কলকাতা, 7 অক্টোবর: উত্তর কলকাতার অন্যতম নামী পুজোর মধ্যে অন্যতম হাতিবাগান সর্বজনীন ৷ এই উত্তর কলকাতার অধিকাংশ জায়গায় লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাদের হাতছানি। প্রতিটা বাড়ি থেকে রাস্তা, অলি-গলি, ইট যেন স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে। আর সেই সব স্মৃতি ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে সভ্যতা ও উন্নয়নের অগ্রগতির চাকার তলায় পিষে। এবার সেই স্মৃতি ধরে রেখেই উন্নয়ন, অগ্রগতির চাকা ঘোরার বার্তা দিচ্ছে হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
এবছর তাদের থিম 'প্রকরণ' বা প্রসেস। প্রতিমা ও বিষয়ভাবনা রুপায়ণ করেছেন শিল্পী সুশান্ত শিবানী পাল। হাতিবাগান এলাকা পুরনো কলকাতার ঐতিহ্যের বাহক। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, নটি-বিনোদিনীর বাড়ি, ক্ষুদিরাম থেকে অরবিন্দদের কর্মকাণ্ড জড়ানো। পুরনো দিনের বাড়ির দালানকোঠা, রকের আড্ডা, গাড়ি বারান্দা, খিড়কির জানলা বা দরজা, ঘুলঘুলি, ঝিল্লি আজ ক্রমেই বিলুপ্তির পথে। শুধু তাই নয়, বিধান সরণির ওপর দিয়ে যে ট্রাম লাইন দেখা যায় তা আর কার্যত ইতিহাসের পাতায়। সঙ্গে হাতে টানা রিক্সা বা আগেকার দিনের স্কুটার থেকে সাইকেল। সবই ঐতিহ্য।
আর ওই ঐতিহ্য এখন লুপ্তপ্রায়। সেই ঐতিহ্য রক্ষা করার বার্তা দিয়েই এবার হাতিবাগান সর্বজনীন মণ্ডপ তৈরি। এখানে লোহার পাতের উপর রড দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে হাতে টানা রিক্সা, সাইকেল, স্কুটার। নটি-বিনোদিনির মূর্তি। তাঁকে সম্মান জানানো হয়েছে।
মণ্ডপের দুই দেওয়ালে আগেকার দিনের বারান্দা ও রেলিংয়ের নকশা করা। বিভিন্ন বাড়ির সামনে আধুনিক হলে ফ্ল্যাট হলে কেমন হবে কাল্পনিক কাঠামো করা। প্রতিমার ঘরের কাছে লোহার রডের নকশা করে ঝাড়বাতি করা। একদিকের দেওয়ালে বড় ট্রাম।
কর্মকর্তা শাশ্বত ঘোষ বলেন, "বর্তমানে ফ্ল্যাট সংস্কৃতির জেরে পরিবার ছোট হয়েছে সেই বার্তা দিয়েই মা দুর্গার সঙ্গে এক ফ্রেমে নেই লক্ষী, সরস্বতী বা গণেশ থেকে কার্তিক। প্রতিটা পুরনো বাড়ির ভবিষ্যৎ কাল্পনিক রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী।"
তাঁর আরও সংযেজন, "আমরা চাইছি পুরোনো বাড়ি অবশ্যই সময়ের সঙ্গে নতুন নির্মাণ হোক কিন্তু সামনের যে রূপ সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে হোক। সবটা পরিবর্তন হলে স্মৃতি মুছে যাবে। সেই স্মৃতি, ইতিহাস রক্ষার বার্তা দিয়েছি এবার।"