ETV Bharat / opinion

ভূ-সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা - IMPORTANCE OF GEO CONSERVATION

10টি ভূতাত্ত্বিক স্থানের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কাছে পাঠানো হয়েছে।

Importance Of Geo Conservation
মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার লোনার হ্রদের ফাইল ছবি (এএনআই)
author img

By C P Rajendran

Published : Oct 7, 2024, 8:18 PM IST

কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি 10টি ভূতাত্ত্বিক স্থানের নাম আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা এএসআই-কে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঠিয়েছে । এটা স্বাগত জানানোর মতোই পদক্ষেপ ৷ কারণ, ভারতে ইউনেস্কো স্বীকৃত একটিও জিওপার্ক নেই ৷ যদিও ভারত ইউনেস্কো গ্লোবাল জিওপার্ক প্রতিষ্ঠার স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে একজন ।

জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা জিএসআই যে 32টি জিওলজিক্যাল হেরিটেজ সাইট বা ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্যবাহীকে ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল মনুমেন্টস বা জাতীয় ভূতাত্ত্বিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলি সংরক্ষণ করার জন্য একটি কৌশল নিতে সরকারের এই ছোট পদক্ষেপকে আরও বড় করা উচিত । ভারতের ভূ-বৈচিত্র্য দেশের অন্যান্য দিকগুলির মতোই বৈচিত্র্যময় ৷ এখানে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ থেকে উপকূলীয় টিলা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বৃহৎ অভ্যন্তরীণ জলাশয় এবং প্রবাল প্রাচীর দ্বীপও ৷ বিভিন্ন জায়গায়, আমরা বিভিন্ন ধরনের শিলা ও খনিজ পদার্থ এবং স্বতন্ত্র জীবাশ্মের সমাবেশও দেখতে পাই ।

ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের গুরুত্ব:

এই ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও ল্যান্ডস্কেপ, যেগুলি কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে, আমাদের পৃথিবীর দর্শনীয় উৎস এবং ভারতীয় ল্যান্ডমাসের বিবর্তনের গল্প বলে, যা আমরা আজকে দেখছি । জিও-হেরিটেজ সাইটগুলি হল শিক্ষামূলক স্থান, যেখানে খুব প্রয়োজনীয় ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করা যায় ৷ বিশেষ করে যখন এই উত্তরাধিকার সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে ভারতবাসীর বোঝাপড়া অত্যন্ত খারাপ । ভূতাত্ত্বিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত এই ধরনের এলাকাগুলি, অপরিকল্পিত রিয়েল এস্টেট বৃদ্ধির জন্য জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । ধ্বংসাত্মক পাথর খনির কার্যক্রমও এই দুর্দশাকে বাড়িয়ে দিয়েছে । ভারতের ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে, যদি নৃতাত্ত্বিক কার্যকলাপগুলিকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে দেওয়া হয় ।

ভারতের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও ঘটনাগুলির সেরা উদাহরণগুলির জন্য ভূতাত্ত্বিক সংরক্ষণ প্রয়োজন ৷ যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম বিশ্বের সেরা প্রাকৃতিক গবেষণাগার সম্পর্কে জানতে পারে ৷ দুর্ভাগ্যবশত, ভূতাত্ত্বিক সংরক্ষণ একটি উপেক্ষিত বিষয় হয়ে রয়ে গিয়েছে । যেটা তার প্রত্নতাত্ত্বিক অংশে দেখা যায় ৷

উদুপি ম্যাঙ্গালোরের সেন্ট মেরিজ দ্বীপে পাওয়া 60 মিলিয়ন বছরের পুরনো ব্যাসাল্ট কলাম, উত্তর-পশ্চিম গুজরাতের কচ্ছ সমভূমির ডাইনোসরিয়ান ফসিল সাইট, ত্রিচিনোপলি অঞ্চলের মতো অমূল্য ভূতাত্ত্বিক রত্নগুলির অপ্রত্যাশিতভাবে ধ্বংস হয়েছে ৷ এই ধরনের অনেক ঘটনা উদ্ধৃত করা যেতে পারে । তামিলনাড়ু, মূলত মেসোজোয়িক (200 মিলিয়ন বছর আগে) একটি মহাসাগর অববাহিকা ।

এগুলিকে প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে ঘোষণা করা উচিত ৷ কারণ, সেগুলি অস্বাভাবিক শিলার একটি ধরন এবং ভূমিরূপের প্রতিনিধিত্ব করে, যা ভূতাত্ত্বিক ঘটনাগুলির রেকর্ড সংরক্ষণ করে এবং পৃথিবী তৈরির প্রাথমিক অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা রয়েছে ৷ মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীতে স্বল্প-পরিচিত ধলা মেটিওরিটিক ইমপ্যাক্ট ক্রেটার সম্পর্কে আমরা কতজন জানি ? এটা দেড় থেকে আড়াই মিলিয়ন বছরের পুরনো ৷ এখানে থাকা গর্তটি প্রাণসৃষ্টির সময়ের একটি স্বর্গীয় সংঘর্ষের চিহ্ন হিসাবে সংরক্ষিত ছিল ৷ আরেকটি উদাহরণ হল, মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার আরও বিখ্যাত লোনার ক্রেটার, যেটি 50 হাজার বছর আগে একটি উল্কাপিণ্ডের সংঘর্ষের সময় গঠিত হয়েছিল ৷ এটা একটি বিজ্ঞাপিত ভূ-ঐতিহ্যের স্মৃতিস্তম্ভ ।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাম সেতু (শেঠসমুন্দ্রম)-এর বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে ৷ বঙ্গোপসাগরে অগভীর জলের প্রবাল দিয়ে তৈরি এই আকৃতি, যা তামিলনাড়ু উপকূল থেকে উত্তর শ্রীলঙ্কার দিকে বিস্তৃত । এই কাঠামোটি একটি সামুদ্রিক জীবজগতের মধ্যে পড়ে, যা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন । 22 হাজার বছর আগে হিমবাহের উচ্চতার ব্যবধানে, সেথুসমুন্দ্রমের কিছু অংশ-সহ ভারতীয় উপকূলের দীর্ঘ প্রসারিত অংশগুলি জলের উপরে উন্মুক্ত হয়েছিল ।

1200 থেকে 700 বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে নামার একটি সাম্প্রতিক পর্ব ঘটেছিল ৷ যাকে বলা হয় ‘লিটল আইস এজ’ । তারপর থেকে, সমুদ্রের স্তর উচ্চতর হয়েছে, যাতে প্রবাল পলিপগুলি নতুন নিমজ্জিত প্ল্যাটফর্মগুলিতে উচ্চতর হতে পারে । রাম সেতু এমনই একটি মহৎ প্রবাল পর্বতমালা । এটি একটি সম্ভাব্য ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্মৃতিস্তম্ভের আরেকটি উদাহরণ, যা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন । এই ধরনের সমস্ত বৈশিষ্ট্য আমাদের বলে যে আমরা যে ভূমির সঙ্গে এতটা পরিচিত, তা কীভাবে এসেছিল এবং এটা একটি ইতিহাসের বিবর্তনের অংশ, যা ভারতকে আজকের মতো তৈরি করেছে ।

আমাদের ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রথম আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম

আমাদের পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব 1991 সালে প্রথম স্বীকৃত হয়েছিল একটি ইউনেস্কো-স্পন্সর ইভেন্টে৷ যার নাম ছিল, ‘আমাদের ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রথম আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম’।

প্রতিনিধিরা ফ্রান্সের ডিগনে একত্রিত হন ও একটি শেয়ার করা উত্তরাধিকারের ধারণাকে সমর্থন করেন: "মানুষ এবং পৃথিবী একটি অভিন্ন ঐতিহ্য ভাগ করে নেয়, যার মধ্যে রয়েছি আমরা এবং আমাদের সরকার ৷ কিন্তু রক্ষক হিসেবে ৷" এই ঘোষণায় কানাডা, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিতে অনন্য ভূতাত্ত্বিক গুরুত্বের স্মারক হিসেবে জিও-পার্ক স্থাপনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল ।

এই জায়গাগুলি জিও-ট্যুরিজমেরও প্রচার করে, যা রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান তৈরি করে । জিও-হেরিটেজ সাইটগুলির নেটওয়ার্কও বিশ্ব ঐতিহ্য এবং জীবজগৎ কর্মসূচির পরিপূরক করার উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি । ইউনেস্কো জাতীয় জিও-পার্কের উন্নয়নের জন্য নির্দেশিকাও প্রদান করে, যাতে সেগুলি গ্লোবাল জিও-পার্ক নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে উঠতে পারে । আজ, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড-সহ 44টি দেশে 169টি গ্লোবাল জিও-পার্ক রয়েছে । ভারত এখনও এর অংশ হতে পারেনি ।

ভূ-সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও, ভারতে এই নিয়ে খুব বেশি আকর্ষণ খুঁজে পাওয়া পায়নি ৷ যদিও অতীতে সংসদে কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে । জিও-হেরিটেজ সাইটগুলিকে আইন ছাড়া সুরক্ষিত করা যায় না এবং এই জাতীয় প্রস্তাবগুলি অনুমোদনের অপেক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির কাছে রয়েছে ।

2009 সালে রাজ্যসভায় উত্থাপিত একটি বিলের মাধ্যমে জিও-হেরিটেজ সাইটগুলির জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠনের প্রচেষ্টা হয়েছিল । যদিও স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয় ৷ কিন্তু কিছু অনির্দিষ্ট কারণে কেন্দ্রীয় সরকার পিছিয়ে যায় এবং বিলটি প্রত্যাহার করে নেয় । 2019 সালে সোসাইটি অফ দ্য আর্থ সায়েন্টিস্টের পৃষ্ঠপোষকতায় ভূতাত্ত্বিকদের একটি দল জিও- হেরিটেজ সাইটগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি জাতীয় সংস্থার তত্ত্বাবধানে একটি জাতীয় সংরক্ষণ নীতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির কাছে আবেদন করেছিল ।

কিন্তু সরকারের উদাসীনতা অব্যাহত রয়েছে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া হল জিও-হেরিটেজ সাইটগুলির অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা । তাদের ওয়েবসাইট 32টি জায়গাকে নির্দেশ করে, যা সংরক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে । ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনায় ভূ-সংরক্ষণ একটি প্রধান নির্দেশক উপাদান হওয়া উচিত । এই ধরনের কৌশল সমর্থন করার জন্য একটি প্রগতিশীল আইনি কাঠামো প্রয়োজন । 1916 সালে আইনে স্বাক্ষরিত ইউএস ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের উদাহরণ অনুসরণ করে, ভূ-ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়ে ভারতে একটি ব্যাপক জাতীয় নীতির অভাব রয়েছে । আমাদের ‘নিয়তির সঙ্গে চেষ্টা’ বিলিয়ন বছর আগে রয়ে গিয়েছে ।

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি 10টি ভূতাত্ত্বিক স্থানের নাম আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা এএসআই-কে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঠিয়েছে । এটা স্বাগত জানানোর মতোই পদক্ষেপ ৷ কারণ, ভারতে ইউনেস্কো স্বীকৃত একটিও জিওপার্ক নেই ৷ যদিও ভারত ইউনেস্কো গ্লোবাল জিওপার্ক প্রতিষ্ঠার স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে একজন ।

জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা জিএসআই যে 32টি জিওলজিক্যাল হেরিটেজ সাইট বা ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্যবাহীকে ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল মনুমেন্টস বা জাতীয় ভূতাত্ত্বিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলি সংরক্ষণ করার জন্য একটি কৌশল নিতে সরকারের এই ছোট পদক্ষেপকে আরও বড় করা উচিত । ভারতের ভূ-বৈচিত্র্য দেশের অন্যান্য দিকগুলির মতোই বৈচিত্র্যময় ৷ এখানে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ থেকে উপকূলীয় টিলা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বৃহৎ অভ্যন্তরীণ জলাশয় এবং প্রবাল প্রাচীর দ্বীপও ৷ বিভিন্ন জায়গায়, আমরা বিভিন্ন ধরনের শিলা ও খনিজ পদার্থ এবং স্বতন্ত্র জীবাশ্মের সমাবেশও দেখতে পাই ।

ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের গুরুত্ব:

এই ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও ল্যান্ডস্কেপ, যেগুলি কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে, আমাদের পৃথিবীর দর্শনীয় উৎস এবং ভারতীয় ল্যান্ডমাসের বিবর্তনের গল্প বলে, যা আমরা আজকে দেখছি । জিও-হেরিটেজ সাইটগুলি হল শিক্ষামূলক স্থান, যেখানে খুব প্রয়োজনীয় ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করা যায় ৷ বিশেষ করে যখন এই উত্তরাধিকার সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে ভারতবাসীর বোঝাপড়া অত্যন্ত খারাপ । ভূতাত্ত্বিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত এই ধরনের এলাকাগুলি, অপরিকল্পিত রিয়েল এস্টেট বৃদ্ধির জন্য জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে । ধ্বংসাত্মক পাথর খনির কার্যক্রমও এই দুর্দশাকে বাড়িয়ে দিয়েছে । ভারতের ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে, যদি নৃতাত্ত্বিক কার্যকলাপগুলিকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে দেওয়া হয় ।

ভারতের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও ঘটনাগুলির সেরা উদাহরণগুলির জন্য ভূতাত্ত্বিক সংরক্ষণ প্রয়োজন ৷ যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম বিশ্বের সেরা প্রাকৃতিক গবেষণাগার সম্পর্কে জানতে পারে ৷ দুর্ভাগ্যবশত, ভূতাত্ত্বিক সংরক্ষণ একটি উপেক্ষিত বিষয় হয়ে রয়ে গিয়েছে । যেটা তার প্রত্নতাত্ত্বিক অংশে দেখা যায় ৷

উদুপি ম্যাঙ্গালোরের সেন্ট মেরিজ দ্বীপে পাওয়া 60 মিলিয়ন বছরের পুরনো ব্যাসাল্ট কলাম, উত্তর-পশ্চিম গুজরাতের কচ্ছ সমভূমির ডাইনোসরিয়ান ফসিল সাইট, ত্রিচিনোপলি অঞ্চলের মতো অমূল্য ভূতাত্ত্বিক রত্নগুলির অপ্রত্যাশিতভাবে ধ্বংস হয়েছে ৷ এই ধরনের অনেক ঘটনা উদ্ধৃত করা যেতে পারে । তামিলনাড়ু, মূলত মেসোজোয়িক (200 মিলিয়ন বছর আগে) একটি মহাসাগর অববাহিকা ।

এগুলিকে প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে ঘোষণা করা উচিত ৷ কারণ, সেগুলি অস্বাভাবিক শিলার একটি ধরন এবং ভূমিরূপের প্রতিনিধিত্ব করে, যা ভূতাত্ত্বিক ঘটনাগুলির রেকর্ড সংরক্ষণ করে এবং পৃথিবী তৈরির প্রাথমিক অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা রয়েছে ৷ মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীতে স্বল্প-পরিচিত ধলা মেটিওরিটিক ইমপ্যাক্ট ক্রেটার সম্পর্কে আমরা কতজন জানি ? এটা দেড় থেকে আড়াই মিলিয়ন বছরের পুরনো ৷ এখানে থাকা গর্তটি প্রাণসৃষ্টির সময়ের একটি স্বর্গীয় সংঘর্ষের চিহ্ন হিসাবে সংরক্ষিত ছিল ৷ আরেকটি উদাহরণ হল, মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার আরও বিখ্যাত লোনার ক্রেটার, যেটি 50 হাজার বছর আগে একটি উল্কাপিণ্ডের সংঘর্ষের সময় গঠিত হয়েছিল ৷ এটা একটি বিজ্ঞাপিত ভূ-ঐতিহ্যের স্মৃতিস্তম্ভ ।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাম সেতু (শেঠসমুন্দ্রম)-এর বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে ৷ বঙ্গোপসাগরে অগভীর জলের প্রবাল দিয়ে তৈরি এই আকৃতি, যা তামিলনাড়ু উপকূল থেকে উত্তর শ্রীলঙ্কার দিকে বিস্তৃত । এই কাঠামোটি একটি সামুদ্রিক জীবজগতের মধ্যে পড়ে, যা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন । 22 হাজার বছর আগে হিমবাহের উচ্চতার ব্যবধানে, সেথুসমুন্দ্রমের কিছু অংশ-সহ ভারতীয় উপকূলের দীর্ঘ প্রসারিত অংশগুলি জলের উপরে উন্মুক্ত হয়েছিল ।

1200 থেকে 700 বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে নামার একটি সাম্প্রতিক পর্ব ঘটেছিল ৷ যাকে বলা হয় ‘লিটল আইস এজ’ । তারপর থেকে, সমুদ্রের স্তর উচ্চতর হয়েছে, যাতে প্রবাল পলিপগুলি নতুন নিমজ্জিত প্ল্যাটফর্মগুলিতে উচ্চতর হতে পারে । রাম সেতু এমনই একটি মহৎ প্রবাল পর্বতমালা । এটি একটি সম্ভাব্য ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্মৃতিস্তম্ভের আরেকটি উদাহরণ, যা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন । এই ধরনের সমস্ত বৈশিষ্ট্য আমাদের বলে যে আমরা যে ভূমির সঙ্গে এতটা পরিচিত, তা কীভাবে এসেছিল এবং এটা একটি ইতিহাসের বিবর্তনের অংশ, যা ভারতকে আজকের মতো তৈরি করেছে ।

আমাদের ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রথম আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম

আমাদের পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব 1991 সালে প্রথম স্বীকৃত হয়েছিল একটি ইউনেস্কো-স্পন্সর ইভেন্টে৷ যার নাম ছিল, ‘আমাদের ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রথম আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম’।

প্রতিনিধিরা ফ্রান্সের ডিগনে একত্রিত হন ও একটি শেয়ার করা উত্তরাধিকারের ধারণাকে সমর্থন করেন: "মানুষ এবং পৃথিবী একটি অভিন্ন ঐতিহ্য ভাগ করে নেয়, যার মধ্যে রয়েছি আমরা এবং আমাদের সরকার ৷ কিন্তু রক্ষক হিসেবে ৷" এই ঘোষণায় কানাডা, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিতে অনন্য ভূতাত্ত্বিক গুরুত্বের স্মারক হিসেবে জিও-পার্ক স্থাপনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল ।

এই জায়গাগুলি জিও-ট্যুরিজমেরও প্রচার করে, যা রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান তৈরি করে । জিও-হেরিটেজ সাইটগুলির নেটওয়ার্কও বিশ্ব ঐতিহ্য এবং জীবজগৎ কর্মসূচির পরিপূরক করার উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি । ইউনেস্কো জাতীয় জিও-পার্কের উন্নয়নের জন্য নির্দেশিকাও প্রদান করে, যাতে সেগুলি গ্লোবাল জিও-পার্ক নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে উঠতে পারে । আজ, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড-সহ 44টি দেশে 169টি গ্লোবাল জিও-পার্ক রয়েছে । ভারত এখনও এর অংশ হতে পারেনি ।

ভূ-সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও, ভারতে এই নিয়ে খুব বেশি আকর্ষণ খুঁজে পাওয়া পায়নি ৷ যদিও অতীতে সংসদে কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে । জিও-হেরিটেজ সাইটগুলিকে আইন ছাড়া সুরক্ষিত করা যায় না এবং এই জাতীয় প্রস্তাবগুলি অনুমোদনের অপেক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির কাছে রয়েছে ।

2009 সালে রাজ্যসভায় উত্থাপিত একটি বিলের মাধ্যমে জিও-হেরিটেজ সাইটগুলির জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠনের প্রচেষ্টা হয়েছিল । যদিও স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হয় ৷ কিন্তু কিছু অনির্দিষ্ট কারণে কেন্দ্রীয় সরকার পিছিয়ে যায় এবং বিলটি প্রত্যাহার করে নেয় । 2019 সালে সোসাইটি অফ দ্য আর্থ সায়েন্টিস্টের পৃষ্ঠপোষকতায় ভূতাত্ত্বিকদের একটি দল জিও- হেরিটেজ সাইটগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি জাতীয় সংস্থার তত্ত্বাবধানে একটি জাতীয় সংরক্ষণ নীতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির কাছে আবেদন করেছিল ।

কিন্তু সরকারের উদাসীনতা অব্যাহত রয়েছে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া হল জিও-হেরিটেজ সাইটগুলির অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা । তাদের ওয়েবসাইট 32টি জায়গাকে নির্দেশ করে, যা সংরক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে । ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনায় ভূ-সংরক্ষণ একটি প্রধান নির্দেশক উপাদান হওয়া উচিত । এই ধরনের কৌশল সমর্থন করার জন্য একটি প্রগতিশীল আইনি কাঠামো প্রয়োজন । 1916 সালে আইনে স্বাক্ষরিত ইউএস ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের উদাহরণ অনুসরণ করে, ভূ-ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়ে ভারতে একটি ব্যাপক জাতীয় নীতির অভাব রয়েছে । আমাদের ‘নিয়তির সঙ্গে চেষ্টা’ বিলিয়ন বছর আগে রয়ে গিয়েছে ।

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.