দুবাই, 20 মে: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, যাঁকে দেশের সর্বোচ্চ স্তরের 'কট্টরপন্থী অভিভাবক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ ৷ ইরানের ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত তাঁর নাম ৷ 1988 সালে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ডের কার্যকর করার দায়িত্বে ছিলেন ইরানের এই কট্টরপন্থী নেতা ৷ ইউরেনিয়ামে সমৃদ্ধ ইরানকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করে তোলার পিছনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ইব্রাহিম রাইসির ৷ রবিবার এক ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রয়াত হলেন ইরানের সেই 'কট্টরপন্থী অভিভাবক' ৷ তাঁরই সঙ্গে ছিলেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদোল্লাহিয়ান ৷ তিনিও এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৷
রবিবার উত্তর-পশ্চিম ইরানে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের বিদেশমন্ত্রী এবং অন্যান্য আধিকারিক-সহ রাইসির আকস্মিক মৃত্যু ইরানের জন্য একটা বড় ধাক্কা ! কারণ, সে দেশে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ ও বৃহত্তর বিশ্বের সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে জটিল অবস্থায় রয়েছে ৷ প্রেসিডেন্ট এবং বিদেশমন্ত্রীর মৃত্যু বর্তমান সরকারকে বিদেশনীতির ক্ষেত্রে আরও বিপাকে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই ৷
উল্লেখ্য, রাইসির প্রথম পরিচয় তিনি একজন ধর্মগুরু ৷ একবার রাষ্ট্রসংঘে ভাষণ দিতে গিয়ে ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনকে চুম্বন করেছিলেন এবং বিশ্বকে সম্বোধন করার সময় একজন রাষ্ট্রনেতার বদলে, একজন ধর্ম প্রচারকের ভূমিকা পালন করেছিলেন ৷ এই ঘটনায় বিশ্বস্তরে তাঁর যথেষ্ট সমালোচনাও হয়েছিল ৷ ইব্রাহিম রাইসি 2017 সালে তুলনামূলকভাবে মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত হাসান রুহানির কাছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাস্ত হয়েছিলেন ৷ চারবছর পর নির্বাচনে জেতার জন্য সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সাহায্যে নিয়েছিলেন ৷ খামেনির পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী প্রার্থীদের হারিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি ৷
ইব্রাহিম রাইসির আগমনের পথ প্রশস্ত হয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফাভাবে পারমাণবিক চুক্তি প্রত্যাহার করার পরে ৷ আমেরিকার সঙ্গে রুহানির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি ঘটিয়েছিল ৷ আর সেখান থেকেই ইব্রাহিম রাইসির প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয় ৷
কিন্তু, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইব্রাহিম রাইসি পারমাণবিক চুক্তিতে পুনরায় সামিল হতে চেয়েছিলেন ৷ তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র পরিদর্শনের কথা বলেছিল ৷ কিন্তু, রাইসির নতুন প্রশাসন পরিদর্শনে আপত্তি জানায় ৷ যদিও, এর পিছনে কারণ হিসেবে বলা হয়, ইরানের প্রতিপক্ষ ইজরায়েল তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রে গোপনে হামলার পরিকল্পনা করছিল ৷ তাই নিজেদের পারমাণবিক কেন্দ্রকে নিরাপদে রাখতে রাইসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিদর্শনে আপত্তি জানিয়েছিলেন ৷
উল্লেখ্য, কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রাইসির সময়েই 2022 সালে হিজাব বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন ইরানের মহিলারা ৷ বিশেষত, মাহসা আমিনি নামে এক যুবতীকে হিজাব না-পরার জন্য গ্রেফতার করা এবং বন্দি দশায় তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক গণআন্দোলন শুরু হয় ইরান জুড়ে ৷ মহিলারা হিজাব ছাড়া রাস্তায় নেমে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন ইব্রাহিম রাইসির বিরুদ্ধে ৷ রাইসি এখন না থাকলেও ওই আন্দোলনের আঁচ এখনও গনগনে !
আরও পড়ুন: