নয়াদিল্লি, 6 অগস্ট: 1999 সালে শেখ হাসিনার সরকার তাঁকে নির্বাসিত করেছিল ৷ এবার সেই শেখ হাসিনাকেই দেশছাড়া হতে হয়েছে ৷ এমতাবস্থায় সোশাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ৷ তাঁর একাধিক পোস্টে উঠে এল সেই সময়ের কথা ৷ তুলনা টানলেন, সেদিন এবং বর্তমানের ঘটনার মধ্যে ৷ তসলিমার দাবি, 1999 সালে যে ইসলামপন্থীদের সন্তুষ্ট করতে হাসিনা তাঁকে নির্বাসিত করেছিলেন, আজ সেই ইসলামপন্থীরাই হাসিনাকে দেশছাড়া করল ৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে সোমবার বিকেলেই ভারতে চলে এসেছেন শেখ হাসিনা ৷ আর তার পরপরই, সোশাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং হাসিনা সরকারের পতন নিয়ে বেশ কয়েকটি পোস্ট করেন তসলিমা নাসরিন ৷ যার একটি পোস্টে তিনি 1999 সালের ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন ৷ সেই সময় শেখ হাসিনার সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি ৷
তসলিমা লিখেছেন, "আমি আমার মাকে মৃত্যুশয্যায় দেখতে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর, ইসলামপন্থীদের খুশি করতে হাসিনা আমাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন ৷ আমাকে আর কখনও দেশে প্রবেশ করতে দেননি ৷ ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে সেই ইসলামপন্থীরা আজ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করল ৷" সরাসরি না হলেও, বাংলাদেশি লেখিকা কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন 25 বছর আগে তাঁর সঙ্গে যা করেছিলেন হাসিনা, আজ 25 বছর পর একই পরিণত হল তাঁর ৷
Hasina in order to please Islamists threw me out of my country in 1999 after I entered Bangladesh to see my mother in her deathbed and never allowed me to enter the country again. The same Islamists have been in the student movement who forced Hasina to leave the country today.
— taslima nasreen (@taslimanasreen) August 5, 2024
এর পাশাপাশি শেখ হাসিনার পদত্যাগ থেকে শুরু করে সেনার শাসন এবং হাসিনার দেশ ছাড়ার পরেও বাংলাদেশে চলতে থাকা সহিংস আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷ ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্টে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, "হাসিনার পদত্যাগের পর, দেশ ছাড়ার পর দেশজুড়ে জ্বালাও পোড়াও হচ্ছে কেন ? ভাস্কর্য ভাঙা হচ্ছে কেন ? কেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বাচ্চারা ঘরে ফিরে যাচ্ছে না ?"
পাশাপাশি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগও তুলেছেন তসলিমা ৷ তিনি লিখেছেন, "কেন সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে ? রাজনীতিকরা কি একেকটা প্রতিবন্ধী ? সেনাবাহিনী থাকবে ব্যারাকে ৷ তারা প্রতিরক্ষার কাজের জন্য ৷ সংসদে বা গণভবনে তো তাদের ঢোকার কথা নয় ৷ কে কী করে দেশ চালাবে, এসব নিয়ে তাদের তো মাথা ঘামানোর দরকার নেই ৷ প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দেবেন রাষ্ট্রপতির কাছে ৷ সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে দিয়েছেন কেন ? রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এবং দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সরকার গঠন করা ৷"
বাংলাদেশের সেনার শাসন নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলে তসলিমা লেখেন, "রাজনীতিকরাও সেনাবাহিনীর লোকদের আদেশ অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করছেন ৷ ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার করছেন ৷ আসলে তো রাজনীতিক যাঁরা সরকার গঠন করবেন, তাঁদের আদেশ পালন করার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ৷ বাংলাদেশে নিয়মের উলটো হয় ৷ অতীত থেকে জানি, সেনারা একবার ক্ষমতার স্বাদ পেলে ব্যারাকে ফিরতে চায় না ৷ উদাহরণ তো আছেই, মেজর জিয়া, জেনারেল এরশাদ ৷ বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের গদি এতই আরামের, যে একবার বসে আর উঠতে চায় না ৷ হাসিনা যদি সময় মতো উঠে যেতেন, এত হেনস্তা তাঁকে হতে হত না ৷ শুধু বসলেই হয় না, উঠতেও জানতে হয় ৷"