ইসলামাবাদ, 10 ফেব্রুয়ারি: পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আদতে কারচুপির প্রহসন হবে বলে প্রত্যাশিত ছিল রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের ৷ তবে ভোটের ফলাফল অবাক করার মতোই ৷ বিশেষ করে যে অংশের ধারনা ছিল, তারা নিজেদের সুবিধার জন্য গণতন্ত্রকে পরিচালনা করতে পারে তাদের অবাক হতেই হয়েছে ৷ তাদের সাহসী প্রত্যাখ্যান করেছে সে দেশের ভোটাররা ৷ ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই অধিক সমর্থন পেয়েছেন।
পিটিআই-এর নেতাকে জেলে বন্দি করা হয়। দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি তাদের প্রতীক পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়। তাছাড়া ইমরান খানকে একাধিক মামলায় 20 বছরের জন্য জেলে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে সেনা-নেতৃত্বাধীন সংস্থা। তাদের এই সমস্ত কঠোর প্রচেষ্টা এক কথায় বানচাল হয়েছে ৷ কোনও কিছুই আদতে কাজে আসেনি।
পাকিস্তানের দৈনিক 'দ্য ডন' শনিবারের সম্পাদকীয়তে সেনাবাহিনীকে নিন্দা করে স্পষ্ট ভাষায় লেখে, "শক্তিশালী মহলকে বুঝতে হবে অসামরিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ আর ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।" সেনাবাহিনী এই ফলাফলের অপ্রত্যাশিত ধাক্কায় হতবাক হতে পারে ৷ তবে এত সহজে তারাও হাল ছাড়বে না ৷ আপাতদৃষ্টিতে পিটিআই-এর নেতৃত্বাধীন নির্দলদের ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে যা যা করা দরকার সবই করবে তারা। প্রতিবেদনটি লেখার সময়, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা 92টি আসন জিতেছে, পাকিস্তান মুসলিম লিগের 71টির চেয়ে অনেক বেশি।
নওয়াজ শরিফের পিএমএল (এন) এবং পাকিস্তানের পিপলস পার্টি (পিপিপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করেছে ৷ বৃহত্তম দল হিসেবে সরকার গঠনের দাবিও করেছে। এছাড়াও জয়ী নির্দল প্রার্থীদের মোটা টাকা দিয়ে ঘোড়া কেনা-বেচার খবরও রয়েছে। যেহেতু তাঁরা নির্দল হিসেবে লড়েছিলেন তাই তাঁদের পক্ষশে দুটি দলের মধ্যে একটি - পিএমএল (এন) এবং পিপিপির দ্বারা সহজ বাছাই করা হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানে কথিত কারচুপির ভোটকে নির্দয়ভাবে গ্রহণ করেছে। অতীতে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার নেপথ্যে তাঁর দল পিটিআই বিশ্বের বিভিন্ন বড় দেশের ষড়যন্ত্র দেখেছিল। তবে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য মনে করছে এই ভোটে অনিয়ম হয়েছে। আর তা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার বলেও জানিয়েছে এই সমস্ত দেশগুলি। এই তথ্য আরও একবার প্রমাণ করে পাকিস্তানে নির্বাচন ঠিক কতটা ভয়ঙ্করভাবে পরিচালিত হয়েছিল।
ভোটের রেজাল্ট প্রকাশে দেরি হওয়া নিয়েও জলঘোলা হয়। বিলম্বের কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া যুক্তি মানতে চাননি পিটিআইয়ের সমর্থকরা। তাঁরা অন্যরকম দাবি করেন। তাঁরা দাবি করেন, যে গণনা এবং ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব করা হয়েছিল নওয়াজ শরীফের পিএমএল(এন) এবং পিপিপিকে অযাচিত সুবিধা দেওয়ার জন্য। যদি সেনাবাহিনীর কোনও হস্তক্ষেপ না থাকত তবে এই দুটি দলের আরও অনেক প্রার্থীই হেরে যেতেন। আর অন্যায় সুবিধা দেওয়ার ফলে এমন কিছু ফলাফল প্রকাশ্যে এসেছে যার ব্যাখ্যা যুক্তি দিয়ে করা যায় না। একটি আসনে দেখা গিয়েছে, প্রদত্ত ভোট মোট ভোটের চেয়ে বেশি! এই ধরনের চ্যুতি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় চর্চার অন্ত নেই!
আরও পড়ুন
সেনা-সম্পত্তিতে হামলার 12 মামলায় ইমরান খানকে জামিন পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আদালতের
কোনও জোটে যাবে না ইমরানের দল, সরকার গড়তে সঙ্গীর সন্ধানে নওয়াজরা
জেলে থেকেও পাকিস্তানের কুর্সির দৌড়ে এগিয়ে ইমরান, আত্মবিশ্বাসী নওয়াজ