ঢাকা, 24 অক্টোবর: দু'মাস ঘুরতে না-ঘুরতেই প্রশ্নবিদ্ধ মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বতী সরকার। শুধু কাজের দিক থেকে নয়, প্রশ্ন উঠে গিয়েছে সরকারের বৈধতা নিয়েই । কোনও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নয়, খোদ রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিনের কথায় তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র তাঁর কাছে নেই । যদি হাসিনা পদত্যাগ না-করে থাকেন, তাহলে ইউনুসের সরকারের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়ে।
ছাত্র লিগকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনুস সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা–পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত 15 বছরের স্বৈরাচারী শাসনকালে আওয়ামী লিগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলিগ হত্যা থেকে শুরু করে ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ অপরাধ করেছে। তাদের নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত। এই পরিস্থিতিতেই ছাত্র লিগকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিনের দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র তাঁর কাছে নেই । তিনি দেখাতে পারবেন না । বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগ পত্রের অস্তিত্ব না-থাকলে পদত্যাগকে বৈধ বলে স্বীকার করার উপায় নেই । সেই যুক্তিতে হাসিনার পদত্যাগ পত্র না থাকার মানে তিনিই এখনও প্রধানমন্ত্রী। সেই বিচারে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে চলা অন্তর্বতী সরকারের কোনও বৈধতা নেই ।
এমনই জটিল পরিস্থিতি সরকার পক্ষের সমর্থকরা চান প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেওয়া হোক। তাঁর সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে সম্প্রতি হামলাও চলেছে একাধিকবার। অন্তর্বতী সরকারের সমর্থকরা মনে করেন, এমন কথা বলার পর শাহবুদ্দিনের আর রাষ্ট্রপতি থাকা উচিত নয়। তবে সেখানেও জটিলতা আছে। সংবিধানে বলা আছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে সরাতে গেলে জাতীয় সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করাতে হয়। এখন সেটাও কার্যত অসম্ভব । কারণ, রাষ্ট্রপতি নিজেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। তাহলে তাঁকে সরাবে কে ? সরানোর উপায়টাই বা কী হবে ? উত্তর নেই ইউনুস সরকারের কাছে । ইউনুসের প্রেসসচিব সফিকুল আলাম সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতিকে সরানো সম্পর্কে সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ।
উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়েছিলেন হাসিনা । বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর বিমানেই তিনি ভারতে যান । তখন থেকে তিনি ভারতে আছেন। এর ক'দিন পর মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বতী সরকার শপথ নেয়। নুতন করে সংবিধান তৈরি করতেও উদ্যোগ নেয় সরকার। আমেরিকা নিবাসী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলি রিয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান কমিশনও তৈরি হয়।
এরইমধ্যে দিনকয়েক আগে বাংলাদেশের সংবাদপত্র মানব জমিনকে সাক্ষাৎকার দেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে তিনি জানান, হাসিনর পদত্যাগ পত্র তাঁর কাছে নেই । এরপরই বিতর্কের সূত্রপাত। সাক্ষাৎকারের কথা জানাজানি হতে বঙ্গভবনের বাইরে হাজির হন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী । বঙ্গভবন লক্ষ করে পাথরও ছোড়া হতে থাকে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ময়দানে নামে সেনাও । সংঘর্ষে তিন বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হন । ঘটনার পর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের নিরাপত্তা আরও অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে ।
অন্যদিকে, নতুন সরকারকে সমর্থন করে এমন শক্তিও ইউনুসদের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। দিন দুয়েক আগে খালেদা জিয়ার বিএনপির তিন প্রতিনিধি ইউনুসের সঙ্গে দেখা করে স্পষ্ট জানিয়েছেন, দেশে যেন কোনও অবস্থাতাতেই সাংবিধানিক সংকটের পরিস্থিতি তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে । তবে রাষ্ট্রপতিকে সরাতে সরকার যে অন্য পথও খোলা রাখছে তাও স্পষ্ট হয়েছে । সরকারের তথ্যমন্ত্রকের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, সংবিধানে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ আছে। তবে এটা মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার থেকেও বেশি রাজনৈতিক বিষয়।