নয়াদিল্লি, 13 এপ্রিল: সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার পর ইরান ইজরায়েলে হামলার হুমকি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে ৷ এর ফলে বিশ্বে একটি যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ।
এদিকে, অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে, ভারতের বিদেশমন্ত্রক শুক্রবার একটি পরামর্শ জারি করে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের কোনও নাগরিকই যেন ইরান বা ইজরায়েলে না যান। বিদেশ মন্ত্রক অনুরোধ করেছে, যারা বর্তমানে ইরান বা ইজরায়েলে বসবাস করছেন, তাদের সেখানকার ভারতীয় দূতাবাসগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে ।
11 দিন আগে সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে কেন্দ্রের তরফে এই পরামর্শ দেওয়া হয় । ইরান এই হামলার জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করেছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে যে তেহরান শীঘ্রই ইজরায়েলে হামলা চালাতে পারে । ইটিভি ভারত এই অঞ্চলে বর্তমান সঙ্কটের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে পশ্চিম এশিয়া বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে ।
মনোহর পারিক্কর ইনস্টিটিউট অফ ডিফেন্সের পশ্চিম এশিয়া কেন্দ্রের গবেষক এবং সমন্বয়কারী মীনা সিং রায় বলেন, "যেখানে পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক, আমাদের সর্বদা কৌশলগত চমকের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত ৷ আমার মতে, পশ্চিম এশিয়ার এই পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে । গাজার সংঘাতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ইরান পাশে থাকলেও সব সময় এমন অবস্থানে নিজেকে রেখেছে যাতে কোনওভাবেই যুদ্ধের ফলে তাদের সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হতে না হয় ৷"
তিনি বলেন, "পশ্চিম এশিয়ার ক্ষেত্রে ভারতের একটি বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে ৷ এই অংশীদারিত্ব হল উপসাগরে এবং বর্তমানে ইজরায়েলে ভারতীয় নাগরিক, কর্মী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি । এছাড়াও, যারা ইজরায়েল ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা সেখানে জড়িত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন ৷ কারণ, ইজরায়েলে সংঘর্ষ এখনও শেষ হয়নি । এই উত্তেজনা মূলত ইরান ও ইজরায়েল উভয় দেশের মাধ্যমেই চালিত হয় । ইরানিরা যদি মনে করেন যে, তাদের দূতাবাসে হামলা হয়েছে, তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেবেন । তবে বিষয়গুলি কীভাবে একে একে স্পষ্ট হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয় ৷"
পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মীনা সিং রায় বলেন, "রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের পর আমরা একটি অত্যন্ত সংকটজনক পরিস্থিতিতে আছি ৷ কারণ, এই যুদ্ধে গোটা বিশ্ব সম্পূর্ণভাবে দুই পক্ষে বিভক্ত । আঞ্চলিকভাবেও, দেশগুলি নিজেদের রক্ষা করছে এবং তাদের মধ্যে কোনও বিষয়েই ঐকমত্য নেই । ভারতকে অনেক বেশি সতর্ক ও সাবধানী হতে হবে । সতর্কতার ক্ষেত্রে দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিদেশমন্ত্রকের সাম্প্রতিক পরামর্শটিকে স্বাগত জানাই ৷ তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কীভাবে বিষয়গুলি ক্রমশ স্পষ্ট হবে, তা বলা কঠিন ।"
বিদেশমন্ত্রকের পরামর্শ অনুযায়ী, "এই অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, সমস্ত ভারতীয়কে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইরান বা ইজরায়েলে যাওয়ার পরিকল্পনা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । যারা বর্তমানে ইরান বা ইজরায়েলে বসবাস করছেন, তাদের সবাইকে সেখানকার ভারতীয় দূতাবাসগুলিতে যোগাযোগ করতে এবং সেখানে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে । তাদেরকে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত বা সীমিত করার অনুরোধ করা হয়েছে ।"
এদিকে, নয়াদিল্লিতে ইজরায়েল দূতাবাস নিশ্চিত করেছে যে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে 60 জনেরও বেশি ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিক ইতিমধ্যেই ইজরায়েলে চলে গিয়েছেন । যেমন, এই বছরের শুরুতে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের মধ্যে চলা যুদ্ধের মধ্যে ইজরায়েল প্যালেস্তিনীয় শ্রমিকদের দেশে পাঠানোর জন্য সুর চড়ায় ৷
পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, "কার্গিল যুদ্ধের সময় ইজরায়েল ভারতকে সাহায্য করেছিল । সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে কৌশলগত অংশীদারিত্বের দায়িত্ব ভারতের রয়েছে ৷ এছাড়া, এঁরা এমন লোক, যারা কোনও রকম চাপ ছাড়াই স্বেচ্ছায় চলে যান । তবে ভারত-ইজরায়েলের সমীকরণ একেবারে ভিন্ন ৷"
এই বছরের 5 মার্চ, হিজবুল্লাহ জঙ্গিদের লেবানন থেকে ছোড়া একটি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েলের উত্তর সীমান্তে মার্গালিওটের কাছে একটি বাগানে আঘাত হানলে, সেখানে একজন ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু হয় এবং আরও দু’জন আহত হন । এরপরে, ভারত একটি পরামর্শ জারি করে, ইজরায়েলের সীমান্ত এলাকায় কর্মরত দেশের নাগরিকদের ওই পরিস্থিতির কারণে সে দেশের অভ্যন্তরে কোনও নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তরিত করার আহ্বান জানায় ।
আরও পড়ুন: