ঢাকা, 21 জুলাই: আন্দোলন দমনে আরও কড়া হল শেখ হাসিনা সরকার ৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় কার্ফু জারির পর বাংলাদেশে এবার জারি হল ‘শুট অন সাইট’ ৷ অর্থাৎ, রাস্তায় আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হল সেনাকে ৷ চাকরিতে সংরক্ষণ পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন প্রায় 114 জন ৷ ক্রমশ সরকারের আয়ত্বের বাইরে যাচ্ছে পরিস্থিতি ৷ তা সামাল দিতেই এই পদক্ষেপ ৷
সংবাদসংস্থা এপি (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) জানিয়েছে, শনিবার কিছু সময়ের জন্য কার্ফু শিখিল করেছিল সরকার ৷ বেলা 12টা থেকে দুপুর 2টো পর্যন্ত যাতে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে ৷ তারপরেই আরও কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার ৷ আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে রবিবার সকাল 10টা পর্যন্ত কার্ফু জারি করা হয়েছে ৷ যদিও ‘চরম অবস্থায়’ সেনাকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার ৷
এই আবহে রবি ও সোমবার দেশে সাধারণ ছুটির ঘোষণা করে দিয়েছে সরকার ৷ প্রাথমিক চাহিদার সঙ্গে যুক্ত পরিষেবা বাদ দিয়ে বাকি বন্ধ রাখা হয়েছে ৷ বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংবাদপত্র প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা ৷ পাশাপাশি রেল চলাচলও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ আন্দোলনকারীরা যাতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে জমায়েত করতে না-পারে, সে কারণেই এই ব্যবস্থা ৷ হাসিনা সরকার পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে ৷
বিভিন্ন সংবাদসংস্থার রিপোর্ট জানাচ্ছে, শনিবার কার্ফু থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ মৃত্যু হয়েছে আরও সাতজনের ৷ ফলে এখনও পর্যন্ত আন্দোলনকারী-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা 114 ছুঁয়েছে ৷ প্রথম আলো জানাচ্ছে, সারাদেশে 300 প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে ৷ ঢাকাতেই রয়েছে 75 প্লাটুন বিজিবি ৷ প্রসঙ্গত, একটি প্লাটুনে 30 জন জওয়ান রয়েছে ৷
সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে প্রতিবাদ চলছে ৷ গত সোমবার থেকে তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ৷ বিক্ষোভের জেরে কার্যত গোটা বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়েছে ৷ সে দেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা বিএসএস জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজধানী-সহ দেশজুড়ে আধা-সামরিক বর্ডার গার্ড নামিয়েছে । পাশাপাশি পুলিশ এবং অ্যান্টি ক্রাইম র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে ৷ শুক্রবার ঢাকা পুলিশ জানিয়েছিল যে, তারা রাজধানীতে সমস্ত জমায়েত ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করছে ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় চার লক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য প্রায় 3 হাজার সরকারি চাকরি খোলা হয় । সরকারি চাকরির 56 শতাংশ বর্তমান কোটা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত । সর্বাধিক 30 শতাংশ 1971 সালের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য, 10 শতাংশ অনগ্রসর প্রশাসনিক জেলাগুলির জন্য, 10 শতাংশ মহিলাদের জন্য, 5 শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য এবং এক শতাংশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত । আন্দোলনকারীদের দাবি, এই সংরক্ষণের ফলে মেধা ছাত্রছাত্রীরা চাকরিতে যথেষ্ঠ সুযোগ পান না ৷