ETV Bharat / international

ইজরায়েলের একাধিক অপারেশন-গুপ্তহত্যা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে; দেখে নিন এক নজরে - SRAEL FAMOUS OPERATIONS

ISRAEL FAMOUS OPERATIONS: ইজরায়েলের একাধিক বিখ্যাত অপারেশন এবং গুপ্তহত্যা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে ৷ একই সঙ্গে হামাস এবং হিজবুল্লার প্রধানদের বিভিন্ন সময় হত্যা করেছে ইজরায়েলি। সেই ইতিহাসও রয়েছে ৷

ISRAEL FAMOUS OPERATIONS
ইজরায়েলের একাধিক অপারেশন (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 28, 2024, 8:29 PM IST

হায়দরাবাদ, 28 সেপ্টেম্বর: ইজরায়েলের তরফে শনিবারই দাবি করা হয়েছে হিজবুল প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে নিকেশ করা হয়েছে ৷ তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বিখ্যাত অপারেশন এবং গুপ্তহত্যার নজির রেখেছে ইজরায়েল যা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে ৷ এক নজরে ইজরায়েলি অপারেশন এবং হত্যাকাণ্ডের তালিকা দেখে নিন-

অ্যাডলফ আইচম্যান: হিটলার জমানার মধ্যগগনে 6 মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় অ্যাডলফ আইচমানের সরাসরি ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন অনেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি অবশ্য মিত্রবাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছিলেন ৷ পরে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান। প্রায় এক ডজন মোসাদের এজেন্ট এর সঙ্গে জড়িত ছিল ৷ ইজরায়েলে বিচার করা হয়েছিল তার ৷ 1962 সালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল আইচম্যানকে।

মোসাদের অপারেশন: 11 জন ইজরায়েলি ক্রীড়াবিদকে অপহরণ ও হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অভিযান চালানো হয় ৷ 1972 সালের সেপ্টেম্বরে মিউনিখ অলিম্পিকে প্যালেস্তাইন জঙ্গিরা এই অপহরণ করে। 16 অক্টোবর, 1972-এ দুই মোসাদ এজেন্ট পিএলও ইতালি প্রতিনিধি আবদেল ওয়ায়েল জাওয়াইটারকে গুলি করে ৷ 1973 সালের 9 এপ্রিল মোসাদ এবং আইডিএফ বেইরুটে একটি যৌথ অভিযান শুরু করে যার মধ্যে একটি মিসাইল বোট এবং নৌকার ছোট বহর যা লেবাননের সমুদ্র সৈকতে ঘুরছিল ৷ এরা ফাতাহর গোয়েন্দা শাখার প্রধান মহম্মদ ইউসুফ আল-নাজ্জার (আবু ইউসুফ)-কে বের করে নিয়ে যায় ৷ যারাই ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর পরিচালিত করে ৷ এহুদ বারাক, যিনি পরে প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন কমান্ডো অভিযানের নেতৃত্ব দেন। 27 জুন, 1976, একটি বিমান ফ্রান্স এয়ারবাস A300 248 জন যাত্রী নিয়ে ছিনতাই হয়৷ পপুলার ফ্রন্ট ফর লিবারেশন অফ প্যালেস্তাইন–এক্সটারনাল অপারেশনস এবং দুই জার্মান বিপ্লবী সেলের সদস্যরা। ছিনতাইকারীরা 40 জনের মুক্তি দাবি করেছিল পণবন্দীদের বিনিময়ে।

আবু জিহাদ (1988): খলিল আল-ওয়াজির, আরব বিশ্বে আবু জিহাদ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন । প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও)-র অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্বও বটে ৷ বছরের পর বছর ধরে, তিনি পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের ডেপুটি ছিলেন। তাঁকে গুলি করা হয়েছিল ৷ তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে ইসরায়েলি এজেন্টদের একটি কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছে। 1988 ইজরায়েল লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে একাধিক আক্রমণে তার জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে।

আব্বাস আল-মুসাভি: হিজবুল্লা মহাসচিব ছিলেন আব্বাস আল-মুসাভি ৷ ইজরায়েলের আইডিএফ হেলিকপ্টার যাওয়ার সময় তাঁর কনভয়কে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালালে নিহত হন তিনি ৷ ঘটনায় আরও 6 জন নিহত হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে-সহ। মুসাভি, যিনি হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি-জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন 1991 সালে তাঁর হত্যার দিন পর্যন্ত।

ফাথি শাকাকি: প্যালেস্তাইন ইসলামিক জিহাদের নেতা। ইজরায়েলের অভিযোগ, তিনি ইজরায়েলে সাধারণ মানুষ এবং সেনাদের উপর একাধিক হামলার জন্য দায়ী। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল 1995 সালের 26 অক্টোবর মাল্টায় ৷

ইয়াহিয়া আইয়াশ: ইসলামি জঙ্গিদের একটি শাখার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ৷ তৎকালীন পিএলও-শাসিত প্যালেস্তাইনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয় ইয়াহিয়া আইয়াশ ওরফে দ্য ইঞ্জিনিয়ার ৷ জানা যায়, 1996 সালের 5 জানুয়ারি তাঁর নিজের মোবাইল ফোনটিই হাতে বিস্ফোরণ হয়। তার জেরেই তার মৃত্যু হয় ৷ এর পাল্টা হামাস ফেব্রুয়ারি মাসে 9 দিনে ইজরায়েলের তিনটি শহরে আত্মঘাতী হামলা চালায় ৷ 59 জন নিহত হয় সে সময় ৷

শেখ আহমেদ ইয়াসিন: হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন শেখ আহমেদ ইয়াসিন ৷ 2004 সালের 22 মার্চ হেলিকপ্টারে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় ৷ গাজা শহরে তিনি একটি মসজিদ থেকে যাচ্ছিলেন ৷ 2003 সালে হামাসের বাড়িতে থাকা অবস্থায় ইজরায়েল তাকে হত্যার চেষ্টা করে ৷ তার মৃত্যুতে ব্যাপক প্রতিবাদ হয় ৷

আবদেল-আজিজ আল-রান্টিসি: গাজায় একটি গাড়িতে ইজরায়েলি হেলিকপ্টার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ৷ হামাস নেতা আবদেল-আজিজ আল-রান্টিসিকে 17 এপ্রিল, 2004-এ হত্যা করা হয়। তার দুই দেহরক্ষীও নিহত হয়। হামাস নেতৃত্ব এরপরই আত্মগোপন করে ৷ এমনকী রান্টিসির উত্তরসূরির পরিচয়ও গোপন রাখা হয়। হামাস নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তার হত্যাকাণ্ড ঘটে ৷ আহমেদ ইয়াসিনের পরই দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি ৷

আদনান আল-ঘৌল: ইজরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের অন্যতম বোমারু নিহত হয় ৷ 2004 সালের 21 অক্টোবর গাজায় হত্যা করা হয় তাকে। আদনান ঘৌল হামাসের সেনাবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে পরিচিত ছিল ৷

ইমাদ মুগনিয়েহ (2008): 12 ফেব্রুয়ারি, 2008 ইমাদ মুগনিয়াহ সম্ভবত মোসাদ এবং ইজরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ছিলেন গত কয়েক দশক ধরে। বড় সন্ত্রাসী হামলারও পরিকল্পনা করেছিলেন ৷ বিশেষ করে গাড়িতে বোমা হামলা ৷ হিজবুল্লার একজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডারও ছিলেন ৷ একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয় ৷ 2008 সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল ৷

নিজার রায়ান (2009): হামাসের সবচেয়ে কট্টরপন্থী নেতা হিসাবে বিবেচিত একজন ধর্মগুরু ৷ ইজরায়েলে নতুন করে আত্মঘাতী বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন ৷ জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলায় তার স্ত্রী ও সাত সন্তানও নিহত হয় 1 জানুয়ারি, 2009।

মাহমুদ আল-মাবুহের হত্যা (2010): 2010 সালের জানুয়ারিতে, হামাস সামরিক কমান্ডার মাহমুদ আল মাভুহকে দুবাইয়ের একটি হোটেলের ঘরে হত্যা করা হয় ৷

মহম্মাদ আল-জাওয়ারি (2016): 15 ডিসেম্বর, 2016 তারিখে, মহম্মদ আল-জাওয়ারিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল ৷ তিউনিসিয়ার স্ফ্যাক্সে তার বাসভবনে বুলেটের বৃষ্টি হয়। জাওয়ারী ছিলেন একজন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যিনি হামাসের জন্য ড্রোন তৈরি করেছিলেন এবং সম্ভবত হিজবুল্লার জন্যও।

ফাদি মহম্মাদ আল-বাতশ (2018): এপ্রিল 22, 2018 -ফাদি মহম্মদ আল-বাতশ কুয়ালালামপুরের একটি মসজিদে যাচ্ছিলেন ৷ সেই সময়ই মোটরবাইকে করে আততায়ী তাকে গুলি করে ৷ বাতশকে হামাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনিয়র হিসাবে মনে করা হয় ৷ ড্রোন এবং রকেট উভয় ডিজাইনের বিশেষজ্ঞ।

মোহসেন ফখরিজাদেহ (2020): নভেম্বর 27, 2020 বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে রাস্তার ধারে হত্যা করা হয়েছিল ৷ তেহরানের প্রায় 40 মাইল পূর্বে এই হামলা চালানো হয়। ইজরায়েলি গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ করে আসছিল ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জনক ছিলেন ফাখরিজাদেহ।

সালেহ আল-আরৌরি (2024): বেইরুটের দক্ষিণে একটি ইজরালি ড্রোন হামলায় 2 জানুয়ারি, 2024-এ ডেপুটি হামাস প্রধান সালেহ আল-আরৌরিকে হত্যা করে। আরৌরি হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

ইসমাইল হানিয়াহ (2024): হামাস প্রধান হানিয়াহকে প্রথম দিকে হত্যা করা হয়েছিল ইরানে ৷ প্যালেস্তাইন জঙ্গি গোষ্ঠী একথা জানিয়েছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ডস হানিয়েহের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি।

হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মাদ দেইফ (2024): ইজরায়েলি সেনাবাহিনী 2024 সালের অগস্টে ঘোষণা করেছিল, মোহাম্মদ দেইফ, জুলাই 2024 সালে গাজায় একটি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।

হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার (ডিভাইসের বিস্ফোরণ পেজার এবং ওয়াকি-টকি) : ইজরায়েল পেজার এবং ওয়াকি বিস্ফোরণের মাধ্যমে হাইব্রিড যুদ্ধ করে আবারও একবার বিশ্বকে চমকে দিয়েছে ৷ বিস্ফোরণের জন্য লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী ইজরাইলকেই দায়ী করেছে। লেবাননের মতে 2,931 জন আহত হয়েছে।

হাসান নাসরাল্লাহ (2024): ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, হাসান নাসরাল্লাহ, লেবাননের বেইরুটে বিমান হামলায় নিহত হয়েছে। হিজবুল্লার সেক্রেটারি জেনারেল ছিল নাসরাল্লাহ ৷ একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিল্ডিংয়ে হামলা চালানো হয় ৷ অন্তত ছয় জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন ৷

হামাস এবং হিজবুল্লা প্রধানের ইজরায়েলি হত্যার ইতিহাস-

16 ফেব্রুয়ারি 1992: আব্বাস আল-মুসাভি হিজবুল্লা মহাসচিব ছিলেন ৷ ইজরায়েলের আইডিএফ হেলিকপ্টার তার কনভয়ে আক্রমণ করলে আব্বাস আল-মুসাভি নিহত হন ৷ দক্ষিণ লেবাননে ভ্রমণের সময় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। হামলায় মুসাভির সঙ্গে তার স্ত্রী ও ছেলে-সহ আরও ছয়জন নিহত হন।

22 মার্চ 2004: আহমেদ ইয়াসিন ছিলেন হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা ৷ 22 মার্চ শেখ আহমেদের একটি হেলিকপ্টারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় ৷

তিনি তখন গাজা শহরের একটি মসজিদ থেকে বেরোচ্ছিলেন ৷

12 মার্চ 2008: ইমাদ মুগনিয়েহ হিজবুল্লার তৎকালীন সামরিক প্রধান ছিলেন ৷ ইমাদ মুগনিয়াহ 2008 সালে দামেস্কে একটি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন ৷ অপারেশনটি মোসাদ এবং সিআইএ দ্বারা পরিকল্পিত ছিল বলে দেবি ৷

31 জুলাই 2024: ইসমাইল হানিয়াহ হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ছিলেন ৷ ওইদিন ভোরে ইরানে হত্যা করা হয় তাঁকে ৷ জঙ্গি গোষ্ঠী এবং ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড হানিয়েহের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ৷ তিনি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ৷

27 সেপ্টেম্বর 2024: ইজরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলায় হিজবুল্লা নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন ৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় বেইরুটে এই হামলা চালানো হয়। লেবানিজ গ্রুপের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

হায়দরাবাদ, 28 সেপ্টেম্বর: ইজরায়েলের তরফে শনিবারই দাবি করা হয়েছে হিজবুল প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে নিকেশ করা হয়েছে ৷ তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বিখ্যাত অপারেশন এবং গুপ্তহত্যার নজির রেখেছে ইজরায়েল যা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে ৷ এক নজরে ইজরায়েলি অপারেশন এবং হত্যাকাণ্ডের তালিকা দেখে নিন-

অ্যাডলফ আইচম্যান: হিটলার জমানার মধ্যগগনে 6 মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় অ্যাডলফ আইচমানের সরাসরি ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন অনেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি অবশ্য মিত্রবাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছিলেন ৷ পরে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান। প্রায় এক ডজন মোসাদের এজেন্ট এর সঙ্গে জড়িত ছিল ৷ ইজরায়েলে বিচার করা হয়েছিল তার ৷ 1962 সালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল আইচম্যানকে।

মোসাদের অপারেশন: 11 জন ইজরায়েলি ক্রীড়াবিদকে অপহরণ ও হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অভিযান চালানো হয় ৷ 1972 সালের সেপ্টেম্বরে মিউনিখ অলিম্পিকে প্যালেস্তাইন জঙ্গিরা এই অপহরণ করে। 16 অক্টোবর, 1972-এ দুই মোসাদ এজেন্ট পিএলও ইতালি প্রতিনিধি আবদেল ওয়ায়েল জাওয়াইটারকে গুলি করে ৷ 1973 সালের 9 এপ্রিল মোসাদ এবং আইডিএফ বেইরুটে একটি যৌথ অভিযান শুরু করে যার মধ্যে একটি মিসাইল বোট এবং নৌকার ছোট বহর যা লেবাননের সমুদ্র সৈকতে ঘুরছিল ৷ এরা ফাতাহর গোয়েন্দা শাখার প্রধান মহম্মদ ইউসুফ আল-নাজ্জার (আবু ইউসুফ)-কে বের করে নিয়ে যায় ৷ যারাই ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর পরিচালিত করে ৷ এহুদ বারাক, যিনি পরে প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন কমান্ডো অভিযানের নেতৃত্ব দেন। 27 জুন, 1976, একটি বিমান ফ্রান্স এয়ারবাস A300 248 জন যাত্রী নিয়ে ছিনতাই হয়৷ পপুলার ফ্রন্ট ফর লিবারেশন অফ প্যালেস্তাইন–এক্সটারনাল অপারেশনস এবং দুই জার্মান বিপ্লবী সেলের সদস্যরা। ছিনতাইকারীরা 40 জনের মুক্তি দাবি করেছিল পণবন্দীদের বিনিময়ে।

আবু জিহাদ (1988): খলিল আল-ওয়াজির, আরব বিশ্বে আবু জিহাদ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন । প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও)-র অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্বও বটে ৷ বছরের পর বছর ধরে, তিনি পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের ডেপুটি ছিলেন। তাঁকে গুলি করা হয়েছিল ৷ তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে ইসরায়েলি এজেন্টদের একটি কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছে। 1988 ইজরায়েল লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে একাধিক আক্রমণে তার জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে।

আব্বাস আল-মুসাভি: হিজবুল্লা মহাসচিব ছিলেন আব্বাস আল-মুসাভি ৷ ইজরায়েলের আইডিএফ হেলিকপ্টার যাওয়ার সময় তাঁর কনভয়কে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালালে নিহত হন তিনি ৷ ঘটনায় আরও 6 জন নিহত হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে-সহ। মুসাভি, যিনি হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি-জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন 1991 সালে তাঁর হত্যার দিন পর্যন্ত।

ফাথি শাকাকি: প্যালেস্তাইন ইসলামিক জিহাদের নেতা। ইজরায়েলের অভিযোগ, তিনি ইজরায়েলে সাধারণ মানুষ এবং সেনাদের উপর একাধিক হামলার জন্য দায়ী। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল 1995 সালের 26 অক্টোবর মাল্টায় ৷

ইয়াহিয়া আইয়াশ: ইসলামি জঙ্গিদের একটি শাখার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ৷ তৎকালীন পিএলও-শাসিত প্যালেস্তাইনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয় ইয়াহিয়া আইয়াশ ওরফে দ্য ইঞ্জিনিয়ার ৷ জানা যায়, 1996 সালের 5 জানুয়ারি তাঁর নিজের মোবাইল ফোনটিই হাতে বিস্ফোরণ হয়। তার জেরেই তার মৃত্যু হয় ৷ এর পাল্টা হামাস ফেব্রুয়ারি মাসে 9 দিনে ইজরায়েলের তিনটি শহরে আত্মঘাতী হামলা চালায় ৷ 59 জন নিহত হয় সে সময় ৷

শেখ আহমেদ ইয়াসিন: হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন শেখ আহমেদ ইয়াসিন ৷ 2004 সালের 22 মার্চ হেলিকপ্টারে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় ৷ গাজা শহরে তিনি একটি মসজিদ থেকে যাচ্ছিলেন ৷ 2003 সালে হামাসের বাড়িতে থাকা অবস্থায় ইজরায়েল তাকে হত্যার চেষ্টা করে ৷ তার মৃত্যুতে ব্যাপক প্রতিবাদ হয় ৷

আবদেল-আজিজ আল-রান্টিসি: গাজায় একটি গাড়িতে ইজরায়েলি হেলিকপ্টার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ৷ হামাস নেতা আবদেল-আজিজ আল-রান্টিসিকে 17 এপ্রিল, 2004-এ হত্যা করা হয়। তার দুই দেহরক্ষীও নিহত হয়। হামাস নেতৃত্ব এরপরই আত্মগোপন করে ৷ এমনকী রান্টিসির উত্তরসূরির পরিচয়ও গোপন রাখা হয়। হামাস নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তার হত্যাকাণ্ড ঘটে ৷ আহমেদ ইয়াসিনের পরই দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি ৷

আদনান আল-ঘৌল: ইজরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের অন্যতম বোমারু নিহত হয় ৷ 2004 সালের 21 অক্টোবর গাজায় হত্যা করা হয় তাকে। আদনান ঘৌল হামাসের সেনাবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে পরিচিত ছিল ৷

ইমাদ মুগনিয়েহ (2008): 12 ফেব্রুয়ারি, 2008 ইমাদ মুগনিয়াহ সম্ভবত মোসাদ এবং ইজরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ছিলেন গত কয়েক দশক ধরে। বড় সন্ত্রাসী হামলারও পরিকল্পনা করেছিলেন ৷ বিশেষ করে গাড়িতে বোমা হামলা ৷ হিজবুল্লার একজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডারও ছিলেন ৷ একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয় ৷ 2008 সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল ৷

নিজার রায়ান (2009): হামাসের সবচেয়ে কট্টরপন্থী নেতা হিসাবে বিবেচিত একজন ধর্মগুরু ৷ ইজরায়েলে নতুন করে আত্মঘাতী বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন ৷ জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলায় তার স্ত্রী ও সাত সন্তানও নিহত হয় 1 জানুয়ারি, 2009।

মাহমুদ আল-মাবুহের হত্যা (2010): 2010 সালের জানুয়ারিতে, হামাস সামরিক কমান্ডার মাহমুদ আল মাভুহকে দুবাইয়ের একটি হোটেলের ঘরে হত্যা করা হয় ৷

মহম্মাদ আল-জাওয়ারি (2016): 15 ডিসেম্বর, 2016 তারিখে, মহম্মদ আল-জাওয়ারিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল ৷ তিউনিসিয়ার স্ফ্যাক্সে তার বাসভবনে বুলেটের বৃষ্টি হয়। জাওয়ারী ছিলেন একজন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যিনি হামাসের জন্য ড্রোন তৈরি করেছিলেন এবং সম্ভবত হিজবুল্লার জন্যও।

ফাদি মহম্মাদ আল-বাতশ (2018): এপ্রিল 22, 2018 -ফাদি মহম্মদ আল-বাতশ কুয়ালালামপুরের একটি মসজিদে যাচ্ছিলেন ৷ সেই সময়ই মোটরবাইকে করে আততায়ী তাকে গুলি করে ৷ বাতশকে হামাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনিয়র হিসাবে মনে করা হয় ৷ ড্রোন এবং রকেট উভয় ডিজাইনের বিশেষজ্ঞ।

মোহসেন ফখরিজাদেহ (2020): নভেম্বর 27, 2020 বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে রাস্তার ধারে হত্যা করা হয়েছিল ৷ তেহরানের প্রায় 40 মাইল পূর্বে এই হামলা চালানো হয়। ইজরায়েলি গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ করে আসছিল ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জনক ছিলেন ফাখরিজাদেহ।

সালেহ আল-আরৌরি (2024): বেইরুটের দক্ষিণে একটি ইজরালি ড্রোন হামলায় 2 জানুয়ারি, 2024-এ ডেপুটি হামাস প্রধান সালেহ আল-আরৌরিকে হত্যা করে। আরৌরি হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

ইসমাইল হানিয়াহ (2024): হামাস প্রধান হানিয়াহকে প্রথম দিকে হত্যা করা হয়েছিল ইরানে ৷ প্যালেস্তাইন জঙ্গি গোষ্ঠী একথা জানিয়েছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ডস হানিয়েহের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি।

হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মাদ দেইফ (2024): ইজরায়েলি সেনাবাহিনী 2024 সালের অগস্টে ঘোষণা করেছিল, মোহাম্মদ দেইফ, জুলাই 2024 সালে গাজায় একটি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।

হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার (ডিভাইসের বিস্ফোরণ পেজার এবং ওয়াকি-টকি) : ইজরায়েল পেজার এবং ওয়াকি বিস্ফোরণের মাধ্যমে হাইব্রিড যুদ্ধ করে আবারও একবার বিশ্বকে চমকে দিয়েছে ৷ বিস্ফোরণের জন্য লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী ইজরাইলকেই দায়ী করেছে। লেবাননের মতে 2,931 জন আহত হয়েছে।

হাসান নাসরাল্লাহ (2024): ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, হাসান নাসরাল্লাহ, লেবাননের বেইরুটে বিমান হামলায় নিহত হয়েছে। হিজবুল্লার সেক্রেটারি জেনারেল ছিল নাসরাল্লাহ ৷ একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিল্ডিংয়ে হামলা চালানো হয় ৷ অন্তত ছয় জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন ৷

হামাস এবং হিজবুল্লা প্রধানের ইজরায়েলি হত্যার ইতিহাস-

16 ফেব্রুয়ারি 1992: আব্বাস আল-মুসাভি হিজবুল্লা মহাসচিব ছিলেন ৷ ইজরায়েলের আইডিএফ হেলিকপ্টার তার কনভয়ে আক্রমণ করলে আব্বাস আল-মুসাভি নিহত হন ৷ দক্ষিণ লেবাননে ভ্রমণের সময় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। হামলায় মুসাভির সঙ্গে তার স্ত্রী ও ছেলে-সহ আরও ছয়জন নিহত হন।

22 মার্চ 2004: আহমেদ ইয়াসিন ছিলেন হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা ৷ 22 মার্চ শেখ আহমেদের একটি হেলিকপ্টারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় ৷

তিনি তখন গাজা শহরের একটি মসজিদ থেকে বেরোচ্ছিলেন ৷

12 মার্চ 2008: ইমাদ মুগনিয়েহ হিজবুল্লার তৎকালীন সামরিক প্রধান ছিলেন ৷ ইমাদ মুগনিয়াহ 2008 সালে দামেস্কে একটি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন ৷ অপারেশনটি মোসাদ এবং সিআইএ দ্বারা পরিকল্পিত ছিল বলে দেবি ৷

31 জুলাই 2024: ইসমাইল হানিয়াহ হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ছিলেন ৷ ওইদিন ভোরে ইরানে হত্যা করা হয় তাঁকে ৷ জঙ্গি গোষ্ঠী এবং ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড হানিয়েহের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ৷ তিনি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ৷

27 সেপ্টেম্বর 2024: ইজরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলায় হিজবুল্লা নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন ৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় বেইরুটে এই হামলা চালানো হয়। লেবানিজ গ্রুপের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.