বহরমপুর, 29 অক্টোবর: মানত করা সোনা ও রূপোর গয়না পরিয়েই বিসর্জন দেওয়া হয় বড়মাকে ৷ প্রতিমা জলে পড়তেই মিলিয়ে যায় অলঙ্কার ৷ গ্রামবাসীদের কথায় জানা যায়, বিসর্জনের পর তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও আজ পর্যন্ত সোনা বা রূপোর একটা টুকরোও পাওয়া যায়নি ৷ প্রায় 700 বছর ধরে এমনই রীতি মুর্শিদাবাদের ঋষিপুরের কালীপুজোয় ৷ সাধারণ মানুষ তো নয়ই, এমনকি পুরোহিতদেরও অধিকার থাকে না বড়মাকে দেওয়া মানসিকের দ্রব্য নেওয়ার ৷
গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, দেবীর সম্পত্তির উপর যাদের কু-দৃষ্টি পড়ে সেই পরিবারের উপরও নেমে আসে কোপ । একাধিক ঘটনা থেকেই এমন বিশ্বাস জন্মেছে ৷ দেবীর কাছে মানসিক করা ইচ্ছেপূরণ হলে মানতকারীরা একটি করে কালী প্রতিমা দিয়ে থাকেন ৷ প্রতি বছর বড়িমার সঙ্গে মন্দিরের একই দালানে পূজিত হন প্রায় 30টিরও বেশি প্রতিমা ৷ এবার প্রায় 32টি প্রতিমার পুজো হবে ৷ তবে মানত অনুযায়ী প্রতিমার সংখ্যা বাড়ে-কমে ৷
ডোমকল-সহ আশপাশের জেলা নদিয়া, বীরভূম, কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বইয়ের বহু মানুষও এই পুজোয় আসেন ৷ দেড় বিঘা জায়গা জুড়ে রয়েছে বড়মার মন্দির ও উঠোন । গ্রামবাসীদের দাবি, এখানে এসে যারাই মানসিক করেছেন তাঁরাই হাতেনাতে ফল পেয়েছেন । মন্দিরের সামনেই রয়েছে বিশাল জলাশয় । যার জল কোনওদিন শুকায় না ৷ এক সময় এখানেই পদ্মফুল ফুটত ৷ পুজোর শেষে সেই রাতেই শোভাযাত্রা ছাড়ায় বিনা আড়ম্বরে এই পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় ।
প্রচলিত আছে, এখানে মানসিক করে মনোস্কামনা পূর্ণ হলে তাঁকে পরের বছরই প্রতিমা দিয়ে পুজো দিতে হয় । প্রত্যেক প্রতিমার জন্য থাকে আলাদা আলাদা পুরোহিত । তবে মন্ত্রপাঠের জন্য একজন আচার্য থাকেন । অনেকে আবার এখানকার দেবীকে সোনা-রূপোর গয়না দিয়েও মানসিক করে থাকেন । গ্রামবাসীদের দাবি, পুজোয় একশোরও বেশি কাপড় পড়ে। সবই দেবীর সঙ্গে জলে দিতে হয় । গ্রামবাসীরা জানান, এক বছর পুরোহিত কালী প্রতিমার অলঙ্কার খুলতে গেলে মূর্তিতে আগুন ধরে যায় । তারপর থেকে আর কেউ অলঙ্কার খোলার সাহস দেখায়নি । পুজোর কোনও উপকরণ পুরোহিত বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন না ।
পুজো কমিটির সম্পাদক কাজল সরকারের কথায়, "তখন টিনের চালায় দেবী অধিষ্ঠিতা । বৃষ্টির রাতে মন্দিরের টিন চুরি যায় । পরদিন একটি বাড়িতে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয় ৷ সেই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় চুরি যাওয়া টিন । মন্দিরে আজও তালা দেওয়া হয় না ।" কার্তিক মণ্ডল জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের এক গুড় বিক্রেতা মন্দির সংলগ্ন পাকুড় গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন । দেবী স্বপ্নে তাঁর কাছ থেকে গুড় খেতে চেয়েছিলেন । সেই থেকে আজও মুসলিম পরিবার থেকে আখের গুড় আসে ।
এরকম হাজারও গল্পকথা জড়িয়ে রয়েছে ঋষিপুরের কালীর সঙ্গে । তবে গ্রামে দেবী প্রতিষ্ঠা নিয়ে এখনও দ্বিমত কাটেনি । একপক্ষের দাবি, মন্দিরের সামনে বড় বিল হালদারদেরই ৷ ওরাই দেবী প্রতিষ্ঠা করে । বিলে মাছ ধরতে নামার আগে দেবীকে পুজো দিয়েই জলে নামত হালদাররা । এক অংশের দাবি, ডাকাতরাই এই কালীর প্রতিষ্ঠা করেছিল । সেই কারণে দেবী ডাকাতকালী নামেও পরিচিত ৷