ETV Bharat / lifestyle

নারায়ণ শিলা থাকায় মূর্তিপুজো নিষেধ, রাজার ইচ্ছেয় পটে প্রাণ পায় দুগ্গা

বর্ধমান রাজবাড়ি ৷ মূর্তি নয়, দেবী এখানে পটে পূজিত ৷ সেই কারণে তিনি পটেশ্বরী দুর্গা নামে পরিচিত ৷ রাজবাড়ির পুজোর খুঁটিনাটি জানুন ইটিভি ভারতে ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 3 hours ago

Burdwan Rajbari Durga Puja
বর্ধমান রাজবাড়ির দুর্গাপুজো (ইটিভি ভারত)

বর্ধমান, 8 অক্টোবর: মা দুর্গার বাহন ঘোড়া । অসুরের মাথায় আছে পাগড়ি । এছাড়া মা দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মুখমণ্ডল এমনভাবে আঁকা আছে যে শুধুমাত্র একটা চোখই দেখা যাচ্ছে । ইনিই দেবী পটেশ্বরী । বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে এই পটের দুর্গার পুজো চলে আসছে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে ।

মৃন্ময়ী মূর্তি না হওয়ার কারণ: রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, তখন বর্ধমানের মহারাজা ছিলেন মহতাব চাঁদ। রাজবাড়ির কুলদেবী ছিলেন চণ্ডিকা । রাজবাড়িতে অন্যান্য মূর্তিপুজো হলেও প্রতিমা বানিয়ে দুর্গাপুজো হয় না । রাজবাড়ির ইতিহাস বলছে, রাজা মহতাব চাঁদের ইচ্ছে হয়েছিল রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো করবেন। সেই ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন রাজ পুরোহিতকে ৷

বর্ধমান রাজবাড়ির পটেশ্বরী দুর্গাপুজোর ইতিহাস (ইটিভি ভারত)

কিন্তু রাজবাড়িতে নারায়ণ শিলা থাকায় মূর্তিপুজো কোনওভাবেই করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ পুরোহিত ৷ সেই কথা জানার পরে রাজা সিদ্ধান্ত নেন পটে আঁকা দুর্গার পুজো করা হবে ৷ সেই মতোই শালকাঠের কাঠামোর উপরে নানান রঙ দিয়ে তুলির সূক্ষ ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলা হয় একচালার দশভূজা ।

রাজবাড়ির ভিতরে ছিল দুর্গাদালান । সেই মন্দিরেই শুরু হয় পটেশ্বরী দুর্গার পুজো । পুজো শুরু হওয়ার পরে রাজবাড়ির প্রথা মেনে রাজ পরিবারের মহিলারা সাধারণ মানুষের সামনে আসতে পারতেন না । রাজবাড়িতে গোপন রাস্তা ছিল । সেই রাস্তা ধরে মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করে দেবী দর্শন করতেন ৷ পরে সেই মন্দির ভেঙে গেলে দেবীকে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে নিয়ে আসা হয় ।

Bardhaman Rajbari Durga Puja
বর্ধমান রাজবাড়ির পটেশ্বরী দুর্গা (ইটিভি ভারত)
রাজবাড়ির নিয়ম মেনে আজও মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদে ঘট এনে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয় । চলে ন'দিন ধরে ৷ জৌলুস হারালেও পুজোর রীতিনীতির আচার অনুষ্ঠানের কোনও পরিবর্তন ঘটেনি । আজও 9 দিন ধরে পুজোর রাতে চলে ডান্ডিয়া নৃত্য ৷ আগে পুজোর সময় রাজ পরিবারের বংশধর প্রণয়চাঁদ মহাতাব সস্ত্রীক বর্ধমানে আসতেন ।

মাসপাঁচেক আগে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ বর্তমানে পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর স্ত্রী নন্দিনী মহাতাব । আগে এখানে সুপারি বলি দেওয়া হত । কিন্তু লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে দেবীকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বলিদান প্রথা বন্ধ হয়ে যায় । নবমীর দিন কুমারী পুজোর রীতি রয়েছে । যেহেতু পটে আঁকা, তাই দেবীকে বিসর্জন করা হয় না । পরিবর্তে 12 বছর অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ করা হয় । আগে যেখানে দুর্গামন্দির ছিল এখানে সেখানে বর্ধমান মহিলা কলেজ গড়ে উঠেছে ।

বর্ধমান রাজবাড়ির প্রধান পুরোহিত উত্তম মিশ্র বলেন, "আগে দেবীকে 52 রকম ভোগ নিবেদন করা হত । এখনও রীতি মেনে লুচি-হালুয়া ভোগ নিবেদন করা হয় ।"

কীভাবে যাবেন লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির: ট্রেনে চেপে এলে নামতে হবে বর্ধমান স্টেশনে । সেখান থেকে 30-40 টাকা টোটো ভাড়ায় চলে যাওয়া যাবে রাজবাড়ির লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির ৷ এছাড়া গাড়ি নিয়ে গেলে বর্ধমান স্টেশন থেকে জিটি রোড ধরে দক্ষিণ দিকে প্রায় 2 কিলোমিটার গেলেই মিলবে কার্জন গেট । তার ভিতর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার গেলে দেখা যাবে রাজবাড়ির উঁচু ঘড়ি । ঠিক তার পাশেই কয়েক পা এগিয়ে গেলেই মিলবে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরের দরজা ।

বর্ধমান, 8 অক্টোবর: মা দুর্গার বাহন ঘোড়া । অসুরের মাথায় আছে পাগড়ি । এছাড়া মা দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মুখমণ্ডল এমনভাবে আঁকা আছে যে শুধুমাত্র একটা চোখই দেখা যাচ্ছে । ইনিই দেবী পটেশ্বরী । বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে এই পটের দুর্গার পুজো চলে আসছে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে ।

মৃন্ময়ী মূর্তি না হওয়ার কারণ: রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, তখন বর্ধমানের মহারাজা ছিলেন মহতাব চাঁদ। রাজবাড়ির কুলদেবী ছিলেন চণ্ডিকা । রাজবাড়িতে অন্যান্য মূর্তিপুজো হলেও প্রতিমা বানিয়ে দুর্গাপুজো হয় না । রাজবাড়ির ইতিহাস বলছে, রাজা মহতাব চাঁদের ইচ্ছে হয়েছিল রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো করবেন। সেই ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন রাজ পুরোহিতকে ৷

বর্ধমান রাজবাড়ির পটেশ্বরী দুর্গাপুজোর ইতিহাস (ইটিভি ভারত)

কিন্তু রাজবাড়িতে নারায়ণ শিলা থাকায় মূর্তিপুজো কোনওভাবেই করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ পুরোহিত ৷ সেই কথা জানার পরে রাজা সিদ্ধান্ত নেন পটে আঁকা দুর্গার পুজো করা হবে ৷ সেই মতোই শালকাঠের কাঠামোর উপরে নানান রঙ দিয়ে তুলির সূক্ষ ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলা হয় একচালার দশভূজা ।

রাজবাড়ির ভিতরে ছিল দুর্গাদালান । সেই মন্দিরেই শুরু হয় পটেশ্বরী দুর্গার পুজো । পুজো শুরু হওয়ার পরে রাজবাড়ির প্রথা মেনে রাজ পরিবারের মহিলারা সাধারণ মানুষের সামনে আসতে পারতেন না । রাজবাড়িতে গোপন রাস্তা ছিল । সেই রাস্তা ধরে মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করে দেবী দর্শন করতেন ৷ পরে সেই মন্দির ভেঙে গেলে দেবীকে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে নিয়ে আসা হয় ।

Bardhaman Rajbari Durga Puja
বর্ধমান রাজবাড়ির পটেশ্বরী দুর্গা (ইটিভি ভারত)
রাজবাড়ির নিয়ম মেনে আজও মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদে ঘট এনে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয় । চলে ন'দিন ধরে ৷ জৌলুস হারালেও পুজোর রীতিনীতির আচার অনুষ্ঠানের কোনও পরিবর্তন ঘটেনি । আজও 9 দিন ধরে পুজোর রাতে চলে ডান্ডিয়া নৃত্য ৷ আগে পুজোর সময় রাজ পরিবারের বংশধর প্রণয়চাঁদ মহাতাব সস্ত্রীক বর্ধমানে আসতেন ।

মাসপাঁচেক আগে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ বর্তমানে পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর স্ত্রী নন্দিনী মহাতাব । আগে এখানে সুপারি বলি দেওয়া হত । কিন্তু লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে দেবীকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বলিদান প্রথা বন্ধ হয়ে যায় । নবমীর দিন কুমারী পুজোর রীতি রয়েছে । যেহেতু পটে আঁকা, তাই দেবীকে বিসর্জন করা হয় না । পরিবর্তে 12 বছর অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ করা হয় । আগে যেখানে দুর্গামন্দির ছিল এখানে সেখানে বর্ধমান মহিলা কলেজ গড়ে উঠেছে ।

বর্ধমান রাজবাড়ির প্রধান পুরোহিত উত্তম মিশ্র বলেন, "আগে দেবীকে 52 রকম ভোগ নিবেদন করা হত । এখনও রীতি মেনে লুচি-হালুয়া ভোগ নিবেদন করা হয় ।"

কীভাবে যাবেন লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির: ট্রেনে চেপে এলে নামতে হবে বর্ধমান স্টেশনে । সেখান থেকে 30-40 টাকা টোটো ভাড়ায় চলে যাওয়া যাবে রাজবাড়ির লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির ৷ এছাড়া গাড়ি নিয়ে গেলে বর্ধমান স্টেশন থেকে জিটি রোড ধরে দক্ষিণ দিকে প্রায় 2 কিলোমিটার গেলেই মিলবে কার্জন গেট । তার ভিতর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার গেলে দেখা যাবে রাজবাড়ির উঁচু ঘড়ি । ঠিক তার পাশেই কয়েক পা এগিয়ে গেলেই মিলবে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরের দরজা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.