হায়দরাবাদ, 30 এপ্রিল: 2015 সালে বেশ ধুমধামের সঙ্গে পিপলস লিবারেশন আর্মি-র সংস্কারের অংশ হিসেবে স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স (এসএসএফ) তৈরি করেন চিনের প্রেসিডেমন্ট শি জিনপিং ৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির সঙ্গে লড়াইয়ে মহাকাশ, সাইবার এবং তথ্য-প্রযুক্তির তিন গুরুত্বপূর্ণ দফতরকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আনার জন্যই বিশেষ এই ফোর্সের উৎপত্তি ৷ গত 19 এপ্রিল বিশেষ এই শাখার সমাপ্তি ঘোষণা করে জিনপিং সরকার ৷ বদলে তৈরি করা হয় তিনটি স্বাধীন শাখা, ইনফরমেশন সাপোর্ট ফোর্স (আইএসএফ), সাইবারস্পেস ফোর্স এবং অ্যারোস্পেস ফোর্স ৷
প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের দ্বারা পরিচালিত সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) অধীনে সরাসরি কাজ করবে এই তিন শাখা ৷ অর্থাৎ দিনের শেষে সেনা, নৌসেনা, বায়ুসেনা এবং রকেট বাহিনী ছাড়াও চারটি স্বতন্ত্র শাখা পেল পিএলএ ৷ সেইসঙ্গে এই ঘোষণার মাধ্যমে চিন সরকার এও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে পরিবর্তনশীল আবহে তাদের প্রধান আগ্রহ ঠিক কোথায় ৷ যদিও এপ্রিলে ঘোষণার আগে বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনার প্রয়োজনীয়তা ছিল ৷ তবে বেজিংয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কোনও দিন কাজ করে না ৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বেশ সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে চিন ৷
সম্প্রতি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাইবারস্পেস ফোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বেজিংয়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ৷ তাঁর কথায়, "দেশের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা জরুরি ৷ তার জন্য সাইবার সুরক্ষার জাল কেটে এই ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে ৷ আর সেই কাজটাই করে সাইবারস্পেস ফোর্স ৷" পাশাপাশি অ্যারোস্পেস ফোর্স নিয়ে তাঁর বক্তব্য, মহাকাশে অবাধে বিচরনের জন্যই দেশের নিরাপত্তায় এই শক্তির জন্ম ৷ বলে রাখা ভালো, আগামিদিনে মহাকাশেই শক্তি প্রদর্শন করবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি বলে মনে করা হয় ৷ অত্যাধুনিক অস্ত্রে শক্তিধারী দেশগুলি এমনকি ভারতেরও মহাকাশে পৃথক নজরদারি ব্যবস্থা রয়েছে ৷ সম্প্রতি ভারতীয় সেনার চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনীল চৌহান বলেন, "খুব শীঘ্রই সেনার তিন শক্তির উপর প্রভাব ফেলবে এই মহাকাশ শক্তি ৷"
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একাধিকবার যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারত এবং চিনের মধ্যে ৷ ডোকলাম, লাদাখ, কিংবা অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা সেই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট মাত্র ৷ তবে আর ত্রিস্তরীয় রণনীতি নয়, আগামিদিনে ইনফরমেশন সাপোর্ট ফোর্স (আইএসএফ)-এর মাধ্যমেই এই যুদ্ধ করতে চলেছে বেজিং ৷ কারণ, সেনার এই শাখার ক্ষমতা সরাসরি রয়েছে জিনপিংয়ের হাতে ৷
ভারত তার পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে নিজস্ব মহাকাশ এবং সাইবার কমান্ড তৈরি করেছে । এই কমান্ডগুলি ইসরো (ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন) এবং ডিআরডিও (প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা) সঙ্গে সমন্বয় কাজ করবে।
সম্প্রতি, ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরি বলেন, "স্থল, নৌ, বায়ু, সাইবার এবং মহাকাশ ডোমেনের ঐতিহ্যগত সীমানা ক্রমবর্ধমানভাবে অস্পষ্ট হয়ে উঠছে, যা চিনা পুনর্গঠনে একটি দৃষ্টান্তের পরিবর্তন এনেছে ।" সম্ভবত, পিএলএ-এর মধ্যে এই ক্ষেত্রগুলিকে যৌথভাবে ক্ষমতায়ন করার লক্ষ্যেই স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স বিভক্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিন ।
আরও পড়ুন: