সাম্প্রতিক নির্বাচন শেষে আর কোনও সন্দেহ নেই যে ভারতীয় নাগরিকরা প্রাণবন্তভাবে নির্বাচনী অধিকার প্রয়োগ করেছেন ৷ এই নির্বাচনের ফলাফল এনডিএ জোটের পক্ষে গিয়েছে ৷ সেই সঙ্গে বিরোধী পক্ষ আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে ৷ এটা সত্যিই ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর ৷ তবে, নতুন কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে যা আকর্ষণীয়, তা হল কেবলমাত্র উন্নত শাসনের জন্য তারা শক্তিশালী সংকল্প গ্রহণ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ও বিবেচনার পরিস্থিতি তৈরি করছে ৷
আমি বলতে চাই, গণতন্ত্র এবং শাসন ব্যবস্থার কাজগুলি পরস্পরবিরোধী হতে পারে ৷ কিন্তু, শক্তিশালী গণতন্ত্র নিজেই সুশাসনের লক্ষণ ৷ কারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াযর মধ্যেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া জড়িত, যা সময়সাপেক্ষ ৷ দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্র সবসময় অগোছালো রাজনীতি পরিবেশ তৈরি করে ৷ এই দুটি বিষয় 'শাসনকে' শব্দের নিরিখে 'নয়া-উদারনৈতিক' করে তোলে ৷
প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে শাসন ব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রশাসন ও অর্থনীতিতে নয়া-উদারনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে কঠোর বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় সরকারকে ৷ নয়া-উদারনৈতিক শাসন সংস্কারের বিরোধিতা শুধু বিরোধী দলগুলি নয়, আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন স্তর-সহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের তরফেও হয়ে থাকে ৷ উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে নয়া-উদারনৈতিক সংস্কারের অভিজ্ঞতা বলছে, সেই সমস্ত সরকার শাসনের সঠিক পথ খুঁজতে ব্যর্থ ক্ষমতার অভাবের কারণে ৷
উন্নয়ন সাহিত্য হামেশাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে কার্যকর শাসন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সঠিকভাবে পরিচালনা করা, একটি সরলরৈখিক প্রক্রিয়া নয় ৷ প্রক্রিয়াটি সবসময়ই পুনরাবৃত্তিমূলক বলে পরিচিত ৷ গণতন্ত্রে আলোচনা, সমঝতা ও অনুপ্রেরণা জড়িয়ে রয়েছে ৷ উদারপন্থী গণতন্ত্র, 'আলোচনার মাধ্যমে সরকার' হিসেবে পরিচিত ৷ আর নয়া এনডিএ সরকার এবং তার শরিকরা সরকার চালিয়ে যেতে চাইলে, এই পন্থাগুলিকে অবলম্বন করতেই হবে ৷
বিশেষ করে জোট সরকারের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য, যেখানে শরিক দলগুলির দাবি এবং জোটের অভ্যন্তরীণ স্বার্থকে বিরোধী দলগুলির সমালোচনার মতোই গুরুত্ব দিতে হয় ৷ একজন অনুমানের বশেই বলছিলেন, "যে গণতন্ত্র যত শক্তিশালী হবে, তার শাসন প্রক্রিয়া ততই অগোছালো হবে ৷" সেক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় স্তরে, উদারপন্থী গণতন্ত্রে সরকার শাসন প্রক্রিয়াকে লাগামহীনভাবে পরিচালনা করতে পারে না ৷
এখানেই আমাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ৷ রাজ্য হোক বা কেন্দ্র, নতুন সরকার সংসদ এবং বিধানসভার মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকে অগ্রাহ্য করতে পারে না ৷ এখানে সংসদের উচিত রাজ্যের বিধানসভাগুলির জন্য 'আলোচনার মাধ্যমে সরকার'-কে, একটি মডেল হিসেবে তুলে ধরা ৷ এখানে বিরোধী দলের সাংসদদের যে কোনওভাবে বরখাস্ত করা যায় না ৷ নতুন সরকারের যা প্রয়োজন তা হল, নীরবিচ্ছিন্ন ও সচেতনভাবে সত্যকে তুলে ধরা ৷ যার জন্য জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছে ৷
সবশেষে, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধিন সংস্থাগুলির মাধ্যমে বিরোধীদের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়াকে, কার্যকরী শাসন প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল ৷ আর এই সংস্থাগুলিকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করার পরিণতি হল, বিরোধী দলগুলি ফের একবার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এই নির্বাচনের পর ৷ এর ফলে যা প্রয়োজন তা হল, ভারতের মতো গণতন্ত্রে শাসন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য খুবই সচেতনভাবে একটি যত্নশীল এবং ক্যালিব্রেটেড পদ্ধতিতে নীতিগুলি কার্যকর করতে হবে ৷ একার সিদ্ধান্তে কোনও নীতি প্রয়োগ করতে গেলে, শুধুমাত্র সরকারের পরিবর্তন হতে পারে ৷