ETV Bharat / opinion

ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সবচেয়ে এগিয়ে 140 কোটির দেশ, পড়ুন বিশ্লেষণ - Superpower in Indian Ocean

Superpower in Indian Ocean: ভারত মহাসাগর বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির কাছে অমূল্য সম্পদ ৷ আর সেই সম্পদের দখল নিতে মরিয়া চিন, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলি ৷ কিন্তু, সেখানেই ভারত মহাসাগরের রক্ষাকর্তা হয়ে কাজ করে চলেছে ভারতের নৌবাহিনী ৷ কীভাবে এই কাজ দিনের পর দিন করছে, ভারতীয় নৌসেনা ? সেই নিয়ে নিজের মতামত লিখছেন, অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জিতেন্দ্র কুমার ত্রিপাঠী ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 13, 2024, 6:01 AM IST

হায়দরাবাদ, 12 এপ্রিল: ভারত মহাসাগরে বিশ্বের সুপার-পাওয়ারগুলির মধ্যে বাড়তে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই অঞ্চলের কূটনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলছে ৷ এখনও পর্যন্ত ভারত মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত শান্ত এবং অপরিলক্ষ্যিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল আধিপত্যের প্রতিযোগিতার সাক্ষী থাকতে চলেছে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন একে অপরের বিরুদ্ধে কৌশলগত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ এর প্রধান কারণ, এই অঞ্চলে কেবল নৌবাহিনী শক্তির দিক থেকে নয়, বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল, মৎস্যজীবী ও সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে খনিজ সম্পদের দখল নেওয়া ৷

ক্ষুদ্র উপকূলীয় দেশ জিবুতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান ও চিনের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ঘাঁটি রয়েছে দিয়াগো গার্সিয়াতে ৷ এটি চাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ ৷ যা নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন এবং মরিশাসের মধ্যে মতোবিরোধ রয়েছে ৷ অন্যদিকে, জিবুতিতে চিনের অপারেশনাল ঘাঁটি রয়েছে এবং গ্রেট কোকো দ্বীপে (বঙ্গোপসাগরের নিকোবর দ্বীপ থেকে মাত্র 60 কিলোমিটার দক্ষিণে) একটি এবং বালুচিস্তানের উপকূলীয় শহর গোয়াদরে আরেকটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে ৷ যেটি 1950-এর দশকে ওমান ভারতকে সেখানে ঘাঁটি গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ৷ কিন্তু, পরবর্তীতে ভারত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ৷ যার ফলে পাকিস্তান সেই দ্বীপটি কিনে নেয় ৷

এছাড়া, চিনকে ঋণের একাংশ পরিশোধের পরিবর্তে হাম্বানটোটা বন্দর দীর্ঘমেয়াদি লিজে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা ৷ যা ড্রাগন কান্ট্রি সামরিক কাজে ব্যবহার করবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ একইভাবে চিন মলদ্বীপকে তাদের কয়েকটি দ্বীপ চিনা নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে যাচ্ছে ৷ উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের একটা বৃহত্তর অংশ ভারতের হাতে রয়েছে (7,600 কিলোমিটার) ৷ স্বাভাবিকভাবেই ভারত মহাসাগর অঞ্চলে উদ্ধার ও ত্রাণের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য ভারতের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব রয়েছে ৷

মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই যে 1987 সালের নভেম্বরে যখন মলদ্বীপ দখল করা হয়েছিল, তখন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীই প্রথম মলদ্বীপের জরুরি আবেদনে মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দিয়েছিল এবং দেশটিকে একটি সম্ভাব্য অভ্যুত্থান থেকে বাঁচিয়েছিল ৷ আবার, চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকে, যখন সুনামি ভারত মহাসাগরের দেশগুলিতে আঘাত হানে, তখন ভারত শুধুমাত্র নিজেদের অংশের সফল উদ্ধার ও ত্রাণ পরিষেবার কাজ পরিচালনা করেনি ৷ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে সবার আগে সাহায্য় করেছিল ৷ সম্প্রতি করোনা অতিমারি চলাকালীন, আমরা আমাদের সমস্ত প্রতিবেশী এবং ভারত মহাসাগরের উপকূলের দেশগুলিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছি ৷

ভৌগোলিক অবস্থান এবং তার নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর বহরের কারণে, ভারত মহাসাগরে মার্কেন্টাইল ন্যাভিগেশনকে নিরাপদ করার প্রচেষ্টায় নিযুক্ত রয়েছে ভারত ৷ আরব সাগরে সাম্প্রতিক সময়ে সোমালিয়ান দস্যুদের দ্বারা বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য জাহানের হামলার ঘটনায় ভারতীয় নৌসেনা সবার আগে উদ্ধার কাজে নেমেছে এবং সাফল্য লাভ করেছে ৷ উল্লেখ্য, এর জন্য প্রাথমিকভাবে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছি ৷ যেখানে বেশ কয়েকটি দেশের নৌবাহিনীকে নিয়ে এই ফোর্স গঠন করা হয় ৷ কিন্তু, সেটি পুরোপুরিভাবে সাফল্য পায়নি ৷

তবে, ভারত এককভাবে এই অঞ্চলে জলদস্যুদের মোকাবিলায় খুবই সফল ৷ 2019 সালে গল্ফ কান্ট্রি ওমানের জলসীমানায় একটি বাণিজ্যিক জাহাজকে জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করতে ভারতীয় নৌবাহিনী 'অপারেশন সংকল্প' অভিযানে নেমে সাফল্য পায় ৷

আরও পড়ুন:

  1. স্বাস্থ্যই সম্পদ ! স্কুলই তার পাঠ দেয়, তৈরি হয় ভবিষ্যতের ভিত্তি
  2. ভারতীয় নৌবাহিনীর জলদস্যু বিরোধী অভিযান, নজরে লোহিত সাগরের সমস্যা
  3. বিকশিত ভারতের পথ সুগম করে উদ্ভাবন, পড়ুন বিশ্লেষণ

হায়দরাবাদ, 12 এপ্রিল: ভারত মহাসাগরে বিশ্বের সুপার-পাওয়ারগুলির মধ্যে বাড়তে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই অঞ্চলের কূটনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলছে ৷ এখনও পর্যন্ত ভারত মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত শান্ত এবং অপরিলক্ষ্যিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল আধিপত্যের প্রতিযোগিতার সাক্ষী থাকতে চলেছে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন একে অপরের বিরুদ্ধে কৌশলগত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ এর প্রধান কারণ, এই অঞ্চলে কেবল নৌবাহিনী শক্তির দিক থেকে নয়, বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল, মৎস্যজীবী ও সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে খনিজ সম্পদের দখল নেওয়া ৷

ক্ষুদ্র উপকূলীয় দেশ জিবুতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান ও চিনের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ঘাঁটি রয়েছে দিয়াগো গার্সিয়াতে ৷ এটি চাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ ৷ যা নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন এবং মরিশাসের মধ্যে মতোবিরোধ রয়েছে ৷ অন্যদিকে, জিবুতিতে চিনের অপারেশনাল ঘাঁটি রয়েছে এবং গ্রেট কোকো দ্বীপে (বঙ্গোপসাগরের নিকোবর দ্বীপ থেকে মাত্র 60 কিলোমিটার দক্ষিণে) একটি এবং বালুচিস্তানের উপকূলীয় শহর গোয়াদরে আরেকটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে ৷ যেটি 1950-এর দশকে ওমান ভারতকে সেখানে ঘাঁটি গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ৷ কিন্তু, পরবর্তীতে ভারত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ৷ যার ফলে পাকিস্তান সেই দ্বীপটি কিনে নেয় ৷

এছাড়া, চিনকে ঋণের একাংশ পরিশোধের পরিবর্তে হাম্বানটোটা বন্দর দীর্ঘমেয়াদি লিজে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা ৷ যা ড্রাগন কান্ট্রি সামরিক কাজে ব্যবহার করবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ একইভাবে চিন মলদ্বীপকে তাদের কয়েকটি দ্বীপ চিনা নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে যাচ্ছে ৷ উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের একটা বৃহত্তর অংশ ভারতের হাতে রয়েছে (7,600 কিলোমিটার) ৷ স্বাভাবিকভাবেই ভারত মহাসাগর অঞ্চলে উদ্ধার ও ত্রাণের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য ভারতের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব রয়েছে ৷

মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই যে 1987 সালের নভেম্বরে যখন মলদ্বীপ দখল করা হয়েছিল, তখন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীই প্রথম মলদ্বীপের জরুরি আবেদনে মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দিয়েছিল এবং দেশটিকে একটি সম্ভাব্য অভ্যুত্থান থেকে বাঁচিয়েছিল ৷ আবার, চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকে, যখন সুনামি ভারত মহাসাগরের দেশগুলিতে আঘাত হানে, তখন ভারত শুধুমাত্র নিজেদের অংশের সফল উদ্ধার ও ত্রাণ পরিষেবার কাজ পরিচালনা করেনি ৷ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে সবার আগে সাহায্য় করেছিল ৷ সম্প্রতি করোনা অতিমারি চলাকালীন, আমরা আমাদের সমস্ত প্রতিবেশী এবং ভারত মহাসাগরের উপকূলের দেশগুলিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছি ৷

ভৌগোলিক অবস্থান এবং তার নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর বহরের কারণে, ভারত মহাসাগরে মার্কেন্টাইল ন্যাভিগেশনকে নিরাপদ করার প্রচেষ্টায় নিযুক্ত রয়েছে ভারত ৷ আরব সাগরে সাম্প্রতিক সময়ে সোমালিয়ান দস্যুদের দ্বারা বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য জাহানের হামলার ঘটনায় ভারতীয় নৌসেনা সবার আগে উদ্ধার কাজে নেমেছে এবং সাফল্য লাভ করেছে ৷ উল্লেখ্য, এর জন্য প্রাথমিকভাবে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছি ৷ যেখানে বেশ কয়েকটি দেশের নৌবাহিনীকে নিয়ে এই ফোর্স গঠন করা হয় ৷ কিন্তু, সেটি পুরোপুরিভাবে সাফল্য পায়নি ৷

তবে, ভারত এককভাবে এই অঞ্চলে জলদস্যুদের মোকাবিলায় খুবই সফল ৷ 2019 সালে গল্ফ কান্ট্রি ওমানের জলসীমানায় একটি বাণিজ্যিক জাহাজকে জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করতে ভারতীয় নৌবাহিনী 'অপারেশন সংকল্প' অভিযানে নেমে সাফল্য পায় ৷

আরও পড়ুন:

  1. স্বাস্থ্যই সম্পদ ! স্কুলই তার পাঠ দেয়, তৈরি হয় ভবিষ্যতের ভিত্তি
  2. ভারতীয় নৌবাহিনীর জলদস্যু বিরোধী অভিযান, নজরে লোহিত সাগরের সমস্যা
  3. বিকশিত ভারতের পথ সুগম করে উদ্ভাবন, পড়ুন বিশ্লেষণ
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.