হায়দরাবাদ, 26 মে: দিনটা ছিল 21 মে ৷ চলতি বছরের এই দিনেই প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দিক রাষ্ট্রসংঘ, এর পক্ষে মত দেয় নরওয়ে, স্পেন এবং আয়ারল্যান্ড ৷ যদিও ইজরায়েলের সঙ্গে ঝামেলার মধ্যেই 1988 সালের 15 নভেম্বর প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ইহুদি দেশটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং জেরুজালেমকে প্যালেস্তাইনের রাজধানী । এরপর থেকেই রাষ্ট্রসংঘের 193টি স্থায়ী সদস্যের মধ্যে 143টি প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেয় ৷ এবার নতুন সংযোজন ওই তিনটি দেশ ৷
অন্যদিকে ইজরায়েল ৷ যাকে পূর্ণ সমর্থন করছে আমেরিকা ৷ 1948 সালের মে মাসে ইজরায়েল স্বাধীনতার ঘোষণা করে ৷ এর এক বছর পরে 1949 সালের মে মাসে ইজরায়েল রাষ্ট্রসংঘের পূর্ণ সদস্য হয় । বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার বেশিরভাগ এবং আফ্রিকার দেশগুলি প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে । তবে জি 7 দেশগুলি যেমন আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি । তবে বর্তমান মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, নরওয়ে, স্পেন এবং আয়ারল্যান্ডের পাশাপাশি আরও কিছু ইউরোপীয় দেশ প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে ৷ এর ফলে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে সমর্থন আরও জোড়াল হচ্ছে ।
এই ঘোষণাগুলিকে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির একটি লিঙ্ক হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকে রাজনৈতিক সমর্থন বাড়াচ্ছে ৷ পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত এবং রাষ্ট্রসংঘের পূর্ণ সদস্য হওয়ার অধিকারের দিকে নির্দেশ করছে । প্যালেস্তাইন 2012 সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘে স্থায়ী পর্যবেক্ষক ছিল ৷ তার আগে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে পর্যবেক্ষক ছিল । রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে প্যালেস্তাইনকে পূর্ণ সদস্যপদ পেতে নিরাপত্তা পরিষদের 15 সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে 9 জনের কাছ থেকে সুপারিশের প্রয়োজন হবে । তবে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য (আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স) তাদের ভেটোর অধিকারের মাধ্যমে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেনি । এই ধরনের সুপারিশ পাওয়ার পর 193 সদস্য নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদকে অবশ্যই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে প্রস্তাবটি অনুমোদন করতে হবে ।
আরও পড়ুন:
এই বছরের এপ্রিলে আলজেরিয়া আরব গ্রুপের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি খুব সংক্ষিপ্ত রেজোলিউশন পেশ করেছিল ৷ যাতে লেখা ছিল: "রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে প্যালেস্তাইনের অন্তর্ভুক্তির জন্য নিরাপত্তা পরিষদ তাদের আবেদন পরীক্ষা করেছে এবং সুপারিশ করেছে যে, প্যালেস্তাইনকে রাষ্ট্রসংঘের সদস্যপদ দেওয়া হোক ।" 18 এপ্রিল 15 জন স্থায়ী সদস্যের মধ্যে 12 জন প্যালেস্তাইনের সদস্যপদের পক্ষে ভোট দেয় ৷ তবে শুধুমাত্র 2 জন ভোট থেকে বিরত থাকায় প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি ৷ কারণ ইজরায়েলের বন্ধু আমেরিকা ভেটো প্রয়োগ করেছিল । এর আগে 2011 সালেও ইউএনএসসিতে ঐকমত্যের অনুপস্থিতির কারণে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে ব্যর্থ হয়েছিল ।
অন্যদিকে প্যালেস্তাইনের মনোবল কয়েকগুন বেড়ে যায় যখন রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে 10তম জরুরি অধিবেশনে (9 মে, 2024) একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, যা নির্ধারণ করে যে প্যালেস্তাইন সনদের অধ্যায়ের 4 এর অধীনে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদকে প্যালেস্তাইনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনা করতে দেকথে বলা হয় ৷
প্যালেস্তাইনের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রবণতা শুভ সূচনা । এর থেকেই ইজরায়েলে এই বার্তা যায় যে, 7 অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ৷ তেমনই পালটা ইজরায়েলের নৃশংস প্রতিশোধের ফলে প্রাণহানির ঘটনাতেও তারা খুশি নয় । তবে এর ফলে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের বাস্তব ছবিটা পালটানোর সম্ভাবনা খুব কম এবং ভবিষ্যতেও এই সংঘাত শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না ।
আরও পড়ুন:
ইজরায়েল তার ঘনিষ্ঠ মিত্র আমেরিকা-সহ আন্তর্জাতিক চাপকে অগ্রাহ্য করছে এবং গাজায় তার সামরিক অভিযান বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে ৷ ইজরায়েল 1948 সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করছে বলে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে । আন্তর্জাতিক আদালত ইজরায়েলকে রাফাতে তার পরিকল্পিত কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও এটি মানার সম্ভাবনা খুবই কম । প্যালেস্তাইনীয়রা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে ৷
ভারত প্যালেস্তাইনের প্রতি তার নীতিতে অবিচল রয়েছে । ভারত যে তার অবস্থানে অনড় তা প্রতিফলিত হয়েছে চলতি বছরের 2 ফেব্রুয়ারি সংসদে দেশের বিদশ প্রতিমন্ত্রীর একটি প্রশ্নের উত্তরে ৷ যেখানে তিনি বলেছেন, "নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমানার মধ্যে প্যালেস্তাইনকে একটি সার্বভৌম, স্বাধীন ও কার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারত আলোচনার মাধ্যমে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যেকার সমস্যার সমাধানকে সমর্থন করেছে ।"
7 অক্টোবর 2023 সালে ইজরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করে ভারত । সম্প্রতি প্যালেস্তাইনকে নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে 10তম জরুরি বিশেষ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি চলমান ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির তীব্র নিন্দা করেছেন এবং তিনি যোগ করেছেন যে, সংঘর্ষের ফলে যে মানবিক সংকটের দেখা দিয়েছে তা কখনই গ্রহণযোগ্যনয় । ভারতের বিদেশমন্ত্রী ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং আলেচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সংঘর্ষের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপর জোর দিয়েছে ৷ পাশাপাশি হামাসের হাতে ইজরায়েলের অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে ভারতের তরফে ।
আরও পড়ুন: