ঢাকা, 12 জানুয়ারি: আন্তর্জাতিক সীমান্তে উত্তেজনার আবহে ভারতের হাই-কমিশনারকে ডেকে পাঠাল বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বতী সরকার ঢাকায় কর্মরত ভারতীয় হাই-কমিশনার প্রণয় বর্মাকে রবিবার দুপুরে ডেকে পাঠিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব জসিম উদ্দিন প্রায় 45 মিনিট কথা বলেন বলে জানা গিয়েছে। সরকারিভাবে বৈঠক সম্পর্কে বাংলাদেশ এখনও কোনও কথা জানায়নি।
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বৈঠকে দু'দেশর সীমান্তের কমপক্ষে পাঁচটি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া লাগানো নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের আধিকারিকরা। তাঁদের মতে, এভাবে বেড়া তৈরি করে আন্তর্জাতিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে ভারত।
জানা গিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর 3টে নাগাদ বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন ভারতের হাইকমিশনার। প্রায় 45 মিনিট আলোচনা চলার পর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন । তিনি বলেন, "আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বোঝাপড়া আছে। বিএসএফ ও বিজিবি-র মধ্যে এই প্রসঙ্গে যোগাযোগও আছে। আমি আশা করি দু-পক্ষের মধ্যে থাকা বোঝাপড়াকে কাজে লাগিয়ে আমরা একসঙ্গে সীমান্তে হওয়া অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব।"
কাঁটাতারের বেড়া লাগানোকে কেন্দ্র করে দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরে । এদিন সকালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উপদেষ্টা তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তা জাহঙ্গির আলম চৌধুরী বলেন, "সীমান্তে বেড়া লাগানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবাদ করেছে। আর তাই ভারত কাঁটাতারের বেড়া লাগানো থেকে সরে এসেছে ।" তাঁর দাবি, এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন সীমান্তের আশপাশে থাকা বাসিন্দারাও।
সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, সীমান্তে এই উত্তেজনার মূল কারণ অন্য। আগের সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি এমন চুক্তি হয়েছিল যেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। তবু বিজিবি এবং সাধারণ মানুষের প্রতিবাদে সীমান্তে বেড়া লাগানোর কাজ ভরতে বন্ধ করতে হয়েছে ।
দু'দেশের সীমান্তে কী হবে তা নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে চারটি মৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তার মধ্যে 1975 সালে হওয়া একটি চুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে দু'দেশের মধ্যে থাকা জিরো লাইনের 150 মিটারের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তপোক্ত করতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না । অন্য একটি চুক্তিতে বলা হয়েছে, সীমান্তে এই ধরনের কোনও উদ্যোগ কোনও দেশ একা একা নিতে পারবে না । অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করার পরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ।
কিন্তু ভারত সেই চুক্তি মানছে না দাবি করে উপদেষ্টা বলেন ভারত ইতিমধ্যেই 3,271 কিলোমিটার জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া বসিয়ে দিয়েছে। মাত্র 885 কিলোমিটার জায়গা এখনও বেড়া বসানো হয়নি। অন্য একটি প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, হাসিনার ঠিকঠাক শর্ত মেনে চুক্তি করেনি বলে 2010 থেকে 2023 সালের মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যো আন্তর্জাতিক সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছে । এমন দাবি প্রকাশ্যে আসার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় কর্মরত ভারতের হাই-কমিশনারকে ডেকে পাঠানো হল ।