ETV Bharat / opinion

বন সংরক্ষণ সংশোধনী আইন কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র, স্থগিতাদেশ জারি সুপ্রিম কোর্টের - Forest Conservation Act

Forest Amendment Act 2023: গত বছর সংসদের দুই কক্ষে বিরোধী পক্ষের চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও পাশ হয় ফরেস্ট অ্যামেন্ডমেন্ট অ্য়াক্ট 2023 ৷ এদিকে এই বিল অনুযায়ী 'বন'-এর সংজ্ঞা পালটে দেওয়া হয়েছে ৷ সুপ্রিম কোর্ট এই আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে ৷ এ নিয়ে লিখলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজের অধ্যাপক সিপি রাজেন্দ্রন ৷

ETV Bharat
বিজেপি সরকারের বন সংরক্ষণ সংশোধনী আইন সংরক্ষণ বিরোধী
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 22, 2024, 10:01 AM IST

হায়দরাবাদ, 22 ফেব্রুয়ারি: সংসদে ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল বা বন সংরক্ষণ সংশোধনী বিল পাশ হয় গত বছর ৷ এরপর বিল থেকে আইনও হয় ৷ এই আইনের বলে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন অছিলায় দেশের মোট জঙ্গল এলাকার 15 শতাংশ নিজের দখলে নিতে চায় ৷ এই জঙ্গলের জমিতে কর্পোরট সংস্থাগুলি ব্যবসা করবে। খনির কাজেও ব্যবহার করবে ৷ বিরোধীরা এ নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করলেও বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার তাতে ভ্রূক্ষেপ করেনি ৷ বিল পাশ হয়ে গিয়েছে ৷ এতে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ঝামেলায় যেতে চায়নি ৷ তাই স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে না-পাঠিয়ে বিলটি জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি বা জেপিসি-র কাছে পাঠিয়ে দেয় ৷ সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্ট 19 ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে ৷

বনের সংজ্ঞা কী ? কীভাবে একে ব্যাখ্যা করা যায় ?

এই একটি সংজ্ঞার মধ্যেই সংরক্ষণ সম্বন্ধীয় একাধিক সমস্যার সমাধান রয়েছে ৷ এমনকী 1980 সালের 25 অক্টোবর ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যাক্ট বা বন সংরক্ষণ আইনের বিষয়টিও ওই অন্তর্ভুক্ত ৷ 1995 সালে টিএন গোদাবর্মন নীলগিরি পর্বতকে বেআইনি কাঠ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচাতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন ৷ এই মামলার গুরুত্ব বুঝে আদালত ন্যাশনাল ফরেস্ট পলিসি সব দিক দিয়ে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় আদালত ৷ 1996 সালের 12 ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট একটি অন্তর্বর্তী নির্দেদশ দেয় ৷ এতে বন সংরক্ষণ আইনের কয়েকটি ধারার ব্যাখ্যা এবং তাকে কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা বিস্তারিত জানানো হয় ৷ আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, অভিধানে 'বন' শব্দটিকে যেভাবে বোঝানো হয়েছে, সেভাবেই বুঝতে হবে ৷ আর 'বনের জমি' শব্দবন্ধের অর্থ সরকারের রেকর্ডে যে অংশটি 'বন' হিসেবে উল্লেখ করা আছে সেটি ৷

এই মামলা 'গোদাবর্মন মামলা' নামে পরিচিত ৷ এই মামলার ফলে রাজ্যগুলিতে বনজঙ্গল, অভয়ারণ্য, জঙ্গল কেটে ফেলার বিষয়ে দেশের শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করে ৷ রাজ্য সরকার বনাঞ্চলের ক্ষেত্রে 'সংরক্ষিত' তকমা উঠিয়ে তাতে 'অসংরক্ষিত' করার চেষ্টা চালায় ৷ তাতে বনের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কাজেও বনের জমি ব্যবহার করা যায় ৷ এই চেষ্টা প্রতিরোধ করে দেশের শীর্ষ আদালত ৷

1996 সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় দেশের বন সংরক্ষণের জন্য বৈপ্লবিক ছিল ৷ এই আইন কার্যকর হওয়ার ফলে দেশের সর্বত্র বনজঙ্গল ও তার জমিতে খনি, কাঠ চেরাইয়ে কল তৈরি, নির্বিচারে গাছ কাটা-সহ নানাবিধ বেআইনি কাজকর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় ৷ তবে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশে ছাড়পত্র মিলবে বলে জানানো হয় ৷

জানা গিয়েছে, এই পদক্ষেপের জেরে বনাঞ্চলের বেআইনি ব্যবহার অনেকটাই কমে যায় ৷ 1951 থেকে 1980 সালে 4.3 মিলিয়ন বা 43 লক্ষ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে ৷ সেই অঙ্ক নেমে দাঁড়ায় 40 হাজার হেক্টরে ৷ উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি থেকে গাছ কেটে সেই কাঠ, গুঁড়ি, রেলপথে, সড়কপথে অথবা জলপথে পরিবহণের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয় ৷ রেল এবং প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি কাঠ ছাড়া অন্য কোনও সামগ্রী ব্যবহার করতে বাধ্য হয় ৷

এদিকে 2023 সালে মোদি সরকার এফসিএ বা বন সংরক্ষণ আইনে সংশোধন করে ৷ এতে আদালত নির্দেশিত বনের সংজ্ঞাতেও অনেকটাই বদল করা হয় ৷ পুরনো এফসিআই-তে বনের জমি রক্ষা এবং এর উৎসগুলিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আইনের রক্ষাকবচ ছিল ৷ তবে সংশোধিত আইনে সেই রক্ষাকবচ অনেকাংশেই তুলে নেয় বিজেপি সরকার ৷ এর আগে কোনও জমিকে 'বন' হিসেবে চিহ্নিত করলে তা এই আইনের আওতাভুক্ত হত ৷ সেগুলিকে সংরক্ষিত বন হিসেবেই ধরা হত ৷ 2023 সালের সংশোধিত বন সংরক্ষণ আইনে সক্রিয় চরমপন্থী রাজনৈতিক এলাকাগুলির কোথাও 10 হেক্টর, আবার কোথাও 5 হেক্টর জমিকে সংরক্ষণের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৷ এই এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা সঙ্গে সম্পর্কিত পরিকাঠামো তৈরি, প্রতিরক্ষা প্রজেক্ট, আধাসামরিক ক্যাম্প অথবা জনসাধারণের কাজে লাগবে এমন প্রজেক্টেও ব্যবহার করা যেতে পারে ৷

এই নতুন এফসিএ অনুযায়ী, রেল লাইন বা রাস্তার ধারে 0.10 হেক্টর পর্যন্ত বনের জমিকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৷ আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং লাইন অফ কন্ট্রোল বরাবর 100 কিমিকেও বনের জমি বলে ধরা হচ্ছে না ৷ এর ফলে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির যেখানে আন্তর্জাতিক সীমান্তে বন-জঙ্গল আছে তার উপর প্রভূত প্রভাব পড়বে ৷ এই নতুন সংশোধনে বলা হচ্ছে, সরকারের রেকর্ডে 1980 সালের 25 অক্টোবরের পরে যে জায়গাগুলিকে বন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলি এই আইনে বাদ পড়বে ৷ 1996 সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সরকারি রেকর্ডে যে জমিগুলি 'বন' বলে নিশ্চিত করা হয়েছে, তা আর কার্যকর থাকছে না ৷ যেমন মেঘালয়ের আন্তর্জাতিক সীমান্তের 100 কিমি পর্যন্ত বনাঞ্চল সরকার যে কোনও কাজে ব্যবহার করতে পারে ৷

পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সতর্ক করেছেন, এই আইন 1980 সালের বন সংরক্ষণ আইনের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী ৷ এমনকী গ্রাম সভার অধীনে 2006 সালের বনের অধিকার আইনের সঙ্গেও এর বিরোধ রয়েছে ৷ 19 ফেব্রুয়ারি আদালত যে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে ৷ এরপর সরকারের উচিত গোদাবর্মন মামলার রায়ে 'বন'-এর যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, তা গ্রহণ করা ৷ বনের আভিধানিক অর্থ অনুযায়ী সংজ্ঞাটি তৈরি হয় ৷

এছাড়া আদালত আরও জানিয়েছে, 31 মার্চের মধ্যে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে তাদের বনের জমির পরিমাণ কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে জমা দিতে হবে ৷ আর সেই তথ্য 15 এপ্রিলের মধ্যে ডিজিটাল ডেটায় পরিণত করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবে মন্ত্রক ৷ শীর্ষ আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, আদালতের অনুমতি ছাড়া বনে কোনও চিড়িয়াখানা বা সাফারি তৈরি করতে পারবে না সরকার ৷ এফসিএ-র সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি 19 জুলাই ৷

গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ৷ এই তত্ত্বের জোরেই বিশ্বজুড়ে বনাঞ্চল রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ৷ 2017 সালে রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ সভায় 'ইউএন স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর ফরেস্টস 2023'-কে মান্যতা দিয়েছে ৷ জলবায়ু সম্মেলনে ভারত প্রতিজ্ঞা করেছে, 2030 সালের মধ্যে বন নিধন বা ধ্বংস বন্ধ হবে ৷ এর একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে বন সংরক্ষণ ৷ এদিকে এফসিএ 2023 এই লক্ষ্যের বিরুদ্ধে ৷ সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ অবশ্য বন সংরক্ষণ নিয়ে আশা জাগিয়েছে ৷ এই সময় ডেসমন্ত টুটুর উক্তি মনে করা বলাই যায়, 'আশাই একমাত্র গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে আলো দেখাতে পারে ৷'

আরও পড়ুন:

  1. 12 বছর পরে সুন্দরবনে কুমির-শুমারি, সংখ্যা বৃদ্ধির আশা বন দফতরের
  2. বন দফতরের বিরুদ্ধে সোচ্চার মৎস্যজীবীরা, পাথরপ্রতিমায় নদীপথ আটকে বিক্ষোভ
  3. প্রতীক্ষা শেষ! বেঙ্গল সাফারিতে এল 'আকবর', সঙ্গে আর কে কে ?

হায়দরাবাদ, 22 ফেব্রুয়ারি: সংসদে ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল বা বন সংরক্ষণ সংশোধনী বিল পাশ হয় গত বছর ৷ এরপর বিল থেকে আইনও হয় ৷ এই আইনের বলে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন অছিলায় দেশের মোট জঙ্গল এলাকার 15 শতাংশ নিজের দখলে নিতে চায় ৷ এই জঙ্গলের জমিতে কর্পোরট সংস্থাগুলি ব্যবসা করবে। খনির কাজেও ব্যবহার করবে ৷ বিরোধীরা এ নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করলেও বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার তাতে ভ্রূক্ষেপ করেনি ৷ বিল পাশ হয়ে গিয়েছে ৷ এতে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ঝামেলায় যেতে চায়নি ৷ তাই স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে না-পাঠিয়ে বিলটি জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি বা জেপিসি-র কাছে পাঠিয়ে দেয় ৷ সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্ট 19 ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে ৷

বনের সংজ্ঞা কী ? কীভাবে একে ব্যাখ্যা করা যায় ?

এই একটি সংজ্ঞার মধ্যেই সংরক্ষণ সম্বন্ধীয় একাধিক সমস্যার সমাধান রয়েছে ৷ এমনকী 1980 সালের 25 অক্টোবর ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যাক্ট বা বন সংরক্ষণ আইনের বিষয়টিও ওই অন্তর্ভুক্ত ৷ 1995 সালে টিএন গোদাবর্মন নীলগিরি পর্বতকে বেআইনি কাঠ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচাতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন ৷ এই মামলার গুরুত্ব বুঝে আদালত ন্যাশনাল ফরেস্ট পলিসি সব দিক দিয়ে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় আদালত ৷ 1996 সালের 12 ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট একটি অন্তর্বর্তী নির্দেদশ দেয় ৷ এতে বন সংরক্ষণ আইনের কয়েকটি ধারার ব্যাখ্যা এবং তাকে কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা বিস্তারিত জানানো হয় ৷ আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, অভিধানে 'বন' শব্দটিকে যেভাবে বোঝানো হয়েছে, সেভাবেই বুঝতে হবে ৷ আর 'বনের জমি' শব্দবন্ধের অর্থ সরকারের রেকর্ডে যে অংশটি 'বন' হিসেবে উল্লেখ করা আছে সেটি ৷

এই মামলা 'গোদাবর্মন মামলা' নামে পরিচিত ৷ এই মামলার ফলে রাজ্যগুলিতে বনজঙ্গল, অভয়ারণ্য, জঙ্গল কেটে ফেলার বিষয়ে দেশের শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করে ৷ রাজ্য সরকার বনাঞ্চলের ক্ষেত্রে 'সংরক্ষিত' তকমা উঠিয়ে তাতে 'অসংরক্ষিত' করার চেষ্টা চালায় ৷ তাতে বনের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কাজেও বনের জমি ব্যবহার করা যায় ৷ এই চেষ্টা প্রতিরোধ করে দেশের শীর্ষ আদালত ৷

1996 সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় দেশের বন সংরক্ষণের জন্য বৈপ্লবিক ছিল ৷ এই আইন কার্যকর হওয়ার ফলে দেশের সর্বত্র বনজঙ্গল ও তার জমিতে খনি, কাঠ চেরাইয়ে কল তৈরি, নির্বিচারে গাছ কাটা-সহ নানাবিধ বেআইনি কাজকর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় ৷ তবে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশে ছাড়পত্র মিলবে বলে জানানো হয় ৷

জানা গিয়েছে, এই পদক্ষেপের জেরে বনাঞ্চলের বেআইনি ব্যবহার অনেকটাই কমে যায় ৷ 1951 থেকে 1980 সালে 4.3 মিলিয়ন বা 43 লক্ষ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে ৷ সেই অঙ্ক নেমে দাঁড়ায় 40 হাজার হেক্টরে ৷ উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি থেকে গাছ কেটে সেই কাঠ, গুঁড়ি, রেলপথে, সড়কপথে অথবা জলপথে পরিবহণের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয় ৷ রেল এবং প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি কাঠ ছাড়া অন্য কোনও সামগ্রী ব্যবহার করতে বাধ্য হয় ৷

এদিকে 2023 সালে মোদি সরকার এফসিএ বা বন সংরক্ষণ আইনে সংশোধন করে ৷ এতে আদালত নির্দেশিত বনের সংজ্ঞাতেও অনেকটাই বদল করা হয় ৷ পুরনো এফসিআই-তে বনের জমি রক্ষা এবং এর উৎসগুলিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আইনের রক্ষাকবচ ছিল ৷ তবে সংশোধিত আইনে সেই রক্ষাকবচ অনেকাংশেই তুলে নেয় বিজেপি সরকার ৷ এর আগে কোনও জমিকে 'বন' হিসেবে চিহ্নিত করলে তা এই আইনের আওতাভুক্ত হত ৷ সেগুলিকে সংরক্ষিত বন হিসেবেই ধরা হত ৷ 2023 সালের সংশোধিত বন সংরক্ষণ আইনে সক্রিয় চরমপন্থী রাজনৈতিক এলাকাগুলির কোথাও 10 হেক্টর, আবার কোথাও 5 হেক্টর জমিকে সংরক্ষণের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৷ এই এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা সঙ্গে সম্পর্কিত পরিকাঠামো তৈরি, প্রতিরক্ষা প্রজেক্ট, আধাসামরিক ক্যাম্প অথবা জনসাধারণের কাজে লাগবে এমন প্রজেক্টেও ব্যবহার করা যেতে পারে ৷

এই নতুন এফসিএ অনুযায়ী, রেল লাইন বা রাস্তার ধারে 0.10 হেক্টর পর্যন্ত বনের জমিকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৷ আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং লাইন অফ কন্ট্রোল বরাবর 100 কিমিকেও বনের জমি বলে ধরা হচ্ছে না ৷ এর ফলে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির যেখানে আন্তর্জাতিক সীমান্তে বন-জঙ্গল আছে তার উপর প্রভূত প্রভাব পড়বে ৷ এই নতুন সংশোধনে বলা হচ্ছে, সরকারের রেকর্ডে 1980 সালের 25 অক্টোবরের পরে যে জায়গাগুলিকে বন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলি এই আইনে বাদ পড়বে ৷ 1996 সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সরকারি রেকর্ডে যে জমিগুলি 'বন' বলে নিশ্চিত করা হয়েছে, তা আর কার্যকর থাকছে না ৷ যেমন মেঘালয়ের আন্তর্জাতিক সীমান্তের 100 কিমি পর্যন্ত বনাঞ্চল সরকার যে কোনও কাজে ব্যবহার করতে পারে ৷

পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সতর্ক করেছেন, এই আইন 1980 সালের বন সংরক্ষণ আইনের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী ৷ এমনকী গ্রাম সভার অধীনে 2006 সালের বনের অধিকার আইনের সঙ্গেও এর বিরোধ রয়েছে ৷ 19 ফেব্রুয়ারি আদালত যে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে ৷ এরপর সরকারের উচিত গোদাবর্মন মামলার রায়ে 'বন'-এর যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, তা গ্রহণ করা ৷ বনের আভিধানিক অর্থ অনুযায়ী সংজ্ঞাটি তৈরি হয় ৷

এছাড়া আদালত আরও জানিয়েছে, 31 মার্চের মধ্যে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে তাদের বনের জমির পরিমাণ কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে জমা দিতে হবে ৷ আর সেই তথ্য 15 এপ্রিলের মধ্যে ডিজিটাল ডেটায় পরিণত করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবে মন্ত্রক ৷ শীর্ষ আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, আদালতের অনুমতি ছাড়া বনে কোনও চিড়িয়াখানা বা সাফারি তৈরি করতে পারবে না সরকার ৷ এফসিএ-র সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি 19 জুলাই ৷

গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ৷ এই তত্ত্বের জোরেই বিশ্বজুড়ে বনাঞ্চল রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ৷ 2017 সালে রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ সভায় 'ইউএন স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর ফরেস্টস 2023'-কে মান্যতা দিয়েছে ৷ জলবায়ু সম্মেলনে ভারত প্রতিজ্ঞা করেছে, 2030 সালের মধ্যে বন নিধন বা ধ্বংস বন্ধ হবে ৷ এর একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে বন সংরক্ষণ ৷ এদিকে এফসিএ 2023 এই লক্ষ্যের বিরুদ্ধে ৷ সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ অবশ্য বন সংরক্ষণ নিয়ে আশা জাগিয়েছে ৷ এই সময় ডেসমন্ত টুটুর উক্তি মনে করা বলাই যায়, 'আশাই একমাত্র গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে আলো দেখাতে পারে ৷'

আরও পড়ুন:

  1. 12 বছর পরে সুন্দরবনে কুমির-শুমারি, সংখ্যা বৃদ্ধির আশা বন দফতরের
  2. বন দফতরের বিরুদ্ধে সোচ্চার মৎস্যজীবীরা, পাথরপ্রতিমায় নদীপথ আটকে বিক্ষোভ
  3. প্রতীক্ষা শেষ! বেঙ্গল সাফারিতে এল 'আকবর', সঙ্গে আর কে কে ?
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.