ETV Bharat / opinion

পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, ইরান কি ইজরায়েলের উপর হামলা করবে ? - DEVELOPMENTS IN WEST ASIA

Developments in West Asia: পশ্চিম এশিয়ায় অনেক ঘটনা ঘটছে । ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জাতীয় উন্নয়নের ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান এবং বোমা বর্ষণ করে ইজরায়েলের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়টি থেকে সরে আসতে পারেন ৷

Developments in West Asia
ইজরায়েলের তেল আভিভে মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও হামাসের হাতে বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ৷ (এপি)
author img

By Sanjay Kapoor

Published : Sep 5, 2024, 6:39 PM IST

যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করা তাঁদের জন্য ক্লান্তিকর হতে পারে, যাঁরা এই নিয়ে বিশ্লেষণ করেন বা এটা নিয়ে খারাপ প্রতিবেদন করে জীবিকা নির্বাহ করেন । তেহরান সফরের সময় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার অভিযোগে ইরান ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলার পর পশ্চিম এশিয়ায় হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে যাঁরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাঁরা এখন ঠিক একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন ৷

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়া তেহরানে ছিলেন । হানিয়াকে রহস্যজনকভাবে হত্যার পর এক মাসেরও বেশি সময় চলে গিয়েছে ৷ কিন্তু তেহরান ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার বহু-অভিজ্ঞ অস্ত্রাগার এবং সামরিক কৌশল উন্মোচন করবে কি না, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় ৷

ইরানের উত্তেজিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে । ইজরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক ও পারমাণবিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে । 2020 সাল পর্যন্ত 10 বছরে ইরানের ছয় বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে । সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ছিল বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফকরিজাদে, যিনি 2020 সালে স্যাটালাইট-নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দ্বারা নিহত হন ।

ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডস (আইআরজিসি)-এর একটি নিরাপদ গেস্ট হাউসে নিহত হানিয়ার বিরুদ্ধেও অনুরূপ কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল । বাগদাদ বিমানবন্দরে আইআরজিসি প্রধান কাসেম সুলেইমানিকে হত্যার পর পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ইরান যেভাবে প্রতিশোধ নিয়েছে । পরে 2024 সালের এপ্রিলে ইজরায়েল সিরিয়ার দামাসস্কাসে ইরানের দূতাবাস উড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করা হয়, এতে দুই শীর্ষ জেনারেল এবং ইরানের কুদস ফোর্সের অন্য পাঁচজন সদস্য নিহত হয় । এই একটা হামলাতেই ইরান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷

ইরান অনেক বিবেচনার পর, ইজরায়েলে বোমা ফেলার জন্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ৷ যাতে মারাত্মক না হলেও তেল আভিভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৷ ইরান একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল, তা হল - এই ধরনের হামলা আবার হলে ইজরায়েলের জন্য আরও খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে ।

আপাতদৃষ্টিতে ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকিতে বিচলিত হয়নি ইজরায়েল ৷ তবে তারা তাদের এজেন্ডা অনুযায়ী নিয়ে ইরানকে এই অঞ্চলে অস্থির পরিস্থিতি তৈরির জন্য দায়ী করার কাজ চালিয়ে যায় ৷ একই সঙ্গে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কিছু সামরিক ও গোয়েন্দা নেতাকে হত্যার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে । তেহরানে হত্যাকাণ্ডের কারণে হানিয়াকে হত্যা করা ইরানের ভাবমূর্তিকে আঘাত করেছে । নিঃসন্দেহে, এটা ওই দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং ইরানকে অতিথিকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ বলে মনে করা হয়েছে ৷ পরের বার অনেকেই ভাববেন যে তাঁরা তেহরানে গেলে সুরক্ষা পাবেন কি না !

এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেও প্রশ্ন উঠেছে তেল আভিভ যখন গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাংকে প্যালেস্তাইনকে আক্রমণ নিয়ে ব্যস্ত, সেই সময় কেন ইজরায়েলকে আক্রমণ করছে না ইরান ? তা নিয়ে পশ্চিম এশিয়ার অনেক পর্যবেক্ষকই বিভ্রান্ত ৷ সমুদ্রের দিক থেকে হুথিদের সঙ্গে, লেবাননের হিজবুল্লার সঙ্গে এবং প্যালেস্তাইনে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা শত্রুর বিরুদ্ধে হামলা করাটা কি ইরানের বাহিনীর উচিত ছিল না ?

ইরানের শত্রুতা সত্ত্বেও, সেই দেশের নেতারা ইজরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে । তারা জানত যে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার অর্থ কেবল তাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা নয়, এর অর্থ হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ন্যাটো শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা । ড্রোন তৈরিতে অগ্রগতি সত্ত্বেও ইরান নিষেধাজ্ঞার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ভালো মানের খুচরো জিনিসপত্রের অভাবে এই দেশের বিমান ও সামরিক শক্তি হ্রাস পেয়েছে ।

এমনকী ইরানের অসামরিক বিমান পরিবহণে দুর্ঘটনার হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ ৷ এই লেখক যখন ইরান ভ্রমণ করছিলেন, তখন একজন দেখতে পান অনেক যাত্রী ফ্লাইটে প্রার্থনা করছেন । যখন তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেন তাঁরা এমন করছেন ? তাঁদের মধ্যে একজন উত্তর দিয়েছিলেন: "আমরা জানি যে বিমানটি আকাশে উড়েছে, তবে কোথায় এবং কখন অবতরণ করবে, তা জানি না ।" দৃশ্যত, পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার কারণে ভালো মানের খুচরো যন্ত্রাংশের অনুপস্থিতি ওই দেশে বিমান পরিষেবার সঙ্গে আপস করা হয়েছে ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন, শত শত এফ-16 এবং অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামের মতো সব সরিয়ে নিয়েছে । রাশিয়া ও চিনের সমর্থন ছাড়াই মার্কিন শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা ইরানের জন্য আত্মঘাতী হবে । ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, রাশিয়া তেহরানের প্রতিরক্ষা জোরদার করছে এবং পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার কারণে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া ওই দেশকে ভার বৃদ্ধি করছে । এটা কি ইরানের মতো একটি সভ্য দেশকে রক্ষা করার পাশাপাশি ইজরায়েলের মতো সামরিক শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য উপযুক্ত হবে ?

এটা পরিষ্কার নয়, কিন্তু মনে হচ্ছে ইজরায়েল পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ না করেই ইরানকে আঘাত করতে চায় । অতীতে, দু’টি দেশ প্রথমে আল কায়েদা এবং তারপর ইসলামিক স্টেটের হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতা করেছে । উভয় দেশই আরব বিশ্বে সুন্নি আধিপত্য চেয়েছিল এবং ইসলামের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলের উপর ইরানের প্রভাব হ্রাস করতে চেয়েছিল ।

ইরানে স্থাপত্যের বিস্ময় ইস্ফাহান ও দেশের অন্যান্য শহরে অবস্থিত । আবার কেউ কেউ আছেন, যাঁরা দাবি করেন যে ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বোমা ফেলবে না ৷ এর কারণও সহজ৷ ইরানে ইরানি ইহুদি সমর্থকদের একটি বড় লবি রয়েছে, যারা চায় না উচ্চ প্রযুক্তির বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রে মূল দেশটি ধ্বংস হোক৷ করতে চায় না ।

ইরানকে বোমা থেকে নিরাপদ রাখা হয়েছে, তবে মিডিয়াতে পাওয়া নিরবিচ্ছিন্ন সমালোচনা থেকে নয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ইরানিদের মধ্যে অনেকেই নারীদেরকে হিজাব পরতে বাধ্য করা এবং ঘরের চার দেওয়ালের মধ্য়ে বন্দি করার জন্য নারীদেরকে পুরনো মূল্যবোধের সঙ্গে আবদ্ধ করার জন্য ইসলামিক পাদ্রিদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে ।

ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রয়েছে । এই দেশের সংস্কারমনা প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পশ্চিমের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী এবং সমাজের পুনর্গঠনের জন্য সহায়তা চাওয়ার চেষ্টা করছেন । এটি সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে প্রতি দু’জনে একজন যুবক বিদেশে সুযোগ অন্বেষণ করতে দেশ ছেড়ে যেতে চান । নতুন প্রেসিডেন্ট এই ব্রেন ড্রেন এবং দেশে প্রতিভার চলে যাওয়া ঠেকাতে জাতীয় উন্নয়নের ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান ৷ এমনকী এর অর্থ হল বোমা বর্ষণ করে ইজরায়েলের উপর প্রতিশোধ নেওয়া এবং যুদ্ধ, রক্তের সন্ধানকারী সামরিক বিশ্লেষকদের অপেক্ষার অবসান ঘটানো ৷

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামতগুলি লেখকের । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করা তাঁদের জন্য ক্লান্তিকর হতে পারে, যাঁরা এই নিয়ে বিশ্লেষণ করেন বা এটা নিয়ে খারাপ প্রতিবেদন করে জীবিকা নির্বাহ করেন । তেহরান সফরের সময় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার অভিযোগে ইরান ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলার পর পশ্চিম এশিয়ায় হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে যাঁরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাঁরা এখন ঠিক একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন ৷

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়া তেহরানে ছিলেন । হানিয়াকে রহস্যজনকভাবে হত্যার পর এক মাসেরও বেশি সময় চলে গিয়েছে ৷ কিন্তু তেহরান ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার বহু-অভিজ্ঞ অস্ত্রাগার এবং সামরিক কৌশল উন্মোচন করবে কি না, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় ৷

ইরানের উত্তেজিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে । ইজরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক ও পারমাণবিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে । 2020 সাল পর্যন্ত 10 বছরে ইরানের ছয় বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে । সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ছিল বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফকরিজাদে, যিনি 2020 সালে স্যাটালাইট-নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দ্বারা নিহত হন ।

ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডস (আইআরজিসি)-এর একটি নিরাপদ গেস্ট হাউসে নিহত হানিয়ার বিরুদ্ধেও অনুরূপ কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল । বাগদাদ বিমানবন্দরে আইআরজিসি প্রধান কাসেম সুলেইমানিকে হত্যার পর পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ইরান যেভাবে প্রতিশোধ নিয়েছে । পরে 2024 সালের এপ্রিলে ইজরায়েল সিরিয়ার দামাসস্কাসে ইরানের দূতাবাস উড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করা হয়, এতে দুই শীর্ষ জেনারেল এবং ইরানের কুদস ফোর্সের অন্য পাঁচজন সদস্য নিহত হয় । এই একটা হামলাতেই ইরান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷

ইরান অনেক বিবেচনার পর, ইজরায়েলে বোমা ফেলার জন্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ৷ যাতে মারাত্মক না হলেও তেল আভিভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৷ ইরান একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল, তা হল - এই ধরনের হামলা আবার হলে ইজরায়েলের জন্য আরও খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে ।

আপাতদৃষ্টিতে ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকিতে বিচলিত হয়নি ইজরায়েল ৷ তবে তারা তাদের এজেন্ডা অনুযায়ী নিয়ে ইরানকে এই অঞ্চলে অস্থির পরিস্থিতি তৈরির জন্য দায়ী করার কাজ চালিয়ে যায় ৷ একই সঙ্গে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কিছু সামরিক ও গোয়েন্দা নেতাকে হত্যার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে । তেহরানে হত্যাকাণ্ডের কারণে হানিয়াকে হত্যা করা ইরানের ভাবমূর্তিকে আঘাত করেছে । নিঃসন্দেহে, এটা ওই দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং ইরানকে অতিথিকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ বলে মনে করা হয়েছে ৷ পরের বার অনেকেই ভাববেন যে তাঁরা তেহরানে গেলে সুরক্ষা পাবেন কি না !

এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেও প্রশ্ন উঠেছে তেল আভিভ যখন গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাংকে প্যালেস্তাইনকে আক্রমণ নিয়ে ব্যস্ত, সেই সময় কেন ইজরায়েলকে আক্রমণ করছে না ইরান ? তা নিয়ে পশ্চিম এশিয়ার অনেক পর্যবেক্ষকই বিভ্রান্ত ৷ সমুদ্রের দিক থেকে হুথিদের সঙ্গে, লেবাননের হিজবুল্লার সঙ্গে এবং প্যালেস্তাইনে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা শত্রুর বিরুদ্ধে হামলা করাটা কি ইরানের বাহিনীর উচিত ছিল না ?

ইরানের শত্রুতা সত্ত্বেও, সেই দেশের নেতারা ইজরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে । তারা জানত যে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করার অর্থ কেবল তাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা নয়, এর অর্থ হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ন্যাটো শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা । ড্রোন তৈরিতে অগ্রগতি সত্ত্বেও ইরান নিষেধাজ্ঞার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ভালো মানের খুচরো জিনিসপত্রের অভাবে এই দেশের বিমান ও সামরিক শক্তি হ্রাস পেয়েছে ।

এমনকী ইরানের অসামরিক বিমান পরিবহণে দুর্ঘটনার হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ ৷ এই লেখক যখন ইরান ভ্রমণ করছিলেন, তখন একজন দেখতে পান অনেক যাত্রী ফ্লাইটে প্রার্থনা করছেন । যখন তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কেন তাঁরা এমন করছেন ? তাঁদের মধ্যে একজন উত্তর দিয়েছিলেন: "আমরা জানি যে বিমানটি আকাশে উড়েছে, তবে কোথায় এবং কখন অবতরণ করবে, তা জানি না ।" দৃশ্যত, পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার কারণে ভালো মানের খুচরো যন্ত্রাংশের অনুপস্থিতি ওই দেশে বিমান পরিষেবার সঙ্গে আপস করা হয়েছে ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন, শত শত এফ-16 এবং অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামের মতো সব সরিয়ে নিয়েছে । রাশিয়া ও চিনের সমর্থন ছাড়াই মার্কিন শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা ইরানের জন্য আত্মঘাতী হবে । ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, রাশিয়া তেহরানের প্রতিরক্ষা জোরদার করছে এবং পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার কারণে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া ওই দেশকে ভার বৃদ্ধি করছে । এটা কি ইরানের মতো একটি সভ্য দেশকে রক্ষা করার পাশাপাশি ইজরায়েলের মতো সামরিক শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য উপযুক্ত হবে ?

এটা পরিষ্কার নয়, কিন্তু মনে হচ্ছে ইজরায়েল পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ না করেই ইরানকে আঘাত করতে চায় । অতীতে, দু’টি দেশ প্রথমে আল কায়েদা এবং তারপর ইসলামিক স্টেটের হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতা করেছে । উভয় দেশই আরব বিশ্বে সুন্নি আধিপত্য চেয়েছিল এবং ইসলামের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলের উপর ইরানের প্রভাব হ্রাস করতে চেয়েছিল ।

ইরানে স্থাপত্যের বিস্ময় ইস্ফাহান ও দেশের অন্যান্য শহরে অবস্থিত । আবার কেউ কেউ আছেন, যাঁরা দাবি করেন যে ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বোমা ফেলবে না ৷ এর কারণও সহজ৷ ইরানে ইরানি ইহুদি সমর্থকদের একটি বড় লবি রয়েছে, যারা চায় না উচ্চ প্রযুক্তির বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রে মূল দেশটি ধ্বংস হোক৷ করতে চায় না ।

ইরানকে বোমা থেকে নিরাপদ রাখা হয়েছে, তবে মিডিয়াতে পাওয়া নিরবিচ্ছিন্ন সমালোচনা থেকে নয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ইরানিদের মধ্যে অনেকেই নারীদেরকে হিজাব পরতে বাধ্য করা এবং ঘরের চার দেওয়ালের মধ্য়ে বন্দি করার জন্য নারীদেরকে পুরনো মূল্যবোধের সঙ্গে আবদ্ধ করার জন্য ইসলামিক পাদ্রিদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে ।

ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রয়েছে । এই দেশের সংস্কারমনা প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পশ্চিমের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী এবং সমাজের পুনর্গঠনের জন্য সহায়তা চাওয়ার চেষ্টা করছেন । এটি সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে প্রতি দু’জনে একজন যুবক বিদেশে সুযোগ অন্বেষণ করতে দেশ ছেড়ে যেতে চান । নতুন প্রেসিডেন্ট এই ব্রেন ড্রেন এবং দেশে প্রতিভার চলে যাওয়া ঠেকাতে জাতীয় উন্নয়নের ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান ৷ এমনকী এর অর্থ হল বোমা বর্ষণ করে ইজরায়েলের উপর প্রতিশোধ নেওয়া এবং যুদ্ধ, রক্তের সন্ধানকারী সামরিক বিশ্লেষকদের অপেক্ষার অবসান ঘটানো ৷

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামতগুলি লেখকের । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.