জমেছে ক্ষোভ ৷ ফলে সাংসদ নিখোঁজ বলে একাধিকবার পোস্টারও পড়েছে বর্ধমান ও দুর্গাপুরে ।
স্থানীয় মানুষ থেকে বিজেপির একাংশের অভিযোগ, করোনার সময় থেকে একাধিকবার যখন স্থানীয় মানুষ কোনও সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন তাঁদের প্রয়োজনে বিজেপি সাংসদকে পাশে পাওয়া যায়নি । তিনি মাঝেমধ্যে এলাকায় আসেন হয় ট্রেন বা স্টেশনের কোনওকিছু উদ্বোধনে, কিংবা রাম মন্দির দর্শন করতে যাওয়া দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে । যেমন দুর্গাপুরে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিএসপি ও ডিটিপিএস সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷ ডিএসপি বাসিন্দাদের জায়গা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে । ফলে বাসিন্দারা পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন । এই সংকটের সময়ে সাংসদকে পাশে না-পেয়ে বিজেপি সাংসদের নামে 'সন্ধান চাই' নামে পোস্টার পড়ে । বর্ধমান শহরেও একাধিকবার তাঁর নামে পোস্টার পড়েছে ।
বিজেপি কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিজেপি কর্মীদের উপরে অত্যাচার নেমে এসেছিল । তাঁদের বাড়িঘর ভেঙে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল । সেই সময় বর্ধমানের প্রায় হাজার খানেক কর্মী ঘরছাড়া ছিলেন । তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু কর্মীদের সাহায্য করার জন্য বিজেপি সাংসদকে সেই সময় পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ । যদিও জেলা বিজেপি নেতৃত্বের সাফাই, সাংসদ সব সময় প্রকাশ্যে আসতে না পারলেও তিনি নিয়মিত খোঁজখবর নিয়ে সব ধরনের সাহায্য করে থাকেন ।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দেখা গিয়েছে, জেলা পরিষদের ফলাফলের নিরিখে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে দু লক্ষেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে আছে বিজেপি । ফলে আসনটি ধরে রাখা তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । যদিও বিজেপির দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে আকাশপাতাল পার্থক্য আছে । পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো সাধারণ মানুষ নিজের ভোটই দিতে পারেননি । শাসকদল নিজেদের ইচ্ছেমতো ভোট করে জিতেছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতা বলেন, "আলুওয়ালিয়া ফের প্রার্থী হলে দলীয় কর্মীদের মনোবল আরও ভেঙে যাবে । তাঁকে জেতানোর জন্য তো তাঁরাই লড়েছিলেন । কিন্তু তাঁদের বিপদে সাংসদকে দেখাই যায়নি । উলটে যাঁরা দলকে জেতাতে ভূমিকা নিয়েছেন, তাঁদেরই তিনি দল থেকে বাদ দিয়েছেন । যা নিয়ে তো ক্ষোভ আছেই । তবে অগ্নিমিত্রা পাল যেভাবে আন্দোলন করছেন, তাতে দলের কর্মীরা খুশি । তাঁকে পাশে পেলে হয়তো নতুন উদ্যমে ঝাঁপাবেন দলীয় কর্মীরা ।"
বিজেপি নেতা সুধীররঞ্জন সাউ বলেন, "দলের প্রার্থী এখান থেকে ঠিক হয় না । দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করবে । তবে সাংসদ এলাকার উন্নয়নে একাধিক কাজ করেছেন । আমরা সবাই দলের স্বার্থে কাজ করি ।"
বিজেপি নেতা নরেশ কোনার এ প্রসঙ্গে বলেন, "বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী কে হবেন তা ঠিক করবে দল । তবে দলীয় কর্মীরা একজন দক্ষ সংগঠককে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন, যাঁকে সব সময় হাতের কাছে পাওয়া যায় । যাঁকে লড়াইয়ের ময়দানে সব সময় পাওয়া যায় । আর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপি কর্মীদের মনোবল অনেকটাই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে । কারণ কর্মীদের দুঃসময়ে উপরতলার নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি । তাই নতুন মুখ না আনলে নির্বাচনে জেতা বিজেপির পক্ষে অনেকটাই কঠিন হবে । কারণ প্রায় 70 শতাংশ বুথেই বিজেপি কোনও বুথ কর্মী খুঁজে পায়নি ।"
আরও পড়ুন: