জেরুজালেম, 14 এপ্রিল: বদলা নিতে ইজরায়েলে উদ্দেশে শ'য়ে শ'য়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান ৷ ইজরায়েলের ঠিক কোথায় এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি আছড়ে পড়েছে, তা জানা নেই ৷ স্থানীয় সময় রবিবার ভোরে ইরান অতর্কিতে ইজরায়েলে আক্রমণ শানায় ৷ কয়েকশো ড্রোন, ব্য়ালিস্টিক মিসাইল এবং ক্রুজ মিসাইল ছোড়ে ইরান ৷ এদিন ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস একটি বিবৃতি জারি করে এই হামলার দায় স্বীকার করে নেয় ৷ তবে এই যুদ্ধ থেকে আমেরিকাকে দূরে থাকার সতর্কবাণীও দিয়েছে ইরান ৷
এক বিবৃতিতে ইরান জানিয়েছে, "আমেরিকার জঙ্গি সরকারকে সতর্ক করা হচ্ছে, তাদের কোনওরকম সাহায্য বা অংশগ্রহণের ফল যদি ইরানের স্বার্থবিরোধী হয়, তাহলে ইরানের সামরিক বাহিনীও তার জবাব দেবে ৷ এর জন্য কিন্তু আফশোস করতে হবে ৷" ছ'মাস আগে ইজরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধে যে আশঙ্কা করেছিল দুনিয়া, তাই যেন এবার সত্যি হতে চলেছে ৷ দুই দেশের সংঘাত এবার মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷
ইরান-ইজরায়েলের শত্রুতার সম্পর্ক কয়েক দশকের ৷ 1979 সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর এই প্রথম ইরান সরাসরি ইজরায়েলের উপর এমন সামরিক হামলা চালাল ৷ এই আকস্মিক হামলার তীব্র নিন্দা করেছে রাষ্ট্রসংঘ এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলি ৷ ফ্রান্স জানিয়েছে, ইরানের এই আক্রমণের ফলে সামরিক যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে গেল ৷ ব্রিটেন এই হামলাকে বেপরোয়া বলে উল্লেখ করেছে এবং জার্মানি ইরান-সহ তার সহযোগীদের এখুনি হামলা বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ৷
গত বছরের অক্টোবরে পবিত্র সাবাথের ভোরে হামাস আচমকা ইজরায়েলে হামলা চালায় ৷ তাতে 1,200 জনের মৃত্যু হয় ৷ বহু নাগরিককে অপহরণ করে বন্দি বানায় হামাস ও ইরান সমর্থিত ইসলামিক জিহাদ ৷ এরপরই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু গাজায় পালটা যুদ্ধ ঘোষণা করেন ৷ এরপর থেকেই ইরানের সঙ্গে ইজরায়েলের তিক্ত সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে ৷ গাজার স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইজরায়েলের হামলায় 33 হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৷ জল, খাবার, জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে ৷ খরা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রাষ্ট্রসংঘ ৷
এই যুদ্ধের পরপরই ইরানের আরেকটি জঙ্গিগোষ্ঠী হেজবোল্লাও ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে অংশ নেয় ৷ ইজরায়েলের উত্তর দিকের সীমান্ত থেকে তারা আক্রমণ চালাতে থাকে ৷ এর পাশাপাশি ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেন থেকে ইরানের মদতপুষ্ট গোষ্ঠীগুলি ইজরায়েলকে নিশানা করে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে থাকে ৷ সম্প্রতি 1 এপ্রিল আকাশপথে হামলায় সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলার ভবনে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয় ৷ তারা ইরানের জেনারেল ছিলেন ৷ সেদিনই ইরান এর প্রতিশোধ নেবে বলে ঠিক করে রেখেছিল ৷ তবে এই ঘটনায় ইজরায়েল কোনও মন্তব্য করেনি ৷
বিগত কয়েকদিন ধরেই ইরানের সুপ্রিম আয়াতোল্লাহ আলি খামিনি সিরিয়ায় হামলার পালটা জবাব দেবেন বলে ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন ৷ লেবাননের নিজস্ব সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ইরানের ড্রোন হামলার পর ইজরায়েলও লেবাননের দক্ষিণে বিভিন্ন জায়গায় আকাশপথে হামলা চালাতে শুরু করেছে ৷ লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী হেজবোল্লাহ জানিয়েছে, তারাও ইজরায়েলের গোলান হাইটসে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে পালটা রকেট ছুড়েছে ৷
তবে ইরান থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোনগুলির কিছু ইজরায়েল তাদের প্রযুক্তির মাধ্য়মে রুখতে পেরেছে ৷ জর্ডনের রাজধানী আম্মানের আকাশে তা দেখা গিয়েছে ৷ লেবাননের রাজধানী বেইরুটে এবং দেশের অন্য বেশ কয়েক জায়গাতে বাসিন্দারা জানিয়েছে, তারা আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দেখেছে ৷ বিস্ফোরণের শব্দও শুনেছে ৷ অন্যদিকে সিরিয়ার অবর্জারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সিরিয়াও আকাশপথে ইজরায়েলের এই ইরানের মিসাইল রুখে দেওয়ার চেষ্টাকে ব্যর্থ করতে গুলি চালিয়েছে ৷
ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, "ইরান কয়েকশো ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল, ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছে ৷" তবে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই রুখে দিয়েছে তারা ৷ তবে দক্ষিণ ইজরায়েলের বেদুইন আরব শহরে একটি 10 বছরের নাবালিকা মিসাইল হামলায় গুরুতর জখম হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: