হায়দরাবাদ, 3 মে: আন্তর্জাতিক মঞ্চে মার্কিন-চিন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, সামরিক ক্ষেত্রে অদৃশ্য 'ঠাণ্ডা লড়াই' কারও অজানা নয় ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সেই লড়াই আরও বড় আকার নিয়েছে ৷ বিশেষত দক্ষিণ চিন সাগর তথা বিশ্বব্যপী বেজিংয়ের কৌশলী মনোভাব এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ সেইসঙ্গে বৃহৎ পরিসরে ক্ষমতায়নের জন্য পশ্চিমী শক্তি, বিশেষত রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মধ্যে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অশান্তিকে তুরুপের তাস করেছে চিন ৷ ফলস্বরূপ দুটি পৃথক বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে ৷ একটিতে রয়েছে পশ্চিমের আধিপত্য ৷ অন্যদিকে রয়েছে, রাশিয়া, চিন, ইরান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া-এর মতো পশ্চিমী বিরোধী দেশগুলি ৷
পশ্চিম বিরোধী বলয়ে থেকে আমেরিকার বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছে চিন ৷ জাপানের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার পর 70-এর দশক থেকে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ সেইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ জাতীয়তাবাদী শক্তি দ্বারা পরিচালিত চিনের বিদেশনীতি বিংশ শতাব্দির শুরুতে দেশের উন্নতিতে সাহায্য করেছে ৷ বলা ভালো, শেষ কয়েক দশক ধরে স্থল এবং সামুদ্রিক ক্ষেত্রে, বিশেষত তাইওয়ান সমস্যা নিয়ে বেজিংয়ের অবস্থান যুদ্ধবাদী আচরণের দিকে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে ৷ তাইওয়ান সম্পর্কে মার্কিন গোয়ান্দা রিপোর্ট বলছে, 2027 সালের মধ্যে এই দ্বীপটিকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করার সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চিন ৷
প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব মার্কিন এবং চিন সম্পর্কের অবনতির প্রধান কারণ ৷ এই দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগীতার প্রধান কারণ ৷ বাইডেন সরকারের আমলে একাধিক চিনা প্রযুক্তি রফতানিতে মূলত দুটি কারণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা ৷ প্রথমত, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চিনের ব্যবহারকে উন্মুক্ত এবং সঠিক বলে মনে করে না মার্কিম প্রশাসন ৷ দ্বিতীয়ত, বেজিংয়ের উন্নত এবং জটিল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সংবেদনশীলতা রয়েছে, তা দেশের সুরক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করে আমেরিকা ৷ যার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দু-দেশের মধ্যে এক বিস্তর দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে ৷
বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতার জন্য আমেরিকা ও চিনের সম্পর্ক অপরিসীম তাৎপর্যপূর্ণতা বহন করে । এই সম্পর্কের ভাঙন বিশ্বের অর্থনীতি ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক পরিণতি হতে পারে ৷ বিশেষ করে ভারত-সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলিকে প্রভাবিত করবে ৷ সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন-চিন সম্পর্ক প্রতিযোগিতার একটি নতুন পর্যায়ে চলে গিয়েছে ৷ রাশিয়া এবং ইরানের প্রতি চিনের সমর্থন মার্কিন প্রশাসনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ আর সেকারণে সামরিক সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে পেন্টাগন ৷ এমনকি, সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর চিন সফরে বিষয়টি নিয়ে সেদেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ৷ রুশ-চিন সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, "মস্কোর সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে ৷" সেইসঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথাও উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে ৷ তবে এই সম্পর্কের প্রভাব পড়বে ভারতের উপর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের গুরুত্ব গত এক দশকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ বিশেষ করে বিশ্বের দুটি প্রধান অর্থনীতির সঙ্গে এর ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক তা প্রমাণ করে দেয় ৷ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে স্থান পেয়েছে ভারত ৷ অন্যদিকে, বিগত অর্ধ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় ধরে চিন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ককে বেশ নিপুণভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভারত ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আসলেও, চিনের সঙ্গে এর সম্পর্ক আরও সতর্ক হয়ে উঠেছে ৷ বিশেষ করেপ্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর 2020 সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক গতিশীলতার তীব্রতা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক উন্নতি এবং চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি-সহ এই গতিশীল পরিবেশের মধ্যে নিজেকে একটি সূক্ষ্ম অবস্থানে ধরে রাখতে হবে ভারতকে । 2008 সালের আর্থিক সংকটের অভিজ্ঞতা থেকে, ভারতের অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিস্থাপকতা এবং নিরোধকতা প্রদর্শন করেছে।
আরও পড়ুন: