ETV Bharat / lifestyle

প্রতিপদে কামান দেগে শুরু হত মল্লিকবাড়ির পুজো, 300 বছরে আড়ম্বরহীন দুর্গা আরাধনা - Durga Puja 2024

প্রাচীন রীতি মেনে পুজো চললেও জমিদারিত্বের বিলুপ্তিতে স্বাভাবিকভাবেই জৌলুস হারিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের মল্লিকবাড়ির দুর্গাপুজো ৷ জানুন 300 বছর আগের শুরু হওয়া এই পুজোর ইতিহাস ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 2 hours ago

Mallick Bari Durga Puja of Paschim Medinipur
পশ্চিম মেদিনীপুরের মল্লিরবাড়ির দুর্গাপুজো (ইটিভি ভারত)

মল্লিকবাজার, 7 অক্টোবর: জমিদারদের পদবি অনুসারে এলাকার নাম হয়েছে মল্লিকবাজার ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই মল্লিকবাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় 300 বছরের পুরনো ৷ প্রাচীন রীতি মেনে আজও প্রতিপদেই পুজো শুরু হয় এখানে ৷ তবে কামান দাগার ইতিহাস ও জমিদার বাড়ির আড়ম্বর বিলীন হলেও গোস্বামী মতে এখনও ফলমূল সহকারে মায়ের পুজো হয় ।

কথিত আছে, একসময় অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে মল্লিকদের জমিদারি প্রথা ছিল ৷ রাজা-মহারাজাদের সঙ্গে সখ্যতার খাতিরে মল্লিকদের প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল প্রচুর । অনেকগুলো গ্রাম নিয়ে জমিদার এবং সেই জমিদারের মধ্যে অন্যতম ছিল মল্লিকবাড়ি । যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জন্মেঞ্জয় মল্লিক । তাঁর আমল থেকে দুর্গাপুজোর সূচনা । শোনা যায়, এক সময় প্রতিপদের দিন কামান দেগে পুজোর সূচনা হত ৷ যা চলত দ্বিতীয়া থেকে দশমী পর্যন্ত ৷ সেই সময় রুপোর গয়না পরে বের হতেন মা । একচালার প্রতিমা ডাকের সাজে সাজানো হত ।

মল্লিকবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস (ইটিভি ভারত)

বর্তমান প্রজন্মের থেকে শোনা গিয়েছে, সেই সময় বেনারস থেকে পুরোহিত এনে জাঁকজমকভাবে পুজো হত । বংশধরেরা ছাড়াও দূর-দূরান্তের বহু রাজারা পুজোর আমন্ত্রণ পেতেন ৷ 9 জন পুরোহিত মিলে মল্লিকবাড়ির দুর্গাপুজো করতেন ৷ প্রতিদিন কুড়ি মণ চালের নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হত দেবীর সামনে । পুজোর ক'দিন বসত কীর্তন, চণ্ডীপাঠ ও কৃষ্ণযাত্রার আসর । অষ্টমীর দিন হত কুমারীপুজো । সন্ধিপুজোর সময় কামান দাগার রেওয়াজ ছিল ৷ সেই আওয়াজ শুনে শহরের অন্যান্য মণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত ৷ মল্লিকবাড়িতে বলি প্রথা ছিল না ৷

দশমীর পুজোর পর কুলদেবতার পুজো শেষ হলে কনকাঞ্জলি দেওয়ার রীতি ছিল । কংসাবতীতে প্রতিমা যেত 32 জন বেহারার কাঁধে চেপে ৷ পালকি করে বাড়ির মহিলারা নিরঞ্জনে যেতেন ৷ হাতি-ঘোড়া চড়ে যেতেন পুরুষরা ৷ সঙ্গে থাকত ঢাক-ঢোল, খোল, কাঁসর । কেউ কেউ বলেন মল্লিকবাড়ির এই বিশাল শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু'ধারে ভিড় জমাতেন শহর ও জেলার মানুষ ।

Paschim Medinipur Bonedi Bari Durga Puja
মল্লিকবাড়ির গত বছরের দুর্গাপ্রতিমা (ইটিভি ভারত)

বর্তমানে আর সেই আড়ম্বরতা নেই ৷ কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে ঢাক ও কামানের শব্দ । তবে অতি সযত্নে সেই কামান তুলে রেখেছে বর্তমান প্রজন্ম । এখনও প্রতিপদে পুজো শুরু হয় তবে অত্যন্ত সাদামাটাভাবে ৷ দুর্গাপুজোর পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পুজো ও রাস উৎসব হয় জাঁকজমকভাবে ।এখন বর্তমান বংশধরেরা বিভিন্ন জেলা রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার ফলে ভগ্ন হয়ে পড়েছে বাড়ির দশা । তবে পুজোর কটা দিনে উপস্থিত হন সমস্ত পরিবারের সদস্য ।

এই বিষয়ে মল্লিকবাড়ির বড় বউ সঞ্চিতা মল্লিক বলেন,"জন্মেঞ্জয় মল্লিক থেকে এই বাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা । শুনেছি সেই সময় কামান দাগা, রুপোর গহনা পরা-সহ বিভিন্ন জমিদার পরিবারের আড়ম্বরতা ছিল । যদিও আমরা কামানটা এখনও তুলে রেখেছি । তবে রীতি মেনে আজও প্রতিপদ থেকেই এই মল্লিকবাড়ির পুজো শুরু হয় ।"

মল্লিকবাজার, 7 অক্টোবর: জমিদারদের পদবি অনুসারে এলাকার নাম হয়েছে মল্লিকবাজার ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই মল্লিকবাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় 300 বছরের পুরনো ৷ প্রাচীন রীতি মেনে আজও প্রতিপদেই পুজো শুরু হয় এখানে ৷ তবে কামান দাগার ইতিহাস ও জমিদার বাড়ির আড়ম্বর বিলীন হলেও গোস্বামী মতে এখনও ফলমূল সহকারে মায়ের পুজো হয় ।

কথিত আছে, একসময় অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে মল্লিকদের জমিদারি প্রথা ছিল ৷ রাজা-মহারাজাদের সঙ্গে সখ্যতার খাতিরে মল্লিকদের প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল প্রচুর । অনেকগুলো গ্রাম নিয়ে জমিদার এবং সেই জমিদারের মধ্যে অন্যতম ছিল মল্লিকবাড়ি । যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জন্মেঞ্জয় মল্লিক । তাঁর আমল থেকে দুর্গাপুজোর সূচনা । শোনা যায়, এক সময় প্রতিপদের দিন কামান দেগে পুজোর সূচনা হত ৷ যা চলত দ্বিতীয়া থেকে দশমী পর্যন্ত ৷ সেই সময় রুপোর গয়না পরে বের হতেন মা । একচালার প্রতিমা ডাকের সাজে সাজানো হত ।

মল্লিকবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস (ইটিভি ভারত)

বর্তমান প্রজন্মের থেকে শোনা গিয়েছে, সেই সময় বেনারস থেকে পুরোহিত এনে জাঁকজমকভাবে পুজো হত । বংশধরেরা ছাড়াও দূর-দূরান্তের বহু রাজারা পুজোর আমন্ত্রণ পেতেন ৷ 9 জন পুরোহিত মিলে মল্লিকবাড়ির দুর্গাপুজো করতেন ৷ প্রতিদিন কুড়ি মণ চালের নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হত দেবীর সামনে । পুজোর ক'দিন বসত কীর্তন, চণ্ডীপাঠ ও কৃষ্ণযাত্রার আসর । অষ্টমীর দিন হত কুমারীপুজো । সন্ধিপুজোর সময় কামান দাগার রেওয়াজ ছিল ৷ সেই আওয়াজ শুনে শহরের অন্যান্য মণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত ৷ মল্লিকবাড়িতে বলি প্রথা ছিল না ৷

দশমীর পুজোর পর কুলদেবতার পুজো শেষ হলে কনকাঞ্জলি দেওয়ার রীতি ছিল । কংসাবতীতে প্রতিমা যেত 32 জন বেহারার কাঁধে চেপে ৷ পালকি করে বাড়ির মহিলারা নিরঞ্জনে যেতেন ৷ হাতি-ঘোড়া চড়ে যেতেন পুরুষরা ৷ সঙ্গে থাকত ঢাক-ঢোল, খোল, কাঁসর । কেউ কেউ বলেন মল্লিকবাড়ির এই বিশাল শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু'ধারে ভিড় জমাতেন শহর ও জেলার মানুষ ।

Paschim Medinipur Bonedi Bari Durga Puja
মল্লিকবাড়ির গত বছরের দুর্গাপ্রতিমা (ইটিভি ভারত)

বর্তমানে আর সেই আড়ম্বরতা নেই ৷ কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে ঢাক ও কামানের শব্দ । তবে অতি সযত্নে সেই কামান তুলে রেখেছে বর্তমান প্রজন্ম । এখনও প্রতিপদে পুজো শুরু হয় তবে অত্যন্ত সাদামাটাভাবে ৷ দুর্গাপুজোর পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পুজো ও রাস উৎসব হয় জাঁকজমকভাবে ।এখন বর্তমান বংশধরেরা বিভিন্ন জেলা রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার ফলে ভগ্ন হয়ে পড়েছে বাড়ির দশা । তবে পুজোর কটা দিনে উপস্থিত হন সমস্ত পরিবারের সদস্য ।

এই বিষয়ে মল্লিকবাড়ির বড় বউ সঞ্চিতা মল্লিক বলেন,"জন্মেঞ্জয় মল্লিক থেকে এই বাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা । শুনেছি সেই সময় কামান দাগা, রুপোর গহনা পরা-সহ বিভিন্ন জমিদার পরিবারের আড়ম্বরতা ছিল । যদিও আমরা কামানটা এখনও তুলে রেখেছি । তবে রীতি মেনে আজও প্রতিপদ থেকেই এই মল্লিকবাড়ির পুজো শুরু হয় ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.